মাছের পোনা পরিচিতি

5883

48422309_2249137615297975_3801708547075473408_n
মাছের পোনা পরিচিতি

মাছ চাষ করার আগে মাছের জীবন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারনা থাকা উচিত, এই ধারনাকে কাজে লাগিয়ে সেই মাছের চাষ কালিন সময়ে যেকোন সমস্যায় সমাধান বের করা সহজ হবে বলে আমার ধারনা, সাধারণত আমরা চারা পোনা মাছকে চাষে দিয়ে থাকি, এই চারা পোনায় আসতে এই পোনাকে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়, পোনার জীবন প্রক্রিয়ার কয়েকটি ধাপ নিম্ন আলোচনা করা হল-

ডিম পোনাঃ
ডিম ফুটার পরের অবস্থাকে ডিম পোনা বলা হয়, এই অবস্থায় ডিম পোনার পেটের নিচে একটা থলে থাকে, এর থলে থাকা অবস্থায় তারা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না। প্রাকৃতিক ভাবেই এই থলের মধ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থাকে যা জন্মের ২-৩ দিন পর্যন্ত এ অবস্থা থাকতে পারে, অবশ্য এটা নির্ভর করে তাপমাত্রা এবং পরিবেশের ওপর, ডিম পোনার জীবন থাকলেও মাছের মত চলা ফেরা করতে পারেনা, এই অবস্থায় ডিম পোনাকে হ্যাচারীতে বিশেষ সতর্কাবস্থায় গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
ডিম পোনা অবস্থায় প্রজাতি সনাক্ত করা যায়না।

রেনু পোনাঃ
পেটের বিশেষ পুষ্টি খাদ্য থলি শেষ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী অবস্থাকে রেনু পোনা বলা হয়, ডিম পোনার সময় ২-৩ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর এই অবস্থায় পোনার বয়স সাধারনত ৩-৫ দিন হয়ে থাকে, রেণু অবস্থায় বিশেষ পুষ্টি খাদ্য থলি না থাকায় এরা বাইরের খাদ্য গ্রহণ শুরু করে, রেণু পোনাকে Han Milk for Fish, ডিমের কুসুম খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়, রেণু চাষ কালিন অবস্থায় Han Milk for Fish খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করলে, খাদ্য জনিত কারনে রেণু কাটবে কম, রেণু অবস্থায়ও প্রজাতি সনাক্তকরণ অত্যন্ত কঠিন বা যায়না বললেই চলে, এ অবস্থায় পোনা নার্সারী পুকুরে মুজুদ করতে হয়, সাধারণত রেণু পোনা চলাফেরা করতে পারে।

ধানী পোনাঃ রেণু পোনা বড় হয়ে ধানের আকার হলে তাকে ধানী পোনা বলা হয়, সাধারণত ১ থেকে ১,৫ সে মি আকারের পোনাকে ধানী পোনা ধরা হয়, ধাণী অবস্থায় প্রজাতি সনাক্ত করা যায়, ধানী পোনাকে নার্সারি পাউডার খাবার দিতে হয়, এই অবস্থায় স্কেটিং পাউডার খাবার দিতে পারলে খুব ভাল ফল পাবেন এবং পোনা কাটবে কম, অধিক ভাল ফলাফলের জন্য প্রতি কেজি খাবারের সাথে Multi Grow ২-৪ গ্রাম ব্যবহার করতে পারেন, রেণু থেকে ধানী হতে সাধারণত ৮ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। তবে তা ভাল মানের খাদ্য, অক্সিজেন প্রাপ্যতা , তাপমাত্রা সর্বোপরি ভাল ব্যবস্থাপনার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল, খেয়াল রাখতে হবে বেশী খাদ্য প্রয়োগ করে যেন পুকুরে ক্ষতিকর গ্যাস সৃষ্টি নাহয়।

চারা পোনাঃ
ধানী পোনা ধীরে ধীরে আরও বড় হয়ে হাতের আঙ্গুলের আকার ধারণ করলে তাকে চারা পোনা বলে, সাধারণত ৬-৭ সে মি এর সাইজের পোনাকে চারা পোনা হিসেবে ধরা হয়, অবশ্য প্রজাতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, চারা পোনাকে স্কেটিং মাইক্রো ০.৫ এম এম -১.৫ এম এম খাবার খাবার দিতে হয়, স্কেটিং মাইক্রো খাবার দিতে পারলে খুব ভাল ফল পাবেন এবং পোনা খুব তাড়াতাড়ি চাষের আওতায় আসার উপযোগি হয়ে যাবে, অধিক ভাল ফলাফলের জন্য প্রতি কেজি খাবারের সাথে Multi Grow ২-৪ গ্রাম ব্যবহার করতে পারেন,
চারা পোনা মাছ চাষ কালিন অবস্থায় মজুদ ঘনত্ব, একুয়া নেচার প্রয়োগ ,খাদ্য প্রয়োগ ও তার গুনগত মান ,অক্সিজেনে প্রাপ্যতা, বিষাক্ত গ্যাসের বিস্তৃতি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ করা উচিত, সাধারণত ৩০-৪০ দিনেই ধানী পোনা হতে চারা পোনায় রূপান্তরিত হয়, এ সময় চারা পোনা পোনা মজুদ পুকুরে ছাড়ার যোগ্য হয়।

বিঃদ্রঃ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের পোনা ব্যবহার করা হয়।

পোনা মাছ সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারনা বা মতামত যোগ করার থাকলে থাকলে কমেন্টসে জানাবেন প্লিজ, আপনাদের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত পরবর্তীতে যোগ করে লিখটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯মার্চ২০