বাড়ন্ত মুরগি নিয়ে বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা

731

দেশের করোনাভাইরাস ঠেকাতে সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর যেসব অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে, এর মধ্যে পোল্ট্রি খামারিরা অন্যতম। খামারে সোনালি, কক, ব্রয়লার মুরগির ওজন বাড়ছে, কিন্তু কেনার লোক কম। খামারে মুরগি ডিম পাড়ছে, বিক্রি হচ্ছে না। আর্থিক ক্ষতির সঙ্কা এবং মুরগি, ডিম, বাচ্চা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর পোল্ট্রি খামারিরা।

এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা না পাওয়া গেলে অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে দাবি রাজশাহী জেলা পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের। রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের পাশে আমরা সবসময় আছি।

সব মিলিয়ে বড় সংকটে পড়েছেন খামার মালিকেরা। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খামারি। রাজশাহীর নওদাপাড়া এলাকার মুরগি খামারি সিরাজুল ইসলাম বলেন, খামারে মুরগি আছে সাড়ে ৪ হাজার। মুরগির ওজন গড়ে সাড়ে ৮০০ থেকে সাড়ে ৯০০ গ্রাম। ২০০ টাকা কেজি মুরগি বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ হবে। তাছাড়া আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে।

আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারে মুরগি বাড়ন্ত অবস্থায়। সিরাজুল ইসলামের খামারসহ পাশাপাশি আরো ৪ টি সোনালি মুরগির খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারেই রয়েছে কয়েক হাজার করে মুরগি।খামারিরা বলছেন, করোনার প্রভাবে চলতি চালানের মুরগি বিক্রি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন। ঝুঁকি নিয়ে ব্যাবসা করবেন না। পাইকারদের মুরগি কেনার আগ্রহ একদম নেই। তাদের হাতে পায়ে -ধরে মুরগি দিতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।

সিরাজুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে আরোও বলেন, প্রতি কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ প্রায় ১৬০ টাকা। আর কারোনার মধ্যে মুরগির দাম গেছে ১৪০ টাকা। দাম এখন কিছুটা বাড়লেও শঙ্কা কাটাতে পারছি না। কখন দাম কমে যায় বলা যায় না। ১৪০ টাকা করে যদি মুরগি বিক্রি করতে হয় তাহলে ৩ লাখ টাকা লোকসান। এই চালান বিক্রি হলে আর মুরগি তুলবো কি না ভাবতে হবে।

খামার মালিকেরা বলছেন, দাম যখন বেড়ে যায়, তখন চাইলেই উৎপাদন বাড়িয়ে বাড়তি টাকা আয় করা যায় না। আবার যখন কমে যায়, তখন চাইলেও তাৎক্ষণিক উৎপাদন কমিয়ে ফেলা যায় না। ফলে লোকসান অবধারিত।

রাজশাহীর হরিপুর ইউনিয়নের বেলপাড়া গ্রামের পোল্ট্রি খামারি কুরবান হোসেন মুঠোফোনে এগ্রিকেয়ার২৪. কম কে জানান, ‘খামারে সাড়ে ৫’শ পোল্ট্রি মুরগি ছিল। মুরগির ওজন গড়ে ২ কেজি। ৪০ হাজার টাকা লস দিয় বিক্রি করে দিলাম। মুরগি কিনতে চাচ্ছে না পাইকারিরা। প্রতিকেজি মুরগি ৬৫- ৭০ টাকা করে বিক্রি করেছি। ঈদের আগে আর বাচ্চা উঠাবো না। সরকার আমাদের এই মূহুর্তে আর্থিক সাহায্য না করলে পথে বসতে হবে।’

আরেক খামারি মুস্তাকিম বিল্লাহ জানান, ১৬’শ সোনালি মুরগি ছিল আমার। গতকাল বিক্রি করেছি । ৩ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এই সামান্য টাকা লাভে সংসার চলেনা। করোনা আমাদের নিঃস করে দেবে মনে হয়। সোনালি মুরগি ২০০ টাকার উপর বিক্রি করতে পারলে কিছু টাকা থাকে। ১৫০- ১৬০ টাকা দরে মুরগি বিক্রি করে শুধু কষ্টই হয়। লাভ হয় না।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, রাজশাহী জেলায় দুই হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। প্রত্যক্ষ- পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ জড়িত আছে। ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের জন্য সরকার ইতোমধ্যেই প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।

ক্ষতির ব্যাপারে এনামুল বলেন, বর্তমানে ডিমের বাজারে ধ্বস নেমেছে। আগে সাদা ডিম গড়ে ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা এবং লাল ডিম ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সাড়ে ৪ টাকা থেকে সাড়ে ৫ টাকা। মাংসের চাহিদা কম। হোটেল রেস্তোরা খুললে দাম বাড়তে পারে। তারপর আরো বিষয় জড়িত রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরে তেমন লোকজন নেই। সবমিলিয়ে ডিম, মুরগি, মুরগির বাচ্চা উৎপাদন সবকিছুই নাজেহাল অবস্থায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১১মে২০