পুষ্টিকর ও বহুমুখী ঔষধী গুন সম্পন্ন সবজি কচু।বাংলাদেশের একটি খুবই পরিচিত সবজি।গ্রামের আনাচে কানাচে কচুর গাছ দেখা যায়।শহরে নগরে দিন দিন বাড়ছে কচুর লতি ও মুকির চাহিদা।কচুর লতি ও মুকি খুবই সুস্বাদু।কচুর কোন কিছুই বাদ যায় না।কাজে আসে পর্যায়ক্রমে।কচুর লতি,মুকি ও ডাটা সহ বিভিন্ন অংশ সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।ব্যাপক ভোক্তার চাহিদা ও আর্থিক ভাবে লাভ জনক হওয়ায় দেশের বিভিন্নস্থানে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে বানিজ্যিকভাবে কচুর আবাদ।বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই কচুর চাষ করা যায়।কচু চাষে তেমন কোন পরিশ্রম নেই।রোগবালাই ও কম।তুলনামূলক ভাবে অনুর্বর জমিতে এমনকি ছায়াযুক্ত স্থানে ও কচুর চাষ করা যায়।
কচুর জাত
বাংলাদেশে লতি কচুর অনেক জাত থাকলে ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট থেকে অবমুক্ত লতিকচুর জাত “লতিরাজ” চাষ বেশ লাভজনক।
মাটি
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পলি দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ।বেলে মাটিতে রস ধরে রাখা যায় না বলে চাষের জন্য এ ধরনের মাটি ভালো না।
কচুর লতি চাষে জমি নির্বাচন–
মাঝারি নিচু থেকে উঁচু যে কোন জমি,বৃষ্টির পানি জমে না,কিন্ত প্রয়োজনে সহজেই পানি ধরে রাখা যায়।এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
জমি তৈরি–
কচুর লতি পানি কচু থেকে পাওয়া যায়।লতি উৎপাদনের জন্য পানি কচুর জমি শুকনো ও ভেজা উভয় অবস্থাতেই তৈরি করা যায়।শুকনো ভাবে তৈরি করার জন্য ৪/৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে।ভেজা জমি তৈরি করার জন্য ধান রোপনের জন্য জমি সেভাবে কাঁদা করা হয়।সেভাবেই তৈরি করতে হবে।
রোপনের সময়
খরিপ মৌসুমে কচুর লতি পাওয়া যায় বা সংগ্রহ করা যায় বলে জানুয়ারী থেকে ফ্রেবুয়ারি মাস রোপনের জন্য উপযুক্ত সময়।
বংশবিস্তার
পূর্ণ বয়স্ক পানি কচুর গোড়া থেকে যেসব ছোট ছোট চারা উৎপন্ন হয় সেগুলোই বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
চারা রোপন পদ্ধতি
পানি কচুর চারা কম বয়সী হতে হয়।৪-৬ পাতার সতেজ চারা গুলোই রোপনের জন্য নির্বাচন করতে হয়।রোপনের সময় ওপরের ২-৩ টি পাতা রেখে নিচের বাকি সব পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে।চারার গুঁড়ি বা গোড়া বেশি লম্বা হলে কিছুটা শিকড় গুড়ির অংশ বিশেষ ছাঁটাই করে দেয়া যেতে পারে।সারি থেকে সারি ৬০ সে.মি এবং গাছ থেকে গাছ ৪৫ সে.মি দূরত্বে চারা রোপন করতে হয়।চারা রোপনে মাটির গভীরতা ৫ থেকে ৬ সে.মি রাখতে হবে।
পরিচর্যা
গুঁড়ি থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার পর যদি মূল জমিতে চারা রোপন দেরি হয় তাহলে যেগুলো ভেজা মাটি ও ছায়া আছে এমন স্থানে রেখে দিতে হবে।চারাগুলো আঁটি বেঁধে বা কাছাকাছি রাখতে হয়।রোপনের সময় বা পরে কিছু দিন পর্যন্ত জমিতে বেশি পানি থাকার কারনে যাতে চারা হেলে না পড়ে সে জন্য মাটি কাঁদা করার সময় খুব বেশি নরম করা উচিত নয়।গাছ কিছুটা বড় হলে গোড়ায় হলুদ হয়ে যাওয়া বা শুকিয়ে যাওয়া পাতা সরিয়ে ফেলতে হবে।ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে জমি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।রোপনের এক থেকে তিন মাসের মধ্যে কোন প্রকার আগাছা যেন না থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়।পানি কচুর গাছে লতি আসার সময় ক্ষেতে পানি রাখা উচিত নয়।তবে একেবারে শুকনো রাখলে ও আবার লতি কম বের হয় বা লতির দৈর্ঘ্য কম হয়।সেজন্য জো অবস্থা রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
হেক্টর প্রতি জৈব সার ১৫ টন,ইউরিয়া ১৫০ কেজি,টিএসপি ১২৫ কেজি ব্যবহার করতে হবে।ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার জমি তৈরি শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে রোপনের ৩০ দিন ও ৬০ দিন পর সারির মাঝে ছিটিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।জমিতে দস্তা ও জিংকের অভাব থাকলে জিংল সালফেট ও জিপসাম সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
সেচ ও নিকাশ
এটি একটি জলজ উদ্ভিদ হলেও দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ সহ্য করতে পারে না।বিশেষ করে লতি উৎপাদনের সময় পানি ধরে রাখা ঠিক নয়।পানি থাকলে কম বা না থাকলে শুকনো জো অবস্থা থাকলে বেশি লতি বের হয়।
রোগ ব্যধি ও দমন পদ্ধতি
লতি রাজ কচুর দুটি রোগ আছে।এক,পাতায় ছোপ ছোপ শুকনো দাগ পড়ে।এরোগ দেখার সাথে সাথে ডাইফেন এম৪৫ অথবা রিদুমিল গোল্ড প্রয়োগ করতে হয়।যেহেতু কচু পাতা পানি ধরে রাখতে পারে না সেহেতু ছত্রাক নাশক মিশানোর সময় তাতে ডিটারজেন্ট অথবা সাবানের গুড়া মিশিয়ে দিতে হয়।যার ফলে ঔষধটা গাছের গোড়ায় ছিটালে পাতায় লেগে থাকবে।দ্বিতীয়ত,পাতায় ব্রাইট বা পাতা পোড়ানো রোগ হয়। এরোগটি হলেও অনুরূপ ভাবে ডাইফেন এম৪৫ অথবা রিদুমিল গোল্ড ১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯এপ্রিল২০