চলতি বোরো মৌসুমে কক্সবাজারের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিআর-২৮ জাতের ধান লাগিয়ে প্রচুর ফলন পেয়েছিলেন। কিন্তু পাকা ধান কাটার আগেই কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ‘মাজরা’ নামের এক পোকা। এ পোকার আক্রমণে ধূসর হয়ে গেছে একরের পর একর পাকধরা ধান। এতে অন্তত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল কাওয়ারপাড়ার কৃষক আবু ছৈয়দ ও মুহিবুর রহমান জানান, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গত ডিসেম্বরে তারা প্রতিজন ৩ কানি জমির জন্য এক হাজার ১৪০ টাকা দিয়ে ৩ বস্তা বিআর-২৮ ধানের বীজ ক্রয় করেন। পরবর্তীতে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৩ মাস অর্ধলাখ টাকা ব্যয়ে অনেক যত্নে ধানের বাম্পার ফলন ঘটান। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনের এ দুর্ভোগেও বেশি ফলন দেখে আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু গত ক’দিন ধরে তাদের যত্নে লালন করা ধান চোখের সামনে মড়কে পড়ছে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা।
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে মোরশেদুর রহমান নামে এক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি নেই। তা না হলে কক্সবাজারের আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য নেই, এমন জাতের ধান কৃষকরা ফলিয়েছেন। কম সময়ে বেশি ফলন পাওয়ার কথা জেনে পরীক্ষামূলক গবেষণা ছাড়াই সরাসরি কৃষকের মাঝে বিআর-২৮ বীজ বিক্রি করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ধান পাকা দেখলেও ফলন ঘরে তোলার আগেই জমিতে পোকার আক্রমণের এ দৃশ্য কৃষক পরিবারগুলোতে করোনার লকডাউনে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
খুরুশকুলের রাখাইনপাড়ার কাছে সেচ পাম্পের মালিক ওমর হাকিমের ২ একর, স্থানীয় ফকিরপাড়ার অ্যাডভোকেট সাইফুল্লাহ নুরের এক একরসহ শুধু খুরুশকুলেই অন্তত ৫০ একর জমির ধান পোকায় নষ্ট করেছে বলে দাবি করেছেন কৃষক মনোপাড়ার আবু ছৈয়দ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, কক্সবাজার জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে অর্ধলক্ষাধিক হেক্টর চাষে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বিআর-২৮ জাতের ধান লাগানো হয়েছে। কম সময়ে এ জাতের ধানের ক্ষেতে ফলন এসেছে প্রচুর। যারা নিয়ম জানেন; তারা সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশক প্রয়োগ করায় ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করেনি। কিন্তু অসাবধানতার কারণে খুরুশকুলসহ বিক্ষিপ্ত কয়েক এলাকায় ১০-১৫ হেক্টর জমির ধানে মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম জানান, বিআর-২৮ জাতের ধানের ভাত খেতে সুস্বাদু আর স্বল্প সময়ে ফলন আসে। কিন্তু পরিবেশের সাথে এখন সহজে খাপ না খাওয়ার কারণে এটি চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। এরপরও সহজে অতি ফলনের আশায় অনেক কৃষক জোরাজুরি করে এ জাতটি চাষ করছেন। যারা নিয়মিত উপদেশ মেনে চলেন, তারা পোকার আক্রমণ থেকে ফলন রক্ষা করতে পারেন। যারা অবহেলা করেন; তারা ক্ষতির মুখে পড়েন।
তিনি আরও জানান, খুরুশকুলসহ অন্য এলাকায় পোকার আক্রমণের কথা জানতে পেরে সংশ্লিষ্টদের সেসব এলাকা পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। ফলন ঠিক রাখতে কোন গ্রুপের কীটনাশক ছিটানো দরকার, তা সংশ্লিষ্ট কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২১এপ্রিল২০