সর্জান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে প্রথমে জমি থেকে মাটি কেটে দুই পাশে উঁচু আইল ও নিচে নালা তৈরি করতে হয়। এরপর আইলের উপর জৈব সার দিয়ে করলা, শসা, শিম, বরবটিসহ নানা রকম সবজি চাষ করা যায়।
এই পদ্ধতিতে একই সময় নালাতে তেলাপিয়া, রুই, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। ফলে বর্ষাকালে যখন চারদিক পানিতে তলিয়ে যায় তখনও সবজি ক্ষেতগুলো অক্ষত থাকে। আবার শুষ্ক মৌসুমে যখন চারদিকে পানি থাকে না তখন নালা থেকে পানি উঠিয়ে সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এতে সবজির ফলন ভালো হয়। সর্জান পদ্ধতিতে একই জমিতে একসাথে সবজি ও মাছ চাষ করে বর্তমানে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নোয়াখালীর উপকূলীয় চরাঞ্চলের ২ উপজেলার হাতিয়া ও সুবর্ণচরের কথা যেখানে বছরের ৬ মাস শুষ্কতা ও লবণাক্ততা এবং বাকি ৬ মাস জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার একর জমি একটা সময় অনাবাদি পড়ে থাকতো। তবে গত কয়েক বছর থেকে এসব জমিতে স্থানীয় কৃষকরা সর্জান পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করে ধান চাষের চেয়ে অধিক লাভবান হচ্ছেন।
সর্জান পদ্ধতি:
অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে পাট, ধৈঞ্চা, ডিপ ওয়াটার আমন ফসল ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় না সেখানে বিভিন্ন মাপের উঁচু বেড-বাঁধ তৈরি করে নিয়ে তাতে ফল চাষ উপযোগী করা হয়। দুইটি বেডের মধ্যভাগের মাটি খুঁড়ে বেডের দুই ধারে উঠিয়ে দিয়ে বেডগুলোকে সরেজমিন থেকে উঁচু করে নিয়ে বেড-বাঁধ ও নালা পদ্ধতির মাধ্যমে ফল-সবজি আবাদ করার এ পদ্ধতি সর্জান নামে পরিচিত। জমির অবস্থান এবং সেখানে কি ফসল চাষ করা হবে, স্থানভেদে ও এলাকার চাষির পছন্দ বিবেচনায় বেডের চওড়া ও নালার গভীরতা ঠিক করে নেওয়া হয়। ভূমির অবস্থা অনুসারে এ বেড লম্বায় ২০ ফুট থেকে ২০০-৩০০ ফুট পর্যন্ত করা যায়।
এলাকার অবস্থা ও জমির আকার আকৃতি বুঝে এ পদ্ধতির জন্য বেডের বা বাঁধের উচ্চতা ও চওড়া ঠিক করা হয়। দুইটি বেডের মধ্যবর্তী নালার চওড়া ও গভীরতা সেভাবে চূড়ান্ত করা হয়। নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে যেসব অংশে কেবল মৌসুমি সবজি আবাদ করা হয় সেখানে ২-৩ ফুট চওড়া বেড এবং চওড়ায় ও গভীরতায় ২-৩ ফুট দেওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব উপকূলীয় এলাকায় যেখানে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে সেখানে এ মডেলের বিভিন্ন সংস্কার অবলম্বনে ফল-সবজি চাষ অতি জনপ্রিয়। নালা জোয়ারের পানিতে ভরে গেলে, এমনকি কয়েক ঘণ্টা তলিয়ে গেলেও আবাদকৃত নির্বাচিত ফল-সবজির তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বিশেষ করে নারিকেল গাছ এ ধরনের পরিস্থিতিতে খুব সহজেই বেড়ে উঠে, প্রচুর ফল দানে সক্ষম হয়। নালায় পানি থাকায় বেডে রোপিত গাছগুলোতে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। গাছগুলো নালার পানি পরোক্ষভাবে শুষে এবং ভালোভাবে বেড়ে উঠে এবং প্রচুর ফল দানে সক্ষম হয়।
সম্ভাবনাঃ কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ বিস্তরভাবে ছড়িয়ে পড়লে প্রতি বছর চাষাবাদের জমির পরিমাণ ও কৃষকের সংখ্যা বাড়বে। যার ফলে কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, পাবনা জেলার নিচু জমিতে ও চর-হাওরে এ পদ্ধতি অবলম্বনে সফলভাবে ফল-সবজি ও মাছ চাষ করার সুযোগ আছে।