করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদী লোকসানের রাজশাহীর পো্লট্রি শিল্প। এমতাবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলার প্রান্তিক খামারিরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন লোকসান গুনছেন এই অঞ্চলের খামারিরা। এদিকে রাজশাহী জেলা লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ সহ বন্ধ আছে হাট বাজার যার ফলে ্মেকছে মুরগি ও ডিমের চাহিদা। এছাড়া পরিবহনে সমস্যা হওয়ার কারণেও লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
খামারি সাগর হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই আমার অনেক টাকা লোকসান হয়ে গেছে। লকডাউনে নতুন করে আর মুরগি তুলিনি। আগের যা ছিল সেগুলোই বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি। এই অঞ্চলের কোন খামারিই এই অবস্থায় লাভ করতে পারেনি সবাই লোকসানের মধ্যে আছি বলে তিনি জানান।
রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশননের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় রাজশাহী জেলায় দুই হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্রয়লারের বাচ্চা ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হতো। বর্তমানে কমে তা ৫ টাকা থেকে ৭টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে সাদা ডিম ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬টাকা এবং লাল ডিম ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে সাদা ডিম ৪টাকা থেকে সাড়ে ৪টাকা এবং লাল ডিম ৫ টাকা থেকে সাড়ে ৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে । এই অঞ্চলে পোল্ট্রি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার এবং পরোক্ষভাবে আরো দেড় হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে। এসময় তিনি পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় রাজশাহীর খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করেন।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে বিশাল অঙ্কের ক্ষতি হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ক্ষতির সম্ভাবনা থাকায় নতুন করে বাচ্চা তুলছেন না অনেকেই। তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খামারে বাচ্চা তুলবেন। প্রতিকেজি মুরগির উৎপাদনে গড়ে খরচ হচ্ছে ১০০ টাকা। কিন্তু তাদের পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে তার খামারের ১ হাজার ব্রয়লার বিক্রি করে ৪৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয় বলে জানান।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, এই মুহূর্তে মাঠে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া আছে। লকডাউনে জরুরিসেবাসহ কিছু বিষয় আওতামুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পোল্ট্রির খাবার পরিবহনও আছে। আশাকরি দ্রুত এই সংকট কেটে যাবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সচিব গোলাম জাকির হোসেন বলেন, আমাদের এখানে পোল্ট্রি খুব খারাপ অবস্থাতে আছে। এই পরিস্থিতিতে খামারিদের কল্যাণে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার জানান, লকডাউনের কারণে পোল্ট্রি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বাচ্চা বিক্রির জন্যে অথবা কেউ ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে তাদের জন্যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি বলেও তিনি জানান।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮এপ্রিল২০