চৈত্র মাসে কৃষিতে করণীয় কাজ

450

90177794_1400623803443924_788244022006120448_n

ফাল্গুন মাস শেষ হয়ে প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে চৈত্র মাস তাই আপনাদের জন্য চৈতালী শুভেচ্ছা। চলুন জেনে নেয়া যাক চৈত্র মাসে কৃষিতে করণীয় কাজ সম্পর্কে।

ধান
যেসব ক্ষেতে বোরো ধানের চারা সময়মতো রোপণ করা হয়েছে সেসব জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ শেষ হওয়ার কথা। তবে যারা দেরিতে চারা রোপণ করেছেন তাদের জমিতে চারার বসয় ৫০-৫৫ দিন হলে ইউরিয়া শেষ উপরি প্রয়োগ করে ফেলুন। এ সময় ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকা ও রোগের আক্রমণ হতে পারে এজন্য সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে ক্ষেতে ডাল বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করতে পারেন। তাছাড়া আলোর ফাঁদ ব্যবহার করেও ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে উপকারী পোকা ও প্রাণী সংরক্ষণ করতে পারলে সেগুলো ক্ষতিকর পোকা খেয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে অভিজ্ঞ চাষি, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অথবা অন্য কোন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। নিচু এলাকায় বোনা আউশ বা বোনা আমন বীজ বপনের সময় এখন। বৃষ্টি হলে পরে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিন এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করুন ।

গম
দেরিতে বপন করা গম পেকে গেলে কেটে মাড়াই, ঝাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। শুকনো বীজ ছায়ায় ঠান্ড করে প্লাষ্টিকের ড্রাম, বিস্কুটের টিন, মাটির কলসি ইত্যাদিতে সঠিকভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিন।

ভুট্টা
আপনার ক্ষেতের পাকা ভুট্টা সংগ্রহ করে শুকিয়ে নিন। এগুলো জ্বালানি এবং গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে গবাদিপশুকে খাওয়ানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে নেয়া প্রয়োজন। আপনি গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা চাষ করতে চাইলে বীজ বপনের ব্যবস্থা নিতে পারেন এ সময়। এজন্য হেক্টরপ্রতি (প্রায় সাড়ে সাত বিঘা) ২৫-৩০ কেজি বীজ লাগবে। আর প্রতি হেক্টর জমিতে সার লাগবে ইউরিয়া ৯০ কেজি, টিএসপি ৫৫ কেজি, এমপি ৩০ কেজি, জিপসাম ৪০ কেজি এবং দস্তা সার ৪ কেজি।

পাট
এ সময় বৃষ্টি হওয়ার পরপরই পাট চাষের জন্য জমি তৈরি করতে হবে। পাটের জমিতে আড়াআড়ি ৫-৭টি চাষ ও মই দিতে হয়। তবে রবি ফসল যেমন- সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন চাষ করা জমিতে ২-৩টি চাষ দিলেই চলবে। জমিতে প্রয়োজন মতো গোবর সার দিতে পারলে রাসায়নিক সার কম লাগে। জৈ সাব প্রয়োগ না করলে প্রতি হেক্টর জমিতে ১০০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি জিপসাম ও ১০ কেজি দস্তা সার প্রয়োগ করুন । বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নিতে পারলে পরবর্তীতে রোগের আক্রমণ কম হয়ে থাকে। এ জন্য অনুমোদিত বীজ শোধন যেমন- ভিটাভেক্স বীজের সাথে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়। রাসায়নিক বীজ শোধনের পরিবর্তে ১৫০ গ্রাম রসুন বাটা এক কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে এবং তা শুকিয়ে বপন করতে পারেন। ছিটিয়ে বুনলে পাট চাষের ক্ষেতে খেয়াল রাখবেন, আগাম জাত ছাড়া অন্যান্য জাতের পাট বীজ চৈত্র মাসের আগে বপন করা যাবে না। এতে অল্প বয়সের গাছে ফুল এসে যাবে এবং পাটের ফলন ব্যাহত হবে।

গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি
গ্রীষ্মকালে শাকসবজি চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন বা চারা রোপণ শুরু করতে হবে। এজন্য জমি তৈরি, মাদা তৈরি, সার প্রয়োগের কাজ করতে হবে এখন। গ্রীষ্মকালে যেসব সবজি চাষ করা যায় সেগুলো হলো গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙা, শসা, ওলকচু, পটল, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এসব। এসব ফসলের উন্নত জাত সংগ্রহ করে বপন বা রোপণের ব্যবস্থা নিন।

অন্যান্য ফসল
এ সময় চিনা কাউন, কাউন, মিষ্টি আলু, আলু, পেঁয়াজ, রসুন পরিপক্ব হলে মাঠ থেকে তোলার ব্যবস্থা নিন। এ সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাঠের পাকা ফসল যথাসময়ে কেটে মাড়াই ঝাড়াই করে ঘরে তুলুন। এ ছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে মাঠের এবং ঘরের ফসল যাতে পচে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

সবুজ সার
নানা কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। আবার জৈব সার পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের হাতে নেই। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার জমিতে সবুজ সার ফসল চাষ করে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। সবুজ সার ফলন যেমন- ধৈঞ্চা, শনপাট, বরবটি, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর চাষ করার এখনই উপযুক্ত সময়। বীজ বপনের পর চারার বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমিতে পানি থাকা প্রয়োজন। বৃষ্টি না হলে সচে দিতে হবে। এতে সবুজ সার ফসল মাটিতে পচে জৈব পদার্থ যোগ করবে। সবুজ সার মাটির সাথে মেশানোর ৮-১০ দিনের মধ্যেই পরবর্তী ফসল চাষ করা যাবে।

গাছপালা
এ সময় বৃষ্টির অভাবে মাটিতে রসের পরিমাণ কমে আসে। এ অবস্থায় আপনার গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আম গাছে হপার পোকার আক্রমণ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিন। কলা বাগানের পার্শ্বচারা, মরা পাতা কেটে দিন। এখন পেঁয়াজ চারা রোপণ করতে পারেন। তাছাড়া নার্সারিতে চারা উৎপাদনের জন্য বনজ গাছের বীজ বপন করুন । বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় মাটি ও জৈব সার প্রয়োগ করুন ।

পশুসম্পদ
চৈত্র মাসে বেশ গরম পড়ে। তাই গবাদিপশুর এ সময় বিশ্রামের প্রয়োজন। আপনার গবাদিপশুকে ছায়ায় রাখুন এবং বেশি বেশি পানি খাওয়ান। সেই সাথে নিয়মিত গোসল করান। আর গবাদিপশুর গলাফুলা, তড়কা, বাদলা এবং মুরগির কলেরা রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করুন । প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে উপজেলা পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন ।

মৎস্য
মাছের আঁতুড় পুকুর তৈরির কাজ এ সময় শেষ করা দরকার। পুকুরের মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে জাল টানার উদ্যোগ নিন। মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য পরিমিত খাদ্য সরবরাহ করুন । মাছের রোগ হলে তা সারাতে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রিয় পাঠক, বাংলা বছরের শেষ প্রান্তে আমরা। আপনার কৃষি কার্যক্রম হোক সফল। কৃষিতে সমস্যার উদ্ভব প্রতিনিয়ত। তাই কৃষি বিষয়ক যে কোন সমস্যার সমাধান ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে আপনার নিকটস্থ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করুন।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮মার্চ২০