গবাদিপ্রাণি সুস্থ সবল ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পনভাবে পালন করত সঠিক নিয়মে পানি পান করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক সময়েই আমরা বিষয়টাকে হালকাভাবে নেই। আসুন জেনে নেয়া যাক গবাদি প্রাণিকে পানি পানের সঠিক পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয়তা গুলো।
গবাদিপ্রাণিকে পরিমিত পান পানের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা: কার্বোহাইড্রেট (শক্তি), প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদনগুলোর জন্য ডায়েট গুলো সুষম হয় যেন গবাদি প্রাণি কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এরপাশাপাশি গবাদি প্রাণির পানীয় জলের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা পানি গ্রহণের ফলে পশুর কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে। মূলত এই পুষ্টিগুলোর মধ্যে পানি বা জল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গবাদি প্রাণির শরীরের বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বৃদ্ধি বা স্তন্যদানের জন্য এবং ফুসফুস বা ত্বক থেকে বাষ্পীভবনের দ্বারা মূত্র, মল বা ঘামের মধ্যে মলমূত্র দ্বারা নষ্ট হওয়া পানি বা জল প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির দরকার। পানির এই চাহিদা কিন্তু গবাদি প্রাণির স্বাস্থ্য ঝুঁকি গুলিকে প্রভাবিত করে। তাই প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি গ্রহন গরুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সীমিত পানি বা জল গ্রহন করলে গরু প্রস্রাব কম করবে ফলে তার শরীর থেকে দুষিত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে এমোনিয়ার সাথে কম বেরুবে। ফল স্বরুপ গরু ভবিষ্যতে কোনো রোগে আক্রান্ত হবে,তার বৃদ্ধিও কমে যাবে এতে! ত্বক বা ফুসফুস থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে নষ্ট হওয়া পানির পরিমাণটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবে যা হারিয়ে গেছে তার চেয়েও বেশি হতে পারে।
যদি পরিবেশের তাপমাত্রা অথবা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়, বাষ্পীভবন এবং ঘামের মাধ্যমে পানির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। তাই গরুর জন্য পানীয়জল প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রহন করাটা খুব জরুরী!
বেশ কয়েকটি উপাদান জলের প্রয়োজনীয়তাগুলো গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এবং যার জন্য বিষয়টি মূল্যায়ণ করা প্রয়োজন। যেহেতু গরুর খাদ্য হিসাবে গ্রহন করা ফিডগুলির মধ্যে কিছু জল বা পানি থাকে এবং ফিডগুলিতে কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টির জারণ জল উৎপাদন করে, তাই গরুকে পানীয় জলের সরবরাহ হিসাব করেই করা উচিৎ।
সাইলেজ, গ্রিন ফডার বা চারণভূমির ঘাস গুলিতে সাধারণত আর্দ্রতা বেশি থাকে, তবে শস্য ও খড়ে কম থাকে। গবাদি পশুরা যখন সাইলেজ, গ্রিন ফডার বা চারণভূমির ঘাস বেশী খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই তারা তুলণামূলক ভাবে কম পানি পান করে। আবার যেসব গরু দুধ দেয় তাদের পানীয় জলের চাহিদা বেশী থাকে দুধ উৎপাদন এবং তার বাছুরকে দুধ খাওয়ানোর জন্য।
গবাদি প্রাণিকে পানি পানের নিয়ম/পদ্ধতি: বয়স, শরীরের আকার (ওজন), উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং পরিবেশের (প্রধানত বাতাসের তাপমাত্রার) উপর নির্ভর করে একটি গরুর প্রতিদিন পানি গ্রহনের পরিমাণ প্রতিদিন ৩ থেকে ৩০ গ্যালন থেকে পৃথক হতে পারে। থাম্বের নিয়ম হিসাবে, শীতের আবহাওয়ার সময় একটি গরুর শরীরের ওজন প্রতি ১০০ পাউন্ডে ১ গ্যালন পানীয় জলের প্রয়োজন এবং গরম আবহাওয়ার সময় সেটা প্রায় ২ গ্যালন!
ড্রাই গরুর তুলনায় ল্যাক্টেটিং গরুদের প্রায় দ্বিগুণ পানি/জল প্রয়োজন। গরুর জন্য পানীয় জল হতে হবে সুপেয় এবং আবর্জনা মুক্ত! প্রসঙ্গত, ১ গ্যালন= ৩.৭৮ লিটার আর ১ পাউন্ড= ০.৪৫ কেজি।
গবাদি প্রাণিকে পানি পানের সঠিক পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয়তা শিরোনামের লেখাটির লেখক দেশের অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত প্রশিক্ষিত খামারি মুক্তি মাহমুদ খামারের সাথে ১৯৯০ সাল থেকে যুক্ত রয়েছেন। খামারিদের প্রয়োজনে তিনি এরকম পরামর্শমূলক একাধিক লেখা লিখে যাচ্ছেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭মার্চ২০