পাট কাটাঃ সাধারণত ভালো ফলন ও উন্নত মানের আঁশের জন্য ক্ষেতের শতকরা প্রায় পঞ্চাশ ভাগ গাছে ফুলের কুঁড়ি দেখা দিলে (সাধারণত ১১০-১২০ দিনে প্রায় ৫০% গাছে ফুল আসে) পাট কাটা উচিত। উল্লেখিত সময়ের পূর্বে পাট কাটলে আঁশের মান ভালো থাকে, কিন্তু ফলন কম হয়। আবার দেরিতে কাটলে ফলন বেশি হয় কিন্তু আঁশের মান খুব খারাপ হয়।
সংগ্রহত্তোর কার্যাবলিঃ পাট কাটার পর ছোট-চিকন ও মোটা পাটগুলো আলাদা আলাদা আঁটি বেঁধে পাতা ঝরানোর জন্যে পাতার অংশ খড়-কুটা দিয়ে ৭২ ঘন্টা (৩ দিন) ঢেকে রাখলে পাতা ঝরে যায়। অতঃপর আঁটিগুলোর গোড়া ৭০-৯০ ঘন্টা (৩-৪ দিন) পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জাগ তৈরিকরণঃ পরিস্কার ও অল্প স্রোত আছে এমন পানিতে জাগ দিতে হবে। জাগের আকার যদি চৌকাকার বা আয়তাকার হয় তবে প্রথমে নির্দিষ্ট মাপ মোতাবেক এক স্তর আটি পাশাপাশি গোড়া-মাথা করে বিছানো ও বাঁধা হয়। প্রথম স্তর আঁটি সাজানোর পর আড়াআড়ি ভাবে দ্বিতীয় স্তর আঁটি ১ম স্তরের নিয়মে সাজানো ও বাঁধা হয়। বদ্ধ পানিতে পাট পঁচালে প্রতি ১০০ আঁটি পাটের জন্য ১ কেজি ইউরিয়া সার সরাসরি জাগের আঁটির সারিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। এতে পাট তাড়াতাড়ি পঁচে এবং আঁশের মান ভালো হয়।
জাগ ডুবানোঃ জাগ এমন ভাবে ডুবাতে হবে যেন জাগের উপর ৩-৪ ইঞ্চি এবং নীচে কমপক্ষে ২০-২৫ ইঞ্চি পানি থাকে। জাগের উপর কচুরীপানা বা খড়-কুটা বিছিয়ে তার উপর পাথর বা কংক্রিটের চৌকা চাকতি দিয়ে অথবা খুঁটির সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে জাগ ডুবানো উচিত। জাগ ডুবানোর জন্য কখনও জাগের উপর মাটির চাক বা কলাগাছ বা কাঠের গুঁড়ি দেয়া উচিত নয়। কারণ তাতে আঁশের বর্ণ কালচে হয়ে যেতে পারে।
পচন বুঝার উপায়ঃ জাগ দেয়ার ৮-১০ দিন পর থেকেই পচন পরীক্ষা করা উচিত। পচন পরীক্ষার জন্য ২-৩ টি পাট জাগের আঁটি থেকে বের করে তার মধ্যাংশ থেকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ছাল কেটে একটি ছোট শিশির ভিতর পানি দিয়ে ঝাঁকানোর পর শিশির পানি ফেলে আবার পরিস্কার পানি দিয়ে ঝাঁকিয়ে য়দি দেখা যায় যে, আঁশগুলো বেশ পৃথক হয়ে গেছে, তখন বুঝতে হবে জাগের পচন শেষ হয়েছে। তাছাড়া ২/৩ টা পচনশীল পাট গাছের ছাল ধুয়ে পরীক্ষা করেও দেখা যেতে পারে।
ছাল পচানো পদ্ধতিঃ পানি অঞ্চলে, অর্থাৎ যেখানে পাট পঁচানোর জন্য যথেষ্ট পানি পাওয়া যায় না সেখানে কাঁচা অবস্থাতেই পাট থেকে ছাল ছড়িয়ে নিয়ে সেই ছাল অল্প পানিতে পচানো যেতে পারে। পাটের ছাল পঁচানোর নতুন বা রিবন পদ্ধতির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো-
পাট থেকে পাতা ঝরানোর পর কাঠের হাতুড়ির সাহায্যে গাছের গোড়া কিছু থেঁতলে নিতে হয়। এরপর মাথা চেঁছে ইংরেজী ইউ অক্ষরের মত তৈরি করে একটি বাঁশ মাটিতে পুঁতে নিতে হয়। তারপর তিনটি পাট-কাঠি ইউ এর মধ্যে রেখে ছাল দু’দিক থেকে টান দিলেই কাঠি থেকে পাট ছাল সহজে পৃথক হয়ে আসে। পরে কয়েকটি গাছের ছাল একত্রে আঁটি বেঁধে একটি বড় চাড়ির মধ্যে রেখে পঁচানো হয়। একেক চাড়িতে প্রায় ৩০ কেজি পরিমাণ ছাল পঁচানো যায়।
আঁশ ছাড়ানো ও পরিষ্কারকরণঃ পচন শেষ হলে পাট গাছ থেকে দুই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানো যায়ঃ
ক) শুকনা জায়গায় বসে একটা একটা করে আঁশ পৃথক করে পরে কয়েকটি গাছের আঁশ একত্রে ধৌত করা যায়। এই পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ালে আঁশের মান ভালো হয় এবং প্রতিটি পাট কাঠি আস্ত থাকে।
খ) হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে পঁচানো আঁটি থেকে কয়েকটি গাছের গোড়া বের করে একটা কাঠের মুগুড় দ্বারা পিটানোর পর গোড়ার দিক থেকে প্রায় ২০ ইঞ্চি পরিমাণ দূরে ভেংগে কয়েকটি ঝাঁকি দিলেই ভাংগা অংশ থেকে পাট কাঠি আলাদা হয়ে যায়। এরপর পৃথক হওয়া আঁশটুকু হাতে জড়িয়ে বাকি অংশ পানিতে সমান্তরাল রেখে ৪-৫ বার সম্মুখ-পিছনে ঝাকি দিলেই আঁশ পৃথক হয়ে আসে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যে প্রকারেই আঁশ ছাড়ানো হোক না কেন, আঁশ ছাড়ানোর সময় গাছের গোড়ার অংশের পঁচা ছাল দিয়ে ঘষে মুছে ফেলতে হবে এবং আঁশ ছাড়ানোর পর প্রত্যেকটি গাছের আঁশের গোড়া সমান করে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
আঁশ শুকনো বাঁশের আড়ায় ঝুলিয়ে আঁশ শুকানো উচিত। আঁশ কখনো মাটিতে বিছিয়ে শুকানো উচিত নয়। শুকানোর পর আঁশ একত্রে বেঁধে গুছিয়ে গুদামে বিক্রির জন্য রাখা হয়। ভিজা অবস্থায় আঁশ কখনো গুদামে রাখা উচিত নয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮জুন২০