পুকুরে কৈ মাছের রেনু চাষের পদ্ধতি আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় পেশা। মাছ চাষ করে অনেকেই তাদের বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বর্তমান সময়ে পুকুরে মাছ চাষ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই পুকুরে কৈ মাছের চাষ করে থাকেন। আসুন জেনে নেই পুকুরে কৈ মাছের রেনু চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে-
পুকুরে কৈ মাছের রেনু চাষের পদ্ধতিঃ
নার্সারি পুকুরের সাইজঃ ১৫ থেকে ৩০ শতক, গভীরতাঃ ৪-৫ ফুট।
পুকুুর প্রস্ততিঃ
প্রথমে পুকুুর শুকিয়ে অল্প কাঁদা মাটি তুলে ফেলতে হবে, পুকুুর শুকানো সম্ভব না হলে বার বার জ্বাল টেনে এবং রোটেনন প্রয়োগ করে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ সহ সব ধরনের মাছ নিধন করতে হবে।
তারপর শতকে ১ কেজি করে চুন ৩ কেজি করে জৈব সার প্রয়োগ করে একটু হালকা মাটি কোপায়ে দিয়ে পুকুরে পানি প্রবেশ করাবেন। পানি ঢোকানোর তিন দিন পর শতকে ১০ মিলি করে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করবেন, যাতে করে পানিতে কোন ধরনের পোঁকা থাকলে সেগুলো যেন মারা যায়। সুমিথিয়ন দেওয়ার ৫ দিন পর পুকুরে ৪-৫ দিন বয়সের রেনু প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম করে মজুদ করতে পারবেন।
আর যদি পানি শুকানো সম্ভব না হয়, তাহলে রোটেনন দিয়ে সমস্ত মাছ নিধন করার পর শতকে ৪ ফুট পানি গভীরতায় সুমিথিয়ন ১০ মিলি টিমসেন ১ গ্রাম প্রয়োগ করে তিন দিন অপেক্ষা করুন, এরপর শতকে ১ কেজি চুন ২০০ গ্রাম লবন ১.৫ কেজি জৈবসার প্রয়োগ করে আরো ৫ দিন অপেক্ষা করুন।
তারপর প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম করে রেনু মজুদ করুন।
খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
১। প্রথম দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত তিনটি সিদ্ধ ডিমের কুসুম একবারে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে দিবেন দিনে তিন বার।
২। ৬ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত তিনটি ডিমের কুসুম সাথে ৫০ গ্রাম আটা মিশিয়ে খাওয়াবেন দিনে তিন বার।
৩। ১১ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ৩০০ গ্রাম করে নার্সারি ফিড খাওয়াবেন দিনে তিন বার।
৪। ১৬ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত ৪০০ গ্রাম করে নার্সারি ফিড খাওয়াবেন দিনে তিন বার।
৫। ২১ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত ৬০০ গ্রাম করে নার্সারি ফিড খাওয়াবেন দিনে তিন বার।
৬। ২৬ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত ৭০০ গ্রাম করে নার্সারি ফিড খাওয়াবেন দিনে তিন বার।
এখানে এক কেজি রেনুর একবেলা খাবারের হিসাব দেওয়া হয়েছে।
ভাল জাতের এবং ভাল মানের রেনু সংগ্রহ করে এভাবে যত্ন নিয়ে চাষ করতে পারলে প্রতিকেজি রেনু থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার পর্যন্ত পোনা পাওয়া সম্ভব।
সতর্কতাঃ
পুকুরে রেনু থাকা অবস্হায় কোন ধরনের পোঁকা দমনের ঔষধ ব্যবহার করা যাবেনা, পুকুুর তৈরীর সময় যে চুন দিয়েছেন তাতেই যথেষ্ট বেশি প্রয়োজন না হলে আর চুন দেওয়ার দরকার নেই, দিলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, পিএইস এ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, পুকুরে সেঁচ বা পানিতে হালকা স্রোত তৈরী করতে পারলে ভাল। অভিজ্ঞ চাষী না হলে যেকোন ধরনের রেনুর চাষ না করাই ভাল।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১০ফেব্রু২০২০