পেঁপে (Papaya) বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত পেঁপের বংশবিস্তার বীজের মাধ্যমে করা হয় কিন্তু বীজের মাধ্যমে মাতৃগাছের গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা পাওয়া যায় না। আবার হাইব্রিড চারা গাছের বীজ থেকেও গাছ করা যায় না। সম্পূর্ণ মাতৃগাছের গুণাগুণ সমৃদ্ধ চারা করার লক্ষ্যে পেঁপেতে গুটি কলম তৈরির জন্য চেষ্টা করে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের হর্টিকালচার সেন্টার, হাটহাটজারীর উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ মো. আল মামুন শিকদার। সম্প্রতি এ বিষয়ে তাঁর কার্যালয়ে বিস্তারিত আলাপকালে তিনি জানান এরই মধ্যে মাতৃগাছ থেকে ২য় কলম সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে। প্রচলিত গুটি কলমের মতো না করে একটু ভিন্নভাবে পেঁপেতে গুটি কলম করতে হয়। জনাব আল মামুন শিকদার পেঁপেতে গুটি কলম তৈরির যে ধাপগুলো অনুসরণ করেছেন তা হলো-
উপকরণ- ১. নারিকেলের ছোবড়া (রুটিং মিডিয়া); ২. প্লাস্টিক প্যাকেট; ৩. প্লাস্টিক সুতা; ৪. কাঠি/বাঁশের অংশ; ৫. পেঁপে গাছের শাখা।
গুটি কলম করার ধাপ
প্রথমে মাতৃগাছ নির্বাচন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগমুক্ত, সুমিষ্ট এবং উচ্চফলনশীল জাতের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নির্বাচিত মাতৃগাছে অবশ্যই প্বার্শশাখা তৈরি করে নিতে হবে। গাছটির প্রধান শাখাকে কেটে দিলে অনেক পার্শ্বশাখা উৎপন্ন হবে।
নির্বাচিত পার্শ্বশাখার ঠিক মাঝামাঝি স্থান নির্ধারণ করা এবং নিচ থেকে ওপরের দিক বরাবর ৪৫ ডিগ্রি বাঁকা করে প্বার্শশাখার ১/৩ অংশ ধারালো চাকু দিয়ে কাটতে হবে। বাকি অংশ গাছের সাথে সংযুক্ত থাকবে।
চাকু দিয়ে কেটে ফেলা ১/৩ অংশকে কাঠি/বাঁশের টুকরো দিয়ে ফাঁকা করে রাখতে হবে যেন কাঁটা অংশ পুনরায় একসাথে লেগে না যায়।
কাঁটা অংশটির চারদিকে খুব সাবধানে রুটিং মিডিয়াকে স্থাপন করতে হবে। রুটিং মিডিয়া হিসেবে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করতে হবে। রুটিং মিডিয়াটি ভালোভাবে বেঁধে
পলিথিনে মুড়িয়ে বেঁধে দিতে হবে।
রুটিং মিডিয়াটি যেন শুকিয়ে না যায় এজন্য মাঝে মাঝে পরিমাণমতো ছত্রাকনাশক মিশ্রিত পানি প্রয়োগ করতে হবে।
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হলে ৩০ দিনের মধ্যে মিডিয়াতে শিকড়ের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে।
শিকড়ের রঙ গাঢ় খয়েরি হলে ধারালো ছুরি দিয়ে কাক্সিক্ষত প্বার্শশাখাটিকে শিকড়সহ কেটে ফেলতে হবে। নির্ধারিত (উঁচু ও রৌদ্রময়) জায়গায় গর্ত করে মাটি শোধনপূর্বক কলমটিকে রোপণ করতে হবে।
রোপণের সময় মনে রাখতে হবে যেন শাখাটিতে বেশি পাতা, ফুল বা ফল না থাকে। থাকলে সেগুলো সাবধানে কেটে ফেলতে হবে।
সদ্য রোপণকৃত গাছটিতে খুঁটি দেয়াসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে যাতে অতিরিক্ত বাতাস, ঝড় এবং বৃষ্টির পানি জমে চারার কোনো ক্ষতি না করতে পারে।
সময়মতো আগাছা পরিষ্কার, মালচিং, সার প্রদান ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পরবর্তীতে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসা শুরু করে এবং কাঙ্খিত ফল সংগ্রহ করা যায়। গাছের আকারও বেশ খাটো হয়।
কৃষিবিদ আবু কাউসার মো. সারোয়ার
আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, চট্টগ্রাম
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০জুন২০