বকুল হাসান খান
নারায়নগঞ্জে সোনারগাঁ উপজেলার সমানদ্দী ইউনিয়নে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প এর আওতায় কৃষক স্কুলের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১মার্চ রবিবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলার সমানদ্দী ইউনিয়নের নাজিরপুর এলাকায় দিবসটি পালন করা হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক- কৃষিবিদ বিভূতি ভূষণ সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালক- কৃষিবিদ আহসানুল হক চৌধুরী, সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসার- কৃষিবিদ মনিরা আক্তার, পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং এন্ড ইভ্যুলয়েশন অফিসার- কৃষিবিদ দিল আতিয়া পারভীন ও আইপএম স্পেশালিস্ট- কৃষিবিদ আরিফুর রহমান শাহিন।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নারায়নগঞ্জে উপ- পরিচালক- কৃষিবিদ ইসহাক । এছাড়া আরো উপজেলা সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ,উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার, এবং উপ সহকারী কৃষি অফিসারগন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
অনুষ্ঠানের অতিথিরা আইপিএম স্কুল পরিদর্শন করে, ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী কৃষকদের স্কুলে অর্জিত প্রশিক্ষন শীর্ষক পরিক্ষা নিয়ে সেরা ৩ জনের মাঝে পুরুষ্কার বিতরণ করেন। ১৪ সপ্তাহ ব্যাপী এই স্কুলের প্রত্যেকের মাঝে সনদ প্রদান করা হয়।
বক্তারা বলেন, কৃষকের বাড়ির আঙিনায় চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি। লালন-পালন করা হচ্ছে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি। ফলমূলের গাছ লাগানোর মাধ্যমে জোগান হচ্ছে পুষ্টির। পতিত পুকুর-জলাশয়ে মাছ চাষ করে মিলছে আমিষ। ফসল আবাদে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়ছে ফলন। এতে কৃষক পরিবারের পুষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আসছে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। কৃষক মাঠ স্কুলে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণে তৃণমূলে এমন পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে।পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প এর আইপিএম মাধ্যমে ১৪ সপ্তাহ মেয়াদি কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম শেষে অনেক এলাকার কৃষকরা নিজেরাই আবার গড়ে তুলেছেন আইপিএম। যেখানে কৃষকরা একত্রে বসে আবাদ ও ফসলের সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। নিজেদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্যও নানা মতের মিলন ঘটান। নিজেরা সংগঠিত হতে চেষ্টা করছেন। সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপিত এসব আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুল তৃণমূলের কৃষকদের সচেতন ও সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরো বলেন, আইপিএম এর আওতায় জেলায় প্রতিবছর খরিপ-১ ও রবি মৌসুমে ৩০টি করে ৬০টি কৃষক মাঠ স্কুল স্থাপন করা হয়। এসব মাঠ স্কুলে এলাকার ২৫ জন কৃষক ও ২৫ জন কিষানি নিয়ে ৫০ জনের দল গঠন করা হয়। সপ্তাহে দুই দিন করে ছয় মাসে ৪৬টি সেশনের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানের আলোকে একটি প্রদর্শনী মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কৃষি মডেলের নানা স্টল স্থাপন করে এলাকার কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করা হয়। এভাবে কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম শেষ হলেও ওই এলাকায় একটি আইপিএম’ গঠনের মধ্য দিয়ে কৃষকের বাড়িকে খামারবাড়ি হিসেবে গড়ে তোলার নানা কর্মকাণ্ড সচল রাখার চেষ্টা করা হয়। এসব ক্লাবের সদস্যরা কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে নিজেরা চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটাচ্ছেন, যা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
বসত বাড়িতে অন্তত ১২টি স্থান আছে যেখানে গাছ লাগানো যায়। আর বসতবাড়িতে ফলের বাগান করে আমরা পুষ্টির জোগান পেতে পারি। বাড়ির আঙিনায় রোদ থাকে এমন স্থানে বিষমুক্ত সবজি এবং ছায়াযুক্ত স্থানে আদা-হলুদ আবাদ করা যায়। আইপিএম মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষণে এমন অনেক বিষয় জেনেছি এবং সে অনুযায়ী আবাদ ফসল করে লাভবান হচ্ছি। এই জ্ঞান অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা ক্লাব করেছি। কিভাবে গবাদি পশু লালন-পালন, পরিচর্যা করে অধিক লাভবান হওয়া যায়, রোগমুক্ত রাখা যায়, কোথায় কোন চিকিৎসা মেলে সেসব বিষয় জেনেছি। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় কী, উপকারী পোকা কী, ফসলের কোন রোগের কী চিকিৎসা, কোথায় কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, সে বিষয়গুলো আমরা জেনেছি এই মাঠ স্কুলে। এতে আমাদের খুব লাভ হয়েছে।
এলাকার কৃষকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। বসতবাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি ফসলের আবাদ হচ্ছে, হাজামজা পুকুরে মাছ চাষ এবং পাড়ে সবজির আবাদ হচ্ছে। বাড়ছে কম্পোস্ট সার তৈরি, ক্ষেতে ব্যবহৃত হচ্ছে জৈব সার। ঘরের নারীরাও এখন কথা বলতে শিখেছে। এর সবই সম্ভব হয়েছে আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের শিক্ষায়। আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন ও সংগঠিত করা হয়ে থাকে। যাতে তারা ভবিষ্যতে নিজেরা একত্রিত হয়ে কৃষিবিষয়ক আলাপ-আলোচনা করতে পারে এবং আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। একই সঙ্গে তারা সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে। সে জন্যই পরবর্তী সময়ে ওই সব প্রশিক্ষিত কৃষকদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে আইপিএম ক্লাব গঠন করা হয়ে থাকে। অনেকে আগ্রহী হয়ে মাঠে স্থাপিত ছয়টি কৃষি মডেল প্রদর্শনী স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছে এবং বিভিন্ন বিষয় জানতে চেষ্টা করছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারে কার্যকর নীতির কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুল কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন ঘটাতে অবদান রাখছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৪মার্চ২০