মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের সাথে আলোচনায় করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই তিনি আমাদের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়েছেন। বিশ্ব যে আগামী দিনে একটি বহুমাত্রিক ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সেই সংকট থেকে রেহাই পাবে না বাংলাদেশও। সুতরাং আমাদের এখনি ভবিষ্যত সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স আয়। বিজিএমইএ বলছে, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছে পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রাইসমার্কসহ ইউরোপের অনেক পোশাক বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। রেমিট্যান্স আয়েও টান পড়েছে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে রেমিট্যান্স আয় ১২ শতাংশ কম এসেছে। এপ্রিলে তা আরও অনেক কমে যাবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কিছু দেশ থেকে শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিতে চাপ বাড়ছে। ইউরোপের অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী বেকার হয়ে পড়তে পারেন। এডিবি বলছে, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষ কাজ হারাবে। এ হিসাব আরও বাড়তে পারে। আমাদের গার্মেন্টস খাতে নিয়োজিত প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক। অর্ডার বাতিল ও গার্মেন্টস বন্ধের ফলে যদি ১০ লাখ শ্রমিকও কাজ হারায়, সে ধাক্কা গিয়ে পড়বে ৫০ লাখ মানুষের উপর। কৃষিখাত ছাড়া প্রায় সব খাত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে অর্থনীতিবিদরা মন্দার আশঙ্কা করছেন।
সম্ভাব্য বেকারত্ব ও খাদ্য সংকটের ধাক্কা সামাল দিতে আমাদের অবশ্যই কৃষিখাতকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনভাবেই যেন কৃষি উৎপাদন ব্যাহত না হয়। যেভাবে প্রশাসন করোনা মোকাবেলায় ও মানুষকে ঘরে ফেরাতে কাজ করছে; সেভাবে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করে। প্রয়োজনে এ খাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হোক। সরকারের পক্ষ থেকে সার, বীজ ও কীটনাশক পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট পণ্য পরিবহন যেকোনোভাবে সচল রাখতে হবে।
দেশের এক ইঞ্চি মাটিও যেন অনাবাদি না থাকে। শুধু কৃষক নয়; যারা মৌসুমী কৃষক তাদেরকে কৃষি উৎপাদনে আগ্রহী করতে উদ্যোগ নিতে হবে। ইউরোপ খাদ্য সংকটের মুখে পড়বে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। ফলে আমাদের এমনভাবে উৎপাদন করতে হবে, যাতে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অন্যের চাহিদায় জোগান দিতে পারি।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোক রিকশা চালক, শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ভাসমান ব্যবসায় জড়িত। এসব খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে ধানের পাশাপাশি অন্যান্য সবজির বীজ বিনা মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা হোক সরকারের পক্ষ থেকে। যারা কৃষক নয় বা যাদের কৃষি জমি নেই; তারা যেন বাড়ির ছাদে, উঠানে, টবে, জমির আইলে, রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে সাধ্যমত সবজি চাষ করতে পারে। এভাবে সামগ্রিক উৎপাদন করা গেলে আমরা সামনের দিনের খাদ্য সংকট ও মন্দা কাটাতে পারবো।
তবে সব সেবা খাত বন্ধ হয়ে গেলে বেসরকারি হাসাপাতালের সেবাখাত সচল রাখা উচিত। এতে মানুষের চিকিৎসা যেমন নিশ্চিত থাকবে; তেমনি অন্তত একটি খাতের আয় থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে আরেকটি বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। তা হলো মজুতদার ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম নিয়ন্ত্রণ। দেশে প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুত ও উৎপাদন থাকার পরও যদি অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুত নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে কৃত্রিম সংকট তৈরি হতে বাধ্য। এছাড়া কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর মাঝে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা যেন দাম বাড়াতে না পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা মহামারীর ফলে চলমান সংকটের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় এখনি প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন আমাদের বেকারত্ব ও খাদ্য সংকটের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদন যথাযথভাবে করা গেলে অর্থনৈতিক মন্দাও কাটানো যাবে। সরকারকে এখনি কৃষিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫এপ্রিল২০