একটি বিশেষ পুষ্টিগুণে পাঙাশ অন্য মাছের চেয়ে এগিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি গবেষকেরা দেখেছেন, পাঙাশ মাছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড (বা ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড) অনেক বেশি। এ কারণে পাঙাশে থাকা আমিষের মান উন্নত।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা বলছেন, শস্যদানা, ফল বা সবজির চেয়ে উচ্চমানের আমিষ বেশি আছে মাছে। তাঁরা বলছেন, পাঙাশের মতো রুই ও তেলাপিয়াতেও উচ্চমানের আমিষ আছে।
পুষ্টিবিদেরা জানিয়েছেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড আমিষ তৈরির মৌলিক উপাদান। অ্যামাইনো অ্যাসিড কোষের দেয়াল তৈরি, দেহের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। জন্ম থেকে ৬ মাস, ৬ মাস থেকে ৩ বছর এবং ৩ থেকে ১০ বছর—এই বয়সী শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা আছে। পুষ্টিনীতি নির্ধারণ ও পুষ্টি পরিকল্পনা প্রণয়নে এই গবেষণা বড় ভূমিকা রাখবে বলে পুষ্টিবিদেরা মন্তব্য করেছেন। গবেষকেরা চাল, গম, মসুর, রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের আমিষের পরিমাণ নির্ণয় করেছেন। গবেষণা ফলাফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসিভিয়ার, তাদের ফুড কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে। প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত এই ছয়টি খাদ্যে আমিষের পরিমাণ এবং কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তা চিহ্নিত করা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। তাঁরা দাবি করেছেন, ডায়াস (ডাইজেস্টেবল ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড স্কোর) পদ্ধতি ব্যবহার করে পুষ্টিগুণ নির্ণয়ে এ ধরনের গবেষণা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এটাই প্রথম।
নাজমা শাহিন বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা ন্যাশনাল ফুড কম্পোজিশন টেবিল তৈরি করেছেন। দেশে পাওয়া যায় এমন ৩৮১টি খাদ্যের পুষ্টিগুণের বর্ণনা তাতে আছে। সেই পুষ্টিতথ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য এই ছয়টি খাদ্যের আমিষ ও অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপাত্ত তাঁরা পৃথকভাবে বের করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় শস্য দানার মধ্যে চাল, গম, মসুর এবং মাছের মধ্যে রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। দেশের ৩০টি এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনের ১৭টি থেকে চালের ১৭টি, গমের ২৫টি, মসুরের ২৪টি নমুনা এবং দেশের প্রধান ১১টি মাছের বাজার থেকে রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের ১১টি করে নমুনা সংগ্রহ করেন। এসব নমুনা বিশ্লেষণ করা হয় ভারতের হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশনে। গবেষকেরা প্রতিটি নমুনার আর্দ্রতা, শর্করা, আঁশ, লিপিড ও আমিষের পরিমাণ বের করেন। আমিষে ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, এর মধ্যে কিছু অত্যাবশ্যকীয়। অধ্যাপক নাজমা শাহিন বলেন, কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তার ওপর নির্ভর করে আমিষের গুণমান। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মসুরে আমিষ বেশি, তবে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড কম। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে পাঙাশের নমুনায়। এরপর তেলাপিয়া ও রুই মাছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশে বলা হয়েছে, এক গ্রাম আমিষে ২৭৭ মিলিগ্রাম অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকা উচিত। পাঙাশের প্রতি গ্রামে আছে ৪৩০ মিলিগ্রাম। জানার পর গবেষণার তথ্যকে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন পুষ্টিবিদ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার। কিছুটা সতর্ক অবস্থানে থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঙাশ অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে, এটা ভালো কথা। এই তথ্য যেমন জানা দরকার, তেমনি পাঙাশে চর্বি বেশি, সেই সতর্কতাও থাকা দরকার।’ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে, সমৃদ্ধ জৈব ও কৃষিবৈচিত্র্য থাকার পরও অপুষ্টি দেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে আছে। প্রবন্ধের শেষ দিকে বলা হয়েছে, ডায়াস পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনটি মাছের আমিষের মান নিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা অজানা ছিল। সূত্র: প্র.আ