মুরগি খামার গড়ার আগে ভাবুন স্থান নির্বাচনের কথা। কারন স্থান নির্বাচন মুরগীর খামার গড়ার পূর্ব সরশর্ত মুরগির খামার স্থাপনের ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমুহঃ-
◗ মুরগি খামার তৈরির জন্য নির্বাচিত স্থান বড় রাস্তা থেকে একটু দূরে হতে হবে।
◗ লোকালয় বা আবাসিক ঘন বসতি এলাকা হতে দূরে।
◗ অন্য মুরগি খামার বা প্রানীর ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে হতে হবে।
◗ পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত খোলামেলা পরিবেশ হতে হবে।
◗ শব্দ সৃষ্টিকারী ও দুষিত গ্যাস বা বর্জ্য নির্গমনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে হতে হবে।
◗ বন্যামুক্ত উঁচু জায়গায় যার আশেপাশে পানি থাকে না এমন স্থান।
◗ বসতবাড়ি, গোয়ালঘর ও আবর্জনার স্তুপ থেকে দূরে।
◗ ঝোপঝাড় নেই কিন্তু বড় গাছপালা আছে এমন স্থানে।
◗ যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে।
◗ যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
◗ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
◗ বাজারজাতকরনের সুবিধা থাকতে হবে।
◗ মুরগির বাচ্চা ও মুরগী পালনের কাঁচামালের সহজ লভ্যতা থাকতে হবে।
মুরগি পালন পদ্ধতিঃ-
◉ মুরগি আবদ্ধ অবস্থায় তিন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। যথাঃ-
ক) লিটার পদ্ধতি
খ) মাচা পদ্ধতি
গ) খাঁচা পদ্ধতি
লিটারে মুরগি পালন পদ্ধতিঃ-
◗ লিটার পদ্ধতিতে মুরগির ঘরের মেঝেতে লিটার বিছিয়ে পালন করা হয়।
◗ কাঠের গুড়া বা ধানের তুষ দিয়ে বা এ দু’টো এক সাথে মিশিয়ে লিটার হিসেবে, ব্যবহার করা হয়।
◗ ঋতু ভেদে ও ধরন অনুযায়ী লিটারের পুরুত্ব ১.৫-৩.০ ইঞ্চি হওয়া উচিৎ ।
◗ লিটার সব সময় শুকনো রাখতে হবে, তবে ধুলা উড়ে এমন শুকনো যেন না হয়। শীতকালে লিটার বেশি শুকনো হলে (এতে ধুলা হয়) পানি স্প্রে করতে হবে।
◗ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি হলে শেডের মধ্যে পাথর চুন পাত্রের মধ্যে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
◗ পানির পাত্র ছিদ্রহীন হতে হবে এবং এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন পানি পড়ে লিটার ভিজে না যায়।
◗ ১৫ দিন অন্তর প্রতি ১০০ কেজিতে ১-২ কেজি গুঁড়া চুন মিশিয়ে লিটার শুকনা রাখতে হবে।
◗ লিটার প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে উল্টিয়ে দিতে পারলে ভাল এবং কেকের মত আকার ধারন করলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
◗ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার লিটারে জীবানুনাশক স্প্রে ক রতে হবে।
◗ লিটার দলা পাকিয়ে গেলে সেগুলো ফেলে দিতে হবে।
◗ মোরগ-মুরগির ঝরে যাওয়া পালক লিটার থেকে ফেলে দিতে হবে।
◗ এক ব্যাচে ব্যবহৃত লিটার অন্য ব্যাচে ব্যবহার করা উচিৎ নয়
মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন পদ্ধতিঃ-
১) যে সব এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে বা মাটি অধিক আদ্র থাকে সেই সব এলাকাতে মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা উচিৎ।
২) বাঁশ বা কাঠ দিয়ে সহজেই মাঁচা তৈরি করা যায়।
৩) মাঁচার বাঁশ বা কাঠের বাতা ১ ইঞ্চি ১-২ সেঃ মিঃ করে ফাকা রাখা হয় যাতে মুরগির বিষ্টা সহজেই নিচে পড়ে যেতে পারে।
৪) মাঁচার উচ্চতা মাটি থেকে ২.৫-৩.০ ফুট হতে হবে যাতে করে মাঁচার নীচ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়ে মুরগির বিষ্টা শুকাতে পারে।
৫) মাঁচা পদ্ধতিতে উলম্ব এবং আড়াআড়ি বাতাস প্রবাহের কারনে ঘরে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় থাকে এবং মুরগি আরাম বোধ করে।
৬) মাঁচা পদ্ধতিতে লিটার দ্রব্যের দরকার হয় না এবং রোগ ব্যাধিও কম হয়।
৭) মাঁচা সপ্তাহে অন্তত একবার পরিষ্কার করে জীবানুনাশক দিয়ে মুছে দিতে হবে।
৮) মাঁচায় ময়লা কোন আধা ধারালো জিনিশ দিয়ে চেঁছে ফেলে দিতে হবে।
৯) মাঁচার নিচে মেঝে পাকা করা উচিৎ, এতে লিটার সরানো সুবিধাজনক এবং পোকা কম হয়।
১০) মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে মাঁচার নীচের বর্জ্য পদার্থ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং চুন ছিটিয়ে দিয়ে মাটি জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১১) ৫০০ মুরগি পালনের জন্য উপযোগী ঘরের মাঁচার নীচে ৩০-৩৫ কেজি চুন ছিটিয়ে জীবানুমুক্ত করতে হবে।
বাঁশের তৈরি ব্রয়লার এর ঘরঃ-
প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ৫০০ ব্রয়লারের জন্য (৩৩.৫+৪.৫)X১৫=৫৭০ বর্গফুট জায়গা যথেষ্ট। ৩৩.৫X১৫=৫০২.৫ বর্গফুট জায়গা ব্রয়লারের জন্য এবং ৪.৫X১৫=৬৭.৫ বর্গফুট সার্ভিস কক্ষ। ঘরের সার্ভিস কক্ষ ছাড়া তিন দিকে বাঁশের বাতা বা তার জালির বেড়া থাকবে যাতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করতে পারে। ঘর পূর্ব পশ্চিমে লম্বা হবে এবং ঘরের প শ্চিম প্রান্তে সার্ভিস কক্ষ থাকবে।
বাঁশ দিয়ে ঘর নির্মান করতে হলে বাঁশকে প্রথমে ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ঘুনে না ধরে। সে জন্য বাঁশ ১ সপ্তাহ ভাল ভাবে রৌদ্রে শুকাতে হবে। অতপরঃ ১ সপ্তাহ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর বাঁশগুলি পানি হতে তুলে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এভাবে বাঁশের ঘুনে ধরা রোধ করা যায় এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
মেঝে পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সুবিধাজনক বিষয়ঃ-
১) মেঝে পদ্ধতির প্রাথমিক ব্যয় কম।
২) বিভিন্ন প্রয়োজনে (প্রতিষেধক প্রদান) মুরগী ধরা সহজ।
৩) মুরগির Perch এ ঊঠার সুবিধা প্রদান করা যায়।
৪) মুরগির Collective feeding অভ্যাসকে বজায় রাখার ব্যবস্থা থাকে।
৫) দীর্ঘদিন পর লিটার পরিষ্কার করা হয় বিধায় শ্রমিকের সাশ্রয় হয়।
৬) মুরগি পর্যবেক্ষন করতে সুবিধা হয়।
মেঝে পদ্ধতিতে মুরগি পালনের অসুবিধজনক বিষয়ঃ-
১) রোগ জীবানুর সংস্পর্শে আসার আশংকা বেশি।
২) লিটারে এমোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে।
৩) লিটারে ধুলাবালি থেকে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
৪) মুরগির ঘরের যন্ত্রপাতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে শ্রমিক ব্যয় বেশি হয়।
৫) খাদ্য ও পানি প্রদানে বেশি সময় লাগে।
৬) খুব বেশি (১০০০) সংখ্যক মুরগি একই মেঝেতে রাখলে ঠুকরা ঠুকরির অভ্যাস হতে পারে।
মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সুবিধাজনক বিষয়ঃ–
১) মেঝের সংস্পর্শে আসে না বলে মুরগির রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।
২) মুরগি অধিক আলো বাতাস পায়।
৩) মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগিকে Perch দেয়া যায়।
৪) Collective feeding বজায় রাখা স ম্ভব।
মাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালনের অসুবিধজনক বিষয়ঃ-
১) প্রাথমিক ব্যয় মেঝে পদ্ধতির চেয়ে বেশি।
২) বিষ্ঠা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে মশা-মাছি ও পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হয়।
৩) খাদ্য ও পানি প্রদানে অধিক সময় লাগে।
৪) মাঁচা মজবুত না হলে মাঁচার উপর স্বাচ্ছন্দে হাঁটা চলা করা যায় না।
তথ্যসূত্রঃ কৃষি সংবাদ
ফার্মসএন্ডফার্মার/১২আগস্ট২০