প্রকৃতির অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে উদ্ভিদ। কোনো কোনো উদ্ভিদ যেমন আমাদের উপকারে আসে তেমনি কোনো কোনো উদ্ভিদ আমাদের ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি ক্ষতিকর একটি উদ্ভিদের নাম পার্থেনিয়াম। প্রকৃত অর্থে পার্থেনিয়াম এক ধরনের বিষাক্ত আগাছা, যা মানুষ ও প্রাণীদের নানা ক্ষতি করে।
পার্থেনিয়ামের মূল উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। সেখান থেকে এই বিষাক্ত আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশেসহ বিভিন্ন দেশে। পার্থেনিয়ামের ইংরেজি নাম Perthenium এবং বৈজ্ঞানিক নাম Parthenium Hysterophorus. বাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে, বন-জঙ্গলে বা ফসলের ক্ষেতে পার্থেনিয়াম জন্ম ও বিস্তার লাভ করে। এই বিষাক্ত উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পার্থেনিয়াম শাখা বিস্তারের মাধ্যমে গম্বুজ আকৃতির অথবা ঝোপ আকারের হয়। পাতা শাখাযুক্ত ত্রিভুজের মতো। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকার কাদামাটি, পথচারীদের জুতা-স্যান্ডেলের তলার কাদামাটি, সেচের পানি ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।
পার্থেনিয়ামে রয়েছে Sesquiterpene Lactones নামক টক্সিন বা বিষ, যা গঠিত হয় Caffeic acid, Vanillic acid, Ansic acid, P-anisic acid, Chlorogenic acid, Ges Parahydroxy benzoic acid দ্বারা। এই বিষ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়াও এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ও ফসল উভয়েরই ক্ষতি করে। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে। খারাপ খবর হল ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছে।
পার্থেনিয়াম ক্ষতিকর হলেও এর রয়েছে কিছু ঔষধিগুণ। বর্তমানে এই আগাছা থেকে মানুষের আমাশয়, প্রচণ্ড জ্বর, বদহজম, টিউমার, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল রোগের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০ফেব্রু২০২০