যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষ জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) একই সঙ্গে এক যন্ত্রের সাহায্যে ধানের চারা রোপণ ও দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগ যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। উক্ত মেশিনের মাঠ পরীক্ষণ মাঠ দিবস ব্রি মাঠে এবং কৃষকের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের মাঠ প্রদর্শনী এবং মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, পরিচালক প্রশাসন ড. মোঃ আনছার আলী, ১৯টি গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং অন্যান্য সব বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তাবৃন্দ।
রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে যন্ত্রের উদ্ভাবক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে একই যন্ত্রে একসঙ্গে চারা রোপণ ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায় বিধায় কৃষকের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করা সম্ভব।
মাটির গভীরে সার প্রয়োগ করা যায় বিধায় প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় শতকারা ৩০ ভাগ ইউরিয়া সার কম লাগে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোপণ উপযোগী ট্রের মাধ্যমে ধানের চারা উৎপাদন করার কলা-কৌশল সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। অত্যন্ত কম খরচ ও কম সময়ে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা যায় এবং বীজতলা তৈরির জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন নেই। কৃষক বাড়ির আঙ্গিনায়ও বীজতলা তৈরি করতে পারে। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের সাহায্যে বোরো মৌসুমে ট্রেতে উৎপাদিত মাত্র ২৫ দিন বয়সী চারা রোপণ করা যায়।
চারার উচ্চতা সাধারণত ১২-১৫ সে.মি. হলেই তা মেশিনে রোপণের উপযুক্ত হয়। উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে ঘণ্টায় প্রায় ১.৫-২.০ বিঘা জমিতে চারা রোপণ ও দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় উদ্ভাবিত এই যন্ত্র ব্যবহার করে ধানের চারা রোপণ ও ইউরিয়া সার বাবদ বিঘাপ্রতি কৃষকের সাশ্রয় হবে প্রায় ১৫০০ টাকা। বোরো মৌসুমে কৃষক সাধারণত জমিতে বিঘাপ্রতি ৩৮ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে থাকে, রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে ২৮ কেজি/বিঘা ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেও প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ১০ ভাগ বেশি ধান উৎপাদন করা যায়। এতে জ্বালানি খরচ প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রায় ১ লিটার।
রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষি শ্রমিকের অভাব ঘুচবে, অন্যদিকে শস্য উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, এতে কৃষকরা উপকৃত হবে। বর্তমান সময়ে যান্ত্রিকীকরণ আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশের চিরাচরিত কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিক তথা যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থায় রূপান্তরের বিকল্প নেই। কৃষির মানোন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংস্পম্পূর্ণতা অর্জন, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে ফসল উৎপাদনে লাগসই কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার তথা কৃষি যান্ত্রীকায়ন এখন সময়ের দাবি।
বর্তমানে দেশের কৃষির বিভিন্ন স্তরে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও কৃষি উন্নয়নে খামার যান্ত্রিকীকরণে আমরা এখনও কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমির ক্রমহ্রাস, কম উৎপাদনশীলতা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি কৃষির অগ্রগতিকে বর্তমানে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রকৃতিনির্ভর কৃষিকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থাৎ যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা ও শস্যের নিবিরতা বৃদ্ধি করে তা টেকসই করতে হবে। কৃষিকে লাগসই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
লেখক: এম আব্দুল মোমিন
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫মে২০