এই সময়ে বাড়িতে অলস বসে না থেকে করতে পারেন শসা চাষ।
শসার উন্নত জাত
আমাদের দেশে কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে যা বার মাসই চাষ করা যায়। এর মধ্যে বারি শসা -১ অন্যতম। সম্প্রতি আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের শঁসার বীজ পাওয়া যায় এগুলোর মধ্যে জাপানিজ লং গ্রিণ, পূষা , স্ট্রেট এইট অন্যতম।
শসার বীজ থেকে চারা তৈরি:
ভালো চারা তৈরি করতে হলে পলিব্যাগে চারা তৈরী করা সবচেয়ে উত্তম। সেক্ষেত্রে বীজ থেকে চারা তৈরির সময় প্রথমে বীজ গুলোকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি বীজতলা তৈরি করতে হবে। এর জন্য ৬০ ভাগ দোআঁশ মাটি ৪০ ভাগ শুকনো গোবর ও অল্প পরিমাণ ছাই মিশিয়ে বীজতলা টি তৈরি করে নিন। এবার ভেজানো বীজগুলোকে নতুন তৈরি করা বীছ তলায় বসিয়ে একটি পাটের ছালা অথবা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর কিছুদিন ওই কাপড় বা ছালার উপর কিছু কিছু করে পানি দিয়ে যান। তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই বীজ গুলো অঙ্কুরিত হবে। এবার নতুন গজানো বীজ গুলো তুলে আপনার তৈরি করা পলি ব্যাগ গুলোতে স্থানান্তর করুন। পলিব্যাগের মাটি ‘দোয়াশ মাটি এবং গোবর’ এর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হতে হবে। পলিব্যাগে থাকাকালে 10 থেকে 15 দিনের মধ্যে ছোট চারাগুলো রোপণের জন্য উপযুক্ত হয়ে যাবে।
টবে শসা গাছের পরিচর্যা:
ড্রামে বা টবে শসা চাষ করলে সর্বনিম্ন টবের সাইজ ১৮”×১৮” হতে হবে। এরকম একটি টবে ১-২ টি চাড়া রোপণ করা যাবে।
শসা চাষের জন্য টবের মাটি তৈরি:
শসা চাষের জন্য মাটি তৈরির সময় টবের নিচে ২” পরিমাণ ইটের সূরকী দেবেন । এর পর মোট মাটির ২৫ ভাগ গোবর বা পাতা পচা সার ও ৭০ ভাগ দোআঁশ মাটি ও ৫ ভাগ ছাই মিশিয়ে টব বোঝাই করতে হবে। এছাড়া মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। রাসায়নিক সার গুলোর মধ্যে ইউরিয়া সার ৫০ গ্ৰাম , টিএসপি ৩০ গ্ৰাম , এমওপি সার ২০ গ্ৰাম মিশিয়ে নিন।
এরপর চারা রোপণ করে ড্রাম গুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করুন এবং নিবিড় পরিচর্যার মধ্যে রাখুন। গুল্ম জাতীয় গাছের জন্য মাচা তৈরি করে দিলে সবচেয়ে ভালো হয় । এতে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
টবে শসা গাছে পানি সেচ:
টবে শসা চাষ এর ক্ষেত্রে পানি সেচ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। শসা গাছের জন্য প্রচুর পানি প্রয়োজন হয়। এজন্য প্রতিদিন সকাল বিকেল দুই বার করে পানি সেচ দিতে হবে। তাছাড়া বাসাবাড়ির প্রতিদিনের মাংস বা মাছ ধোয়া পানি গাছে সরাসরি দিয়ে দেবেন এতে গাছের অনেক উপকার হয়। মনে রাখতে হবে কোন কারণে যদি শসা গাছে পানির অভাব হয় তবে ফলন ভালো হবে না এবং ফল ছোট অবস্থাতেই ফল ঝরে যাবে।
শসা গাছে সার প্রয়োগ:
রোপণের সময় প্রয়োগ কৃত সার এর বাইরে ও নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া গাছের অবস্থা দেখে ইউরিয়া ও অন্যান্য সার গাছের গোড়ার ৬” ইঞ্চি দূরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। টবের গাছের জন্য সবচেয়ে ভালো হয় তরল সার ব্যবহার করলে। তরল সার তৈরির জন্য ২০০ গ্ৰাম সরিষার খৈল অথবা ৫০০ গ্ৰাম পরিমাণ শুকনো গোবর ২ লিটার পানিতে মিশিয়ে দুই দিন রেখে দিতে হবে। এরপর রাসায়নিক সার দিতে চাইলে , ঐ তৈরি করা তরল সার এর সাথে NPK বা মিশ্র সার এক চা চামচ পরিমাণ মিশিয়ে টবে প্রয়োগ করুন। প্রয়োগের সময় গাছের গোড়া থেকে অন্তত ৬-৮” ইঞ্চি দূরে তরল সার টি প্রয়োজন মত ঢেলে দিন ।
শসা গাছের রোগবালাই দমন:
শসা গাছের রোগ বালাই দমন করতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সাধারনত প্রায় সব ধরনের গাছে রোগ বালাই হয়ে থাকে। এখানে শসা গাছের রোগ বালাই দমনের প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক দুটি পদ্ধতিই আলোচনা করা হলো।
শসা গাছের রোগ বালাই দমন এর প্রাকৃতিক পদ্ধতি :
১, আপনার শসার মাচায় পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিন । পাখি ক্ষতিকর সব পোকা খেয়ে এর দমন করতে সহায়তা করে।
২, এছাড়া একধরনের জৈব ফাঁদ পাওয়া যায় বাজার থেকে এগুলো কিনে এনে ব্যবহার করলে অধিকাংশ পোকা মাকড় এর মধ্যে ধরা পড়ে।
৩, জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, শসা গাছের রোগ বালাই দমন করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের কীটনাশক নিম পাতা সেদ্ধ করে বা গাঁদা ফুলের পাতার রস থেকে তৈরি করা যায়। এছাড়া নিমের তেল স্প্রে করেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীট পতঙ্গ দমন করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে নিমের তেল কিনতে পাওয়া যায়। শসা গাছের রোগবালাই দমন।
৪, বিষ টোপ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিষ টোপ তৈরি করার জন্য ১০০ গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সাথে ১০০ গ্ৰাম পানি দিয়ে ০.২৫ গ্ৰাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন বিভিন্ন রকম পোকা এর মধ্যে আসবে এবং মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটি পরিবর্তন করে দিতে হবে।শসা গাছের রোগবালাই দমন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৫জুন২০