নিজের পতিত বা পরিত্যক্ত কোন জমিতে পুঁইশাক চাষ করে নিজের পরিবারের সবজির পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করি।এতে নিজের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি অতিরিক্ত সবজিগুলো দিয়ে দেশের মানুষেরও সবজির চাহিদা পূরণ হবে এবং বাহিরের দেশ থেকে সবিজ আমদানিও বন্ধ হবে।দেশ হবে স্বনির্ভর ও দেশের অর্থনীতিও হবে চাঙ্গা।
পুঁইশাক কে না চেনে।
এটি আমাদের দেশের একটি পরিচিত শাক।শীতকাল ব্যতীত প্রায় সব সময়ই পুঁইশাক পাওয়া যায়।শাক জাতীয় তরকারীর মধ্যে পুঁইশাক হল সবার সেরা।পুঁইশাক হল সবার সেরা।পুঁইশাক একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু শাক।আমাদের দেশে প্রায় সকল স্থানেই পুঁইশাকের চাষ হয়।
পুঁইশাক চাষে প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
গ্রীম্মমন্ডলীয় অঞ্চলে পুঁইশাক জম্মে।গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং রোদ পুঁইশাকের পছন্দ।কম তাপমাত্রায় গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কম হয়।সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক জম্মে।তবে পুঁইশাক সুনিষ্কাশনযুক্ত দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়।তাই বানিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষের ক্ষেত্রে দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।
পুঁইশাকের উল্লেখযোগ্য জাত
রঙ ভেদে দুধরনের পুঁইশাক দেখা যায়।লাল ও সবুজ।লাল রঙের জাত হল মনিষা।সবুজ রঙের জাতের মধ্যে ভাল বারি পুঁইশাক ১(চিত্রা)।সবুজ রঙের পুঁইশাকের আর বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে।তার মধ্যে রয়েছে মাধুরী,গ্রীন লিক,মোটালতা,রূপসা,গ্রিন ইত্যাদি।
পুঁইশাক চাষে উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন–
জমির আগাছা পরিষ্কারের পর ৫ থেকে ৬ টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটি উত্তমরূপে তৈরি করতে হয়।সারি করেও পুঁইশাকের বীজ বপন করা যায়।সারিতে বীজ বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম ও হেক্টর প্রতি ১.৫০ -২.৫০ কেজি বীজ লাগবে।আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমান বেশী লাগবে।পুঁইশাকের বীজ বপনের জন্য ১৮-২০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা প্রয়োজন। তাই শীতের সময় যখন তাপমাত্রা কম থাকে,সেই সময় বীজ বপন করা ভাল।সাধারণত গ্রীম্মকালে বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়।বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়।চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়।পুঁইশাকের চারা রোপনের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূর দূরে চারা রোপন করতে হয়।কখনও কখনও বেডে তৈরি করা হয়।ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চারা বেডে তৈরির জন্য বেডে বা পলিব্যাগে বীজ রোপন করা হয়।চারা দুই সপ্তাহের হলে সেগুলো তুলে মূল জমিতে লাগানো যায় বা ফাঁকা জায়গা পূরন করা যায়।
পুঁইশাকে সার প্রয়োগের নিয়ম ও পরিমাণ
ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে।চারা বয়স ১০-১২ দিন হলে ইউরিয়া প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে।গোবার ও টিএসপি অর্ধেক জমি তৈরির সময় এবং বাকি অর্ধেক চারা রোপনের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।পুঁইশাক চাষে শতকপ্রতি সারের মাত্রা হলো-গোবর ৬০ কেজি,সরিষা খৈল ৫০০ গ্রাম,ইউরিয়া ৮০০গ্রাম,টিএসপি ৪০০ গ্রাম ও এমপিও ৪০০ গ্রাম।
পুঁইশাক চাষে সেচ ও পানি নিষ্কাষণ
বর্যায় সাধারণত সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।মাটির রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।প্রায়ই মাটি আলাদা করে দিতে হবে।
পুঁইশাক চাষে আগাছা ও নিড়ানি
আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।ফলন বেশি পেতে হলে বাউনি দিতে হবে।পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেওয়া যাবে না।তাহলে গাছের গোড়া পঁচে যেতে পারে।আবার অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়।তাই বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।চারা ২৫-৩০ সে.মি উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হবে।এতে গাছ ঝোপালো হয়।
পোকামাকড় ও রোগ দমন
পুঁইশাকের পাতায় বিটল বা ফ্রি বিটল ছাড়া আর কোন পোকা তেমন ক্ষতি করে না।এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে।সারকোম্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ।এছাড়াও আর কয়েক ধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে।ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এসব রোগ নিয়ন্ত্রন করা যায়।
ফসল সংগ্রহ
পুঁইগাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হয়।এতে শাক ও খাওয়া হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বের হয়।একবার চারা লাগিয়ে ৮-১০ বার পুঁইশাক সংগ্রহ করা যায়।
প্রতিশতকে ৮০-১২০ কেজি,হেক্টর প্রতি ৫০-৭০ টন হয়ে থাকে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯এপ্রিল২০