সারা দেশে পানির অভাবে চাষিরা পাট পচাতে পারছেন না। যেসব অঞ্চলে পাট কাটার সময় পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি থাকে না সেসব অঞ্চলে অপর্যাপ্ত পানি থাকলে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানো যায়। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট রিবন রেটিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। আমাদের দেশে পাট পচানোর সময় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে খাল-বিলে পাট পচানোর মতো পর্যাপ্ত পানি না থাকায় অল্প পানি দিয়ে পাটের ছাল পচানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় রিবন রেটিং খুব উপযোগী। পাটের ছাল ছাড়ানো সহজ ও খরচ কম। তা পরিবেশসম্মত। পাটের আঁশের গুণাগুণনির্ভর করে পাট পচানোর ওপর। আঁশের গুণাগুণের ওপর দামনির্ভর করে।
ছাল ছাড়ানোর পদ্ধতি: প্রথমে ৬ ফুট এক খন্ড বরাক বাঁশ নিয়ে যে কোনো এক প্রান্ত আড়াআড়িভাবে কাটতে হবে, যেন বাঁশের প্রান্তটি দুদিক ফলকের মতো দেখায়। অথবা ইংরেজি ট আকৃতির রিবনারকে শক্তভাবে বাঁশের দুই প্রান্তের সঙ্গে বেঁধে নিতে হবে। রিবনার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। বাঁশের খন্ডটির গোড়ার কিছু অংশ মাটির মধ্যে শক্ত করে পুঁতে দিতে হবে। পাশাপাশি ৩-৪ ফুট দূরে দূরে প্রয়োজন মতো এমন বেশ কয়েকটি বাঁশের হুক তৈরি করা বা রিবনার বেঁধে যেতে পারে।
এবার ওই বাঁশের হুকগুলোর বা রিবনারের সঙ্গে একটি মুরুলী বাঁশ দিয়ে আড়া বাঁধতে হবে। যার ওপর পাটগাছ জমি থেকে কেটে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। পাটগাছগুলো বাঁশের আড়ার ওপর দাঁড় করানোর আগে গাছের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি একটি শক্ত কাঠের হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে দিতে হবে। প্রতিটি গাছের গোড়ার থেঁতলানো ছালগুলো হাত দিয়ে দুই ভাগ করে গাছের গোঁড়া হুকের মধ্যে রাখতে হয়। মেঘ-বৃষ্টির দিন ছাল ছাড়ানো ভালো।
গোড়ার ছালের দুই ভাগ দুই হাতে ধরে জোরে টান দিতে হয়। দেখা যাবে পাটের ছালগুলো সহজেই খড়ি থেকে আলাদা হয়ে গেছে। পাটখড়ি সামনের দিকে এভাবে চলে গেছে। ৩-৪টি পাটগাছের ছাল একসঙ্গে বের করা সম্ভব। একইভাবে সিঙ্গেল রোলার ও ডাবল রোলার রিবনারের সাহায্যেও পাটের রিবনিং করা যেতে পারে। ছাল পচানোর পদ্ধতি ঃ তিন পদ্ধতিতে ছাল পচানো যায়- বড় মাটির চাড়িতে ছালগুলোকে গোলাকার মোড়া বেঁধে সাজিয়ে পরিষ্কার পানি দিয়ে চাড়িটি ভরে দিতে হয়। একটি বড় চাড়িতে প্রায় ২৮ কেজি ছাল পচানো সম্ভব।
পাট ক্ষেতের পাশে ১৮ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট প্রস্থ ৩ ফুট গভীর গর্ত করে গর্তটি পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তবে পলিথিন কাগজের পরিমাপ অনুসারে গর্ত ছোট বা বড় করা যেতে পারে। পরে যে কোনো স্থান থেকে পরিষ্কার পানি দিয়ে গর্তটি ভরে ছালগুলো সহজেই সেখানে পচানো যায়। কম সময়ে ছাল পচানোর পদ্ধতি ঃ পচন সময় দুভাবে কমানো যায়। যেমন- ১০০০ কেজি কাঁচা ছালের জন্য ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে খুব কম সময়ের মধ্যে পচন সম্পন্ন হয়। একটা ছোট হাঁড়িতে দুই একটা পাটগাছ ছোট ছোট টুকরা করে পচিয়ে নিতে হবে এবং ওই হাঁড়ির পানি পরে ছাল পচানোর সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতেও পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪জুলাই২০