লাল শাক চাষ পদ্ধতি ও অধিক উৎপাদন কৌশল

9171

লাল শাক আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় শাক। এর ইংরেজি নাম Red Amaranth ও বৈজ্ঞানিক নাম Anaranthus oleraceus.বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি লাল শাকের চাষ হয়। রান্নার পর শাকের রং গাঢ় লাল রঙ হয়। লাল শাক একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাল শাক চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে লাল শাক চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

চাষের সময় : সারা বছরই লাল শাক আবাদ করা যায়। তবে ভাদ্র-পৌষ পর্যন্ত বেশী চাষ হয়।

পুষ্টিগুন : লাল শাকে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

জাত :

আলতা পেটি ২০, রক্ত লাল, বারি লালশাক ১, ললিতা, রক্তরাঙ্গা, পিংকি কুইন, রক্তজবা ও স্থানীয় জাত।

বারি লালশাক-১ জাতের বৈশিষ্ট:

১। আমাদের দেশে বারি লালশাক-১ জাতের শাক চাষ ১৯৯৬ সালে অনুমোদন হয়।
২। এ শাকের পাতার বোটা ও কান্ড নরম ও উজ্জ্বল লাল রঙের হয়।
৩। প্রতি গাছে ১৫ থেকে ২০টি পাতা থাকে।
৪। গাছের উচ্চতা ২৫-৩৫ সে.মি. এবং ওজন ১০-১৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
৫। এ শাকের ফুলের রঙ লাল এবং বীজ গোলাকার হয়।
৬। বীজের উপরিভাগ কালো ও কিছুটা লাল দাগ মেশানো থাকে।

জলবায়ু :

সারাবছরই লালশাক চাষ করা যায়। তবে শীতের শুরুতে লাল শাকের ফলন বেশি হয়।

মাটির প্রকৃতি :

প্রায় সব ধরণের মাটিতেই লাল শাক চাষ করা যায়। তবে বেলে দোঁ-আশ থেকে এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এবং যেখানে পানি জমে না এমন জমিই চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

জমি তৈরি ও বীজ বপন :

১। লাল শাক চাষের আগে জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হবে।
২। লাল শাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। তবে সারিতে বীজ বপন করা সুবিধাজনক।
৩। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ২০ সে.মি. রাখতে হবে।
৪। একটি কাঠি দিয়ে ১৫-২০ সে.মি. গভীর লাইন টেনে সারিতে বীজ বুনে মাটি সমান করে দিতে হবে।

সার প্রয়োগ :

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে লাল শাক চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের পরিমাণ

সার এক শতকে হেক্টর প্রতি
গোবর ৪০ কেজি ১০ টন
ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম ১২৫ কেজি
টিএসপি ৩০০ গ্রাম ৭৫ কেজি
এমওপি ৪০০ গ্রাম ১০০ কেজি

পরিচর্যা:

ঘন জায়গা থেকে চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। ছিটিয়ে বোনা হলে প্রতি বর্গমিটারে ১০০ থেকে ১৪০ টি গাছ রাখতে হবে। সারিতে বোনা হলে প্রতি লাইনে ৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে গাছ রাখতে হয়। ৪-৫ দিন পর পর সেচ দিতে পারলে ভাল। তাছাড়া পরিস্কার করে সময়মত মাটি আলগা করে দিতে হবে।

রোগবালাই

শুয়া পোকা:

এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে সমুহ ক্ষতি করে থাকে।
ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ঔষধগুলোর যেকোন একটি ১.১ লিটার পানিতে মিশিয়ে এক হে: জমিতে সেপ্র করতে হবে।

মরিচা রোগ:

এ রোগ গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশকেই আক্রমণ করে। সাদা অথবা হলুদ দাগ পাতার নিচে দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতা মরে যায়।
প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম – ৪৫ ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:

বীজ বোনার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। একসাথে শাক সংগ্রহ না করে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করা ভালো।

ফলন :প্রতি শতকে ৩০-৪০ কেজি, হেক্টর প্রতি ৫-৬ টন।

সম্পাদনায়ঃ মো: মাহফুজুর রহমান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২২আগস্ট২০