বাংলাদেশে গরুর মাংস খুব জনপ্রিয় এবং চাহিদাও প্রচুর। তাছাড়া মুসলমাদের ধমীয় উৎসব কুরবানীর সময় অনেক গরু জবাই করা হয়। সুতরাং “ গরু মোটাতাজাকরণ” পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি লাভজনক ব্যবসা।
গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় ধারাবহিকভাবে যে সকল বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে হব তা নিম্নরুপ।
পশু নির্বাচন
মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীর জন্য গরু ক্রয়ের সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন।
বয়স নির্ধারণ
মোটতাজা করার জন্য সাধারনত ২ থেকে ৫ বছরের গরু ক্রয় করা যেতে পারে, তবে ৩ বছরের গরু হলে ভাল।
শারীরিক গঠন
মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রেখে গরু নির্বাচন করা জরুরী।
• দেহ হবে বর্গাকার ।
• গায়ের চামড়া হবে ঢিলা ( দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)।
• শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।
• পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত।
• পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো ।
• গরু অপুষ্ট ও দূর্বল কিন্তু রোগা নয়।
কৃমিমুক্তকরণ
পশু ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। তবে প্রতি
৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট
ব্যবহার করা যেতে পারে।
টিকা প্রদান
পূর্ব থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।
ঘর তৈরী ও আবসন ব্যবস্থাপনা
আমদের দেশের অধিকাংশ খামারী ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারনত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়েনা। তবে
যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিস্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরী করতে হবে।
পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরু মোটতাজাকরণে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রেশন তৈরী করা হয়।
• আঁশ জাতীয়: শুধু খড়, ইউ এম, সবুজ ঘাস ইত্যাদি । তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারীদেরকে শুধু খড়ে পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়াতে হবে।
• দানারার: খৈল, ভূষি, চাষের কুড়া , খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবন ইত্যাদি।
খাওয়ানের পরিমাণ: গরুকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমান খেতে পারে সে পরিমান ইউ এম এস সরবারাহ করতে হব।
• কোন খামারী সবুজ ঘাস খাওয়াতে চাইলে প্রতি ১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের সাথে ৩কেজি চিটাগুড়ে মিশিয়ে তা গরুতে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা ঘাসেও গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে সরবরাহ করতে হবে।
দানাদর মিশ্রণ: খামারীদের সবিধার জন্য নীচের সারনীতে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরীর বিভিন্ন
উপাদান পরিমান সহ উল্লেখ করা হল। নিম্নের ছক অনুযায়ী অথবা প্রয়োজন
অনুযায়ী খামারীগণ বিভিন্ন পরিমান মিশ্রণ তৈরী করে নিতে পারবেন।
খাওয়ানের পরিমাণ: গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পাশের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮-১ ভাগ পরিমাণ সরবরাহ করলেই চলবে।
•খাওয়ানোর সময়: দানাদার মিশ্রণটি এবারের না খাইয়ে ভাগে ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে।
•পানি: গরুকে পর্যান্ত পরিমানে পরিস্কার খামার পানি সরবরাহ করতে হবে।
দৈহিক ওজন নির্ণয়: মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ,ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে।
গরুর ওজন নির্নয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ছবির নির্দেশিকা মোতাবেক ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও
বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে। এই মাপ নীচের সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১ফেব্রু২০২০