শিং দ্বারা গুতিয়ে খামারের পশু, অনেক সময় অন্য গবাদিপশু, মানুষ বা অন্য যে কোন কিছুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। কোন পশুর শিং দিয়ে গুতানাের অভ্যাস হলে তার পরিচর্যা করা সম্ভব হয় না। তাই শিং যাতে বড় না হতে পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। শিং বৃদ্ধি রহিত করার পদ্ধতিকে ডিহরনিং (Dehorning) বলে। যে পদ্ধতিতে পশু জন্মানাের পর রাসায়নিক, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক উপায়ে তার শিংকে মূলসহ উপড়ে ফেলা হয় তা শিং অপসারণ পরিচিত।
পশুর বয়স বেশি হয়ে গেলে শিং অপসারণ করার সময় পশুর বেশী ক লাগে এবং প্রচুর রক্তপাত ঘটে। তাই পশু জন্মানাের পর থেকে শুরু করে ১০ দিনের মধ্যে শিং অপসারণ কার্য সম্পাদন করতে হয়। কারণ এই সময়ের মধ্যে পশুর শিঃ এ বাটন মাথার খুলির সাথে লেগে যায় না।
শিং অপসারণের সুবিধা:
শিং না থাকলে খামারে পশুর জন্য জায়গা কম লাগে।
শিং ওয়ালা পশু নিয়ন্ত্রকের জন্য বিপদজনক। তাই শিংহীন পশু নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়।
শিংওয়ালা পশু একসাথে থাকলে অনেক সময় মারামারি করতে গিয়ে এক পশু অন্য পশুর ক্ষতি করে ফলে খামার অনেক বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মূখীন হতে পারে।
শিংহীন পশু পালন করতে সুবিধা হয়।
শিং অপসারণের অসুবিধা:
সুন্দর শিং পশুর দৈহিক সৌন্দর্য বহন করে।
বিভিন্ন মেলা ও পশু প্রদশনীতে चा শিংওয়ালা পশুর বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
কিছু কিছু পশুর শিং ঐ পশুর জাতের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
শিংওয়ালা পশু নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারে।
শিং অপসারণের পদ্ধতি:
পশুর শিং অপসারণ করার জন্য তিনটি পদ্ধতি বিদ্যমান-
১।রাসায়নিকপদ্ধতি (Chemical process): এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক পদার্থ হিসাবে কষ্টিক সােডা ব্যবহার করা হয়। এই কষ্টিক সােডা ব্ল্যাকবাের্ড এর চকের মত সাদা স্টিক আকারে পাওয়া যায়। বানিজ্যিক ভাবে এটি শিং অপসারন পেষ্ট হিসাবে পাওয়া যায়। কার্যপদ্ধতি: প্রথমে শিংবাটন এর তলদেশের চারপাশের লােম কেটে পরিষ্কার করা হয়। কারণ শিং অপসারণ করতে শিং এর তলদেশটাই ব্যবহার করা হবে। এরপর এ স্থানে পেট্টোলিয়াম জেলী দ্বারা তৈরী রিং দেওয়া হয়। এরপর কষ্টিক পটাশ ধারক দ্বারা কষ্টিক পটাশকে যত্ন সহকারে শিং বাটনের চারপাশে ঘূর্ণন করে ঘষা হয়। এর ফলে শিং বাটন নরম হতে থাকে এবং সামান্য পরিমাণে রক্তপাত ঘটতে শুরু করে
অনুরূপভাবে দ্বিতীয় শিংটিতেও কষ্টিক পটাশ ব্যবহার করা হয়। কষ্টিক পটাশ ভালভাবে ঘষা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে যে শিং এর তলদেশের চামড়া ফেটে গেছে। কষ্টিক সােডার ব্যবহার শিং বাটন এর চারপাশেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। অধিক পরিমাণ কষ্টিক সােডা ব্যবহার করলে শিং এর চারপাশের লােম নষ্ট হয়ে যায় এবং সাথে সাথে চোখও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
২।যান্ত্রিকপদ্ধতি (Mcchanical process): দুই ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে এই পদ্ধতিতে শিং অপসারন করা যায়।
ক) ক্লিপারএবংকরাতেরসাহায্য: যখন বয়স্ক পশুর শিং অপসারন করা হয় তখন ক্লিপার এবং করাত ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে অনেক রক্তপাত ঘটে। তবে রক্তপাত প্রতিরােধ করার জন্য শিং এর প্রধান ধমনী তুলার সুতা বা সিল্ক সুতা দ্বারা বেঁধে দেওয়া হয়। একটি পিচ্ছিল সেলাইয়ের সূঁচ দিয়ে ধমনীর চারপাশে সৃতা পেঁচিয়ে তারপর বাঁধা হয়। এর পর চামড়ার ১-১.৫০ ইঞ্চি নিচে অবস্থিত শিং এর মূল ক্লিপার এবং করাতের সাহায্যে কাটা হয়।
খ) রাবারব্যান্ডএরসাহায্যে: রাবার ব্যান্ড এর সাহায্যেও বয়স্ক গরুর শিং অপসারণ করা যায়। এই পদ্ধতির একটি বড় সুবিধা হল যে রাবার ব্যান্ড ব্যবহার করলে করাত দিয়ে শিং অপসারনের সময় সহসা কোন ক্ষতের সৃষ্টি হয় না। প্রথমে শিং এর তলদেশের চারপাশে খাজ কাটা হয়। এরপর রাবার ব্যান্ডটি শিং এর চারপাশে খাজের মধ্যে লাগিয়ে দিতে হয়। রাবার ব্যান্ড রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেয় এবং শিং উপরে উঠে আসে।
৩। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে (Electrical Process): এই পদ্ধতিতে শিং অপসারণ করতে একধরণের বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় (চিত্র-৩৮)। এই যন্ত্রের রডটি বিদ্যুতের সাহায্যে উত্তপ্ত করা হয়। এটির একটি বৈশিষ্ট্য হলাে যে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০০০° তাপমাত্রা নির্ধারণ করে। যন্ত্রটি পশুর শিং এর বাটনে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখলে শিং এর কোষগুলাে ধ্বংস হয়।
একজন ভেটেরিনারিয়ান,তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজকে লাইভস্টক সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা করছি।সেই লক্ষ্যে ফেসবুক,ইউটিউব এবং ব্লগ সাইটের মাধ্যমে ফার্মারদের নানাবিধ পরামর্শ প্রদান করতে চেষ্টা করি।ইতোমধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেল ১ লক্ষাধিক সাবস্ক্রাইব অর্জন করায় ইউটিউব থেকে চ্যানেলটি ভেরিফাইড হয়েছে।
সূত্র: সোনালি কৃষি
ফার্মসএন্ডফার্মার/২২আগস্ট২০