–
ঝিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। তবে এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষা উভয় মৌসুমে চাষ করা হয়। ঝিংগায় প্রচুর পরিমান ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় সব এলাকাতেই ঝিঙার চাষ করা হয়। ঝিঙা চাষের সুবিধা হচ্ছে যে কোন মাটিতে ঝিঙার চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই ঝিঙা চাষ করার পদ্ধতি।
ঝিঙা চাষ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জলবায়ু মাটি
ঝিঙার বাড়বাড়তি ও ভালো ফলনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার হয় সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ঝিঙ্গার সফল চাষের জন্য উত্তম। বীজ গজানো ও গাছের বৃদ্ধির জন্য গরম আবহাওয়ার দরকার হয়। ঝিঙা চাষের জন্য তাই সারা দিন রোদ পড়ে ও খোলামেলা এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
ঝিঙা এর উল্লেখযোগ্য জাত
আমাদের দেশে বর্তমানে দুই ধরণের ঝিঙা চাষ করা হয়। ১। দেশি ঝিঙা, ২। হাইব্রিড জাত। দেশী জাতের ঝিঙা আকারে ছোট, দ্রুত আশ হয়ে যায়, স্বাদে কিছুটা তিক্ত এবং ফলন কম। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের ঝিঙা আকারে বড় লম্বা, সুস্বাদু এবং বীজ নরম ও রসালো। তাই বর্তমানে আমাদের দেশের চাষিরা হাইব্রিড জাতের ঝিঙা চাষ করার প্রতি বেশি আগ্রহী। বাজারে এখন হাইব্রিড জাতের অনেক ঝিঙা পাওয়া যায়, তাঁর মধ্যে রয়েছে- গ্রিন স্টার, বসন্তী, সামিহা, ডায়েট, অনামিকা, মাওতি, লুফা ৩৫, রিজ লং, দোদুল, হিরো, হারকুলাস, টেস্টি, সাথী, ঈসা খাঁ, মূসা খাঁ, বলেশ্বর ইত্যাদি অন্যতম।
কিভাবে ঝিঙা এর চারা তৈরি করবেন
সরাসরি মাদায় বীজ বুনে ও চারা লাগিয়ে ঝিঙার চাষ করা যায়। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। তবে ঝিঙার চাষ করার ক্ষেত্রে আগে আলাদা করে চারা তৈরি করে নিতে হবে। পলিব্যাগে, কলার খোলে, বা বেড তৈরি করে চার তৈরি করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পলিব্যাগে চারা তৈরি করা নিরাপদ। অর্ধেক গোবর এবং অর্ধেক মাটি মিশিয়ে জো অবস্থায় সেই মাটি পলিব্যাগে ভরতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন পলিব্যাগ পুরোপুরি ভরা যাবেনা। অর্ধেক খালি রেখে বীজ রোপন করতে হবে। এরপর একটি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনতে হবে। পলিব্যাগের মাটির রস শুকিয়ে গেলে বা কমে গেলে ঝাঝরি দিয়ে সেচ দিতে হবে। বীজ বোনার আগে ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বা এক রাত পটাশিয়াম নাইট্রেট মাটির দ্রবণে ভিজিয়ে রাখলে বীজের খোসা নরম হয় ও ভালো গজায়।
ঝিঙা চাষে জমি তৈরি ও চারা রোপণ
যেসব জমি উঁচু ও বৃষ্টির পানি আটকে থাকে না এমন জমি প্রথমে আগাছা মুক্ত করতে হবে। এরপর ভালভাবে ৪ বার অথবা ৫ বার মই দিয়ে নিতে হবে। ঝিঙার চাষ করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করে এবং সেখানে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি নরম ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর মাটিতে ভালকরে জৈব সার মিশিয়ে দিয়ে মাদায় তৈরি করে বীজ রোপণ করতে হবে। প্রতিটি মাদাতে ৫-৬ টি বীজ লাগাতে হবে। কারণ সকল বীজ এক সাথে নাও গজাতে পারে। এই বীজ গজাতে ৫-৭ দিন লাগে। তার কিছু দিন পর ঝিঙা গাছের জন্য সুন্দর করে মাচা তৈরি করতে হবে।
সার প্রয়গ
প্রতি মাদায় নিম্নোক্ত সার প্রয়োগ করতে হবে-
গোবর সার- ৫ থেকে ১০ কেজি
ইউরিয়া- ৫০০ গ্রাম
টিএসপি- ৪০০ গ্রাম
এমওপি- ৩০০ গ্রাম
বোরণ- ২ গ্রাম।
সময়
ঝিঙার বীজ রোপণের উপযুক্ত সময় ফ্রেবুয়ারি মাস হতে মার্চ মাস পর্যন্ত।
রোগ-বালাই
ঝিঙা গাছের প্রধান শত্রু হচ্ছে বিটল পোকা। এছাড়াও গান্ধি পোকা পাতার রস চুষে খায় এবং পাতাকে রস শূণ্য করে। মাছিতে ফল নষ্ট করতে থাকে। তাই এসব ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় হতে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
ফল সংগ্রহ
গাছ লাগানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ঝিঙা সংগ্রহ করা যায়। ঝিঙা চাষ করে যেমন পরিবারের চাহিদা মেটানো যায় তেমনি বাজারে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪আগস্ট২০