উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তরিকুল ইসলাম। অভাবকে জয় করে সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই হাঁস পালন করছেন। নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার পাতাড়ি ইউনিয়নের শিমুলডাঙা গ্রামের যুবক তরিকুল এখন এলাকার আদর্শ।
জানা যায়, অভাবের সংসারে পরিবারের সদস্য বেশি হওয়ায় পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। একসময় এলাকায় দিনমজুরসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। এরপর ঋণ নিয়ে শ্যালোমেশিন চালিত ভটভটি কিনে চালানো শুরু করেন। ভটভটি চালানোর সুবাদে ব্যবসায়ীদের হাঁস বিভিন্ন জায়গায় আনা-নেওয়া করতেন। এতে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে হাঁস পালনের ধারণা পান। পরে ভটভটি বিক্রি করে ১৩শ টাকায় ১ হাজার পিস ক্যাম্বেল জাতীয় হাঁসের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে তিনি হাঁস পালন করছেন।
গত আড়াই মাস ধরে জেলার বদলগাছী উপজেলার আক্কেলপুর গ্রামের মাঠে অল্প পানিতে উন্মুক্তভাবে হাঁস পালন করছেন। উন্মুক্তভাবে হাঁস পালন করায় সারা বছরই তাকে এলাকার বাইরে থাকতে হয়। যখন যে মাঠ ফাঁকা থাকে; তখন সেই এলাকায় হাঁস নিয়ে যান। কারণ হাঁস বেঁধে রেখে পালন করা ব্যয়বহুল। এ কারণে উন্মুক্তভাবে পালন করেন তিনি।
বর্তমানে তার খামারে প্রায় দেড় হাজার পিস ক্যাম্বেল জাতীয় হাঁস আছে। ১০ দিন আগে দিনাজপুর জেলা থেকে ৫শ পিস হাঁস নিয়ে আসেন। যা কিছু দিনের মধ্যে ডিমে আসবে। তবে ১ হাজার হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৮শ পিস ডিম আসে। এরমধ্যে প্রায় ৬শ পিস ভালো বীজ ডিমের দাম ১ হাজার ২শ টাকা হিসেবে ৭ হাজার ২শ টাকা। একটু ভাঙা বা ফাটা জাতীয় ২শ পিস ডিম ৯শ টাকা দাম হিসেবে ১ হাজার ৮শ টাকায় বিক্রি হয়। যেখানে প্রতিদিন মোট বিক্রি হয় ৯ হাজার টাকা। আর প্রতিদিন হাঁসের খাবার ও শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা আয় হিসেবে মাসে আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা।
খামারি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারিনি। শুধু নামটাই লিখতে পারি। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১ জন। এক মেয়ে মানসুরার হাফেজি পড়া প্রায় শেষের দিকে। ছেলে জুনাইদের বয়স ৫ বছর। গত ১৫ বছরে হাঁস পালনের জীবনে নিজের নামে ২ বিঘা জমি কবলা করেছি। এ ছাড়া ইটের বাড়ি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘হাঁস পালন করা যেমন কষ্ট, তেমন টাকাও আছে। যেহেতু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। যে কারণে ডিমের উৎপাদন কম বেশি হয়ে থাকে। খাবার পেলে ডিমের উৎপাদন ভালো হয়। সারা বছরই বাড়ির বাইরে থাকতে হয়। উন্মুক্তভাবে ছেড়ে দিয়ে পালন না করলে খরচ বেশি হবে এবং রোগ-বালাই হবে। আমার দেখাদেখি এলাকার (শিমুলডাঙা গ্রাম) প্রায় শতাধিক মানুষ হাঁস পালন করছে।’
আক্কেলপুর গ্রামের অপর খামারি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। উল্টো ঋণের মধ্যে পড়তে হয়েছে। গত এক বছর আগে তরিকুল ইসলাম আমাদের গ্রামের মাঠে হাঁস নিয়ে আসার সুবাদে তার সাথে পরিচয় হয়। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে হাঁস পালন শুরু করি। আল্লাহর রহমতে এক বছরের মধ্যে হাঁস পালন করে ঋণ থেকে মুক্ত হয়েছি।’
খামারের নিয়মিত শ্রমিক এনামুল হক বলেন, ‘গত ৯ মাস ধরে এ খামারে কাজ করছি। প্রতিদিন তিন বেলা খাবারসহ পারিশ্রমিক পাই ৪শ টাকা। হাঁসকে নিয়মিত তদারকি ও খাবার দেওয়াই আমার কাজ। আমার মতো এ খামারে আরও তিন জন কাজ করে। বলতে গেলে সারা বছরই খামারে কাজ করতে পারি।’
সূত্র: জাগো নিউজ
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫আগস্ট২০