সবার পক্ষে অধিক পুজি খাটিয়ে বড় পরিসরে গরুর খামার গড়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই দেশী জাতের গরু দিয়ে কিভাবে লাভজনক খামার ব্যবসা আপনি অল্প পুঁজি দিয়ে করতে পারেন সেই ব্যপারে আজকে একটু আলোচনা করবো। অনেক নতুন এবং তরুণ উদ্যোক্তা আছেন যারা গরু পালনে খুব উৎসাহী এবং গরুর খামার ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তাদের জন্য এই প্রকল্পটি হতে পারে প্রারম্ভিক অথবা বিশেষায়িত লাভজনক একটি প্রকল্প! তবে গ্রামে যাদের কৃষি জমি আছে এবং যারা যথেষ্ট কাঁচা ঘাসের জোগান দিতে পারবেন গরুকে তারা এই প্রকল্পটি চোখ বন্ধ করে হাতে নিতে পারেন।
এই জন্য আপনাকে প্রথমে ৪/৫ টি দেশী গাভী কিনতে হবে যেগুলি ৩/৪ লিটার দুধ দেয় এবং তাদের ক্রয়মূল্য হবে সর্বোচ্চ ৩৫-৪৫ হাজারের মধ্যে। গাভীগুলি ২/৪/৬ দাঁত এই বয়সের হতে হবে। একটি সাদামাটা কিন্তু মজবুত গোয়ালঘর বা শেড তৈরী করতে হবে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এবং এই টাকায় ৪/৫ টা দেশী গাভী রাখা যায় এমন শেড অনায়াসেই করা যায়।
দেশী গাভী গুলি যাতে বছর বিয়ানো হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। এই জাতীয় গাভীর দৈনিক সর্বোচ্চ দুই কেজি দানাদার খাদ্য লাগতে পারে। কোনোটা হয়তো একটু কম খাবে কোনোটা হয়তো একটু বেশী। তবে এদের পর্যাপ্ত ঘাস আর খড় দিতে হবে যেগুলি শ্রম আর কৃষিজ ফসল থেকেই পাওয়া যাবে অথবা ১ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে নেওয়া যেতে পারে! এখন আসা যাক আপনার পুঁজি কত হবে এই ব্যাপারে।
নীচে একটা হিসাব দিচ্ছি
*৪ টা বাছুর সহ দেশী গাভীর ক্রয়মূল্য
৪x ৪৫০০০=১৮০০০০/- টাকা।
*১ টা গোয়ালঘর তৈরির খরচ
৫০০০০/- টাকা।
গরুর খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধপাতি এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ
২০০০০/-টাকা।
মোট পুঁজি ২৫০০০০/- টাকা।
এবার আসা যাক আয় কত হবে সেই হিসাবে,
৪ টা গরু গড়ে ৩ লিটার দুধ দিবে এই হিসাবে মোট ১২ লিটার দুধ দিবে।
১২ লিটার দুধের বিক্রয় মূল্য প্রতি লিটার ৪০ টাকা হিসাবে,
১২x৪০= ৪৮০ টাকা।
তাহলে দৈনিক আয় হচ্ছে ৪৮০/- টাকা।
এবার আসা যাক ব্যয়ের হিসাবে,
৪ টি গাভীর জন্য ৮ কেজি দানাদার খাদ্য লাগবে যার প্রতি কেজির মূল্য ২৫/- টাকা হিসাবে, ৮ x২৫= ২০০ টাকা।
দুধ দোওয়ানোর জন্য গোয়ালার পারিশ্রমিক দৈনিক ৭০ টাকা।
তাহলে মোট ব্যয় দাঁড়ায়, ২০০+৭০ = ২৭০ টাকা।
৪ টা গাভীর জন্য আপনি নিজেই যথেষ্ট সেগুলির দেখভাল করার জন্য!
তাহলে প্রতিদিন আপনার নিট আয় হচ্ছে, ৪৮০-২৭০= ২১০/-টাকা।
এর মানে দাঁড়ায় আপনি মাসে অন্তত ৬৩০০/- টাকা নিট আয় করতে পারবেন।
সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আপনার এই রকম আয় অন্তত তিন মাস পাবেন। গাভী সঠিক সময়ে যদি গরম হয় তাহলে বাছুরের বয়স দুইমাস সময়ের মধ্যেই গাভী আবার গাভীন হবে। অতিরিক্ত হলে তিন মাস। আপনি প্রতিমাসের আয়ের অর্ধেকই রেখে দিবেন ড্রাই পিরিওডে গাভীর খাদ্য খরচ যোগান দেওয়ার জন্য।
আর গাভীকে যেই বীজ দিবেন সেইগুলি হতে পারে ১০০% শাহীওয়াল,১০০% ব্রাহমা এবং আকারে একটু বড় গাভীকে শাহীওয়াল-ফ্রিজিয়ান সিমেন। একবছর গাভী থেকে আয় দিয়েই যদি আপনি খামার চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তাহলে বছর শেষে বাছুর বিক্রি করেই আপনি পুঁজির একটা বড় অংশ তুলে আনতে পারেন বা আপনার খামারটিকে আরো সম্প্রসারণ করতে পারেন।
গ্রাম কেন্দ্রিক নতুন গরুর খামার যারা করতে চান তারা যদি এভাবে শুরু করেন তাহলে তাদের শতভাগ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ খামারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে কেউ রুখতে পারবেনা এটা নিশ্চিত!
আমার দেওয়া হিসাব গুলিতে কিছু কম বেশী থাকতে পারে,কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত। পোস্টটি পড়ে অনেকে হয়তো আমার থেকে ভালো কিছু দিক নির্দেশনা দিতে পারেন। কমেন্টে সেইগুলি আলোচনা করলে পোস্টটি আরো সম্বৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে!
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৫জুলাই২০