আরএএস প্রযুক্তিতে মাছ চাষে সফল বরিশালের মহিবুল্লাহ

429

news-14-600x337
ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান মহিবুল্লাহ। সে সুবাদে বিএ পাসের পর বাবার ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি। নিজে পৃথক ব্যবসা শুরু করলেও বারবার ব্যর্থ হন। একের পর এক লোকসানে ভেঙে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে ইউটিউবে ‘রি সার্কুলেশন অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেমে’ (রাস) মাছ চাষ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন তিনি। পরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক বন্ধুর সহায়তায় ২০১৮ সালে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে দেশী জাতের কৈ, শিং ও তেলাপিয়া মাছ চাষ হয়। এ থেকে মাসে গড় আয় হয় লাখ টাকা।

বরিশাল নগরীসংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পূর্ব তীরে চানপুরা ইউনিয়নের অবস্থান। একদিকে খরস্রোতা কীর্তনখোলা, আরেক দিকে উত্তাল কালাবদর নদের মাঝে এ ইউনিয়নের অবস্থান। এ ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে মহিবুল্লাহ মাত্র ৭৩ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘এমএম এগ্রো প্রজেক্ট’। মূলত আধুনিক পদ্ধতিতে এটি দেশী মাছ চাষের খামার হলেও সেখানে গরু, ভেড়া, কবুতর, হাঁস-মুরগি লালন-পালন করেন তিনি।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ছয়টি পাকা হাউজ স্থাপন করেছেন। এসব হাউজে দেশী জাতের কৈ, শিং ও তেলাপিয়া মাছ চাষ করেন। মহিবুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালে তিনি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চালু করেন। এখন প্রতি মাসে তার আয় লাখ টাকার উপরে। দেশী জাতের পোনা সংগ্রহ করে হাউজের মধ্যে রেখে তিন মাস পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী করে বাজারজাত করেন তিনি।

মহিবুল্লাহ বলেন, এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রধান কাজ হচ্ছে বারবার হাউজের পানি পরিবর্তন করা। এতে পানির যথাযথ মান বজায় থাকে। ফলে মাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, স্বাদও অক্ষুণ্ন থাকে। প্রতি তিন মাস পর ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে দেশী কৈ-শিং পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা ওই মাছ ভোক্তাদের কাছে প্রতি কেজি ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রি করেন।

গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সাড়ে ৭ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন মহিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ওই মাছ তিন মাস লালন-পালন করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে লাভ হয়েছে ৩ লাখ। বর্তমানে খামারে ৬০ হাজার দেশী জাতের কৈ এবং পাঁচ হাজার শিং মাছ আছে। এসব মাছ আগামী মার্চে বিক্রি করা হবে।

এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি। কারণ দিনে অন্তত একবার হাউজের পানি পরিবর্তন করতে হয়। এজন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। এখানে পানিরই সব থেকে বেশি সংকট। অনেক দূরে থাকা একটি গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করি। প্রকল্প এলাকায় একটি নলকূপ স্থাপনের জন্য জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে ধরনা দিয়েও কাজ হয়নি।

শুরুর গল্প জানতে চাইলে মহিবুল্লাহ বলেন, প্রথমে ইউটিউবে এ ধরনের মাছের খামার দেখি। পরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মত্স্য গবেষক আমার এক বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করি। ওই বন্ধুই আমাকে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের সব বিষয় শিখিয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মহিবুল্লাহের মত্স্য খামার পরিদর্শন করেন।

এ প্রসঙ্গে মোশারফ হোসেন বলেন, আমার কর্মজীবনে এমন প্রকল্প কখনো দেখিনি। আমার ধারণা বরিশাল বিভাগে এ রকম খামার আর নেই। উপজেলা প্রশাসন থেকে মহিবুল্লাহকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বরিশালের সহকারী মত্স্য কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, বাংলাদেশে রাস পদ্ধতিতে মাছ চাষের খামার তেমন নেই। মহিবুল্লাহর মতো একজন তরুণ এ পদ্ধতিতে মাছের খামার করে একটি সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন। এ খামার ঘিরে এলাকায় আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৭ফেব্রু২০২০