তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপালের হামলায় হুমকিতে পড়েছে ভারত ও পাকিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা।ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়েছে দুই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ সংকটের মাঝেও নতুন একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন পাকিস্তানের কৃষকরা। পঙ্গপাল শুধু দমনই নয়, তা বিক্রি করে আয়েরও বড় উপায় হয়ে উঠেছে পাঞ্জাবের ওকারা জেলায়।
ক্ষুদ্র এ পতঙ্গ হয়ে উঠেছে মুরগির উচ্চপ্রোটিন যুক্ত খাবার। ওকারা জেলায় উদ্ভাবনী এ প্রকল্প এনেছেন পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও গবেষণা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ খুরশিদ ও পাকিস্তান কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের জৈবপ্রযুক্তিবিদ জোহর আলী। আলী বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করলাম তখন অনেকেই উপহাস করেছে। কারণ পঙ্গপাল ধরে বিক্রি করবে এ চিন্তা তখনও পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি।’ খুরশিদ বলেন, ‘আমরা ইয়েমেনের ২০১৯ সালের একটি উদাহরণ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষ কবলিত ওই দেশটিতে শ্লোগান উঠেছিল, ‘পঙ্গপাল খেয়ে ফেল, ওরা ফসল খাওয়ার আগে’।
তারা দুজনে মিলে পাকিস্তানের জনসংখ্যাবহুল প্রত্যন্ত গ্রাম ওকারা জেলাতে তিনদিনের পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেন। প্রকল্পটি ছিল দেপালপুরে পেপলি পাহার বনে। সেখানে গত ফেব্রুয়ারি থেকেই বিপুল সংখ্যক পরিপক্ক পঙ্গপাল আসতে থাকে। আর ওই বন নির্বাচন করা হয়েছে কারণ ওখানে পঙ্গপালের ওপর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। এরপর একটি শ্লোগান ছড়িয়ে দেন তারা, ‘পঙ্গপাল ধর, আয় কর এবং ফসল বাঁচাও’। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রতি কেজি পঙ্গপালের বিনিময়ে ২০ পাকিস্তানি রুপি করে দেয়া হয়।
খুরশিদ বলেন, ‘পঙ্গপাল সাধারণত দিনের আলোতে উড়ে বেড়ায়, রাতে ওরা গাছপালায় বা উন্মুক্ত ময়দানে বিশ্রাম নেয়। তখন একদম নড়াচড়া করে না। মৃতের মতো পড়ে থাকে। ওই সময় পঙ্গপাল ধরা অনেক সহজ। আমরা কৃষকদের সেই বুদ্ধি দিলাম। তাতেই কাজ হলো। কৃষকরা প্রথম রাতেই ৭ টন পঙ্গপাল ধরেছে। আমরা সেগুলো পার্শ্ববর্তী মুরগির খাবার তৈরির কারখানায় বিক্রি করেছি। ওই রাতে কাজ করে কোন কোন কৃষক ২০ হাজার রুপিও আয় করে।’
আলী বলেন, ‘প্রথম রাতে ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক কাজ করে। কিন্তু লোভনীয় এ আয়ের খবর চর্তূদিকে ছড়িয়ে পড়লে তৃতীয় রাতে কয়েকশ কৃষক জড়ো হয়। তারা নিজেরাই থলে নিয়ে আসে এবং সারারাত পঙ্গপাল ধরে থলে ভর্তি করে ফেলে। আমরাও তাদের বিনিময় দিয়ে দিলাম।’
পাকিস্তানে মুরগির খাবার তৈরির প্রতিষ্ঠান হাই-টেক ফিডসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতাহার বলেন, ‘পঙ্গপাল যদি কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই ধরা যায় তবে এটি অত্যন্ত উচ্চপ্রোটিন যুক্ত খাবারে পরিণত হয়। এ খাবার হাস-মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে সয়াবিন আমদানি করে প্রাণীর খাবার তৈরি করি, তাতে প্রোটিন ৪৫ শতাংশ, আর পঙ্গপালে আছে ৭০ শতাংশ।পঙ্গপালে আমাদের খরচও পড়ে অনেক কম।’
প্রকল্পের এ সাফল্যে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালেও সাময়িক স্থগিত রাখতে হয় করোনা মহামারির কারণে। আলি বলেন, ‘এখন লকডাউন শিথিল হয়েছে, আমরা প্রকল্পটি আবার শুরু করব। গ্রামে কাজহীন বহুমানুষ আছে, আমরা তাদের আয়ের জন্য এ সুযোগ কাজে লাগাব।’
সূত্র: সামাটিভি
ও কালের কণ্ঠ
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮জুন২০