মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং পিরিয়ডের বিভিন্ন সমস্যা

2117

মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং পিরিয়ডে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয় /Chicks problems in brooding period

বাচ্চার ব্রুডিং চলাকালীন সময়ে বাচ্চার ব্যবস্থাপনা কেমন হবে তা’ খামারিদের বুঝে ওঠতে খানিকটা সময় লাগে। অনেক অভিগ্ঞ খামারিকেও হিমশিম খেতে হয়। কারণ ঋতুভেদে দিনের আবহাওয়ার তারতম্য ঘটে। দিনের তাপমাত্রা ওঠানামা করে। এমতঃবস্থায় ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা বেশ জটিল হয়ে ওঠে। তাই অন্ততঃপক্ষে খামারিকে প্রথম সপ্তাহে বাচ্চার ব্রুডিং চলাকালীন সময়ে বেশি নজরদারি করা দরকার।

১। তাপমাত্রা তদারকি (Maintenance of brooding temperature): –

মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং তাপমাত্রা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খামারিরা প্রায়শই ধরে রাখার জন্য শেডের পর্দা হিসেবে পলিথিন পেপার ব্যবহার করেন যা মোটেই কাম্য নহে। নিয়মানুযায়ী মুরগির বাচ্চাকে চতুর্থ সপ্তাহ পর্য্ন্ত তাপমাত্রা প্রদান করা দরকার। পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে ব্রুডিং তাপমাত্রা ঠিক করা দরকার। কিন্তু অনেক খামারি তাদের দক্ষতার অভাবে ব্রুডার পিড়িয়ড শেষ হওয়ার আগেই হোভার সরিয়ে ফেলেন। গ্রীস্মকালে কাল বৈশাখী ঝরের সময় অথবা পরে পরিবেশের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে গেলে তখন বাচ্চা মুরগির জন্য তাপমাত্রার দরকার। কিন্তু হোভার সরিয়ে ফেললে আপৎকালীন সময়ে মুরগির বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা প্রদান করা সম্ভব হয় না। এমতঃবস্থায় প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার অভাবে মুরগির বাচ্চা মারা যেতে পারে। তাই এ ধরণের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে যে কোন উপায়ে মুরগির বাচ্চাকে প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা প্রদান করতে হবে।

২। উন্মুক্ত বায়ু প্রবাহ (Open ventilation ) : —

খামারে উপযুক্ত বায়ু প্রবাহের অভাবে এমোনিয়া গ্যাসের আধিক্য জনিত কারণে বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে। এতে শেডের ভেতরে অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে মুরগির বাচ্চা সাফোকেশনে ভুগবে । এছাড়াও খামারে এমোনিয়েশন হলে বাচ্চা মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে ও ভ্যাকসিন সঠিকভাবে কাজ করবে না।

৩। বাচ্চার গাদাগাদি অবস্থা (Over crowding of chicks) : —

ব্রুডিং পিরিয়ডে বাচ্চার ঘনত্ব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বাচ্চা কোনভাবেই গাদাগাদি অবস্থায় রাখা যাবে না। বাচ্চা গাদাগাদি অবস্থায় থাকলে বাচ্চা অস্বস্থিতে থাকবে।বাচ্চা নিজের সুবিধামতো ঠিকমতো প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানি গ্রহণ করতে পারবে না। এমতঃবস্থায় বাচ্চা দিনদিন দূর্বল হবে এবং মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও গাদাগাদি অবস্থায় বাচ্চা থাকলে ভ্যাকসিন ঠিক মতো কাজ করবে না।

৪। লিটার ব্যবস্থাপনা (Litter management) : —

ব্রুডিং চলাকালীন সময়ে বাচ্চা যাতে আরামদায়ক পরিবেশে আরাম আয়েশে থাকতে পারে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। বাচ্চার লিটার হিসেবে ধানের তুষ অতি উত্তম। লিটার অবশ্যই শুকনা বা ঝরঝেরে হতে হবে। তবে আবার বেশি শুকনো হলে লিটার উড়তে পারে । লিটারের ডাস্ট উড়লে পানি দূষিত হবে ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে লিটারের ডাস্ট মুরগির বাচ্চার শ্বাসতন্ত্রেরে ক্ষতি সাধন করবে। এতে বাচ্চা অসুস্থ হবে ও শেষে মারা যেতে শুরু করবে। তবে লিটার ভেজা হলেও চলবে না। এতে এমোনিয়া গ্যাসের আধিক্য বেড়ে গেলে মুরগির বাচ্চা দূর্বল হবে ও ভেজা লিটারের কারণে কক্সিডিওসিস রোগের সংক্রমণ হতে পারে।

৫। মেটাবোলিক বৈকল্যতা (Metabolic disorders) : —

ব্রুডিং চলাকালীন সময়ে মুরগির বাচ্চার আলোক কর্মসূচিতে অসামজ্ঞস্য থাকলে মেটাবোলিক ডিসঅর্ডার হবে। এ সময়ে আলোর তীব্রতা বেশি হলে ব্চ্চার এসসাইটিস, গাউট ও লেমনেস হওয়ার সম্ভনা বেড়ে যাবে। তাই বাচ্চার ব্রুডিং চলাকালীন সময়ে ব্রুডিং তাপমাত্রার পাশাপাশি আলোর তীব্রতার দিকেও গুরুত্বারোপ করতে হবে।

৬। সংক্রামক রোগ (Infectious diseases) : —

সাধারণত অল ইন, অল আউট (All in, all out) পদ্ধতিতে খামার পরিচালনা করা একান্তভাবে জরুরী। খামার থেকে মুরগি বিক্রয় করার পর খামার গুলোকে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন সপ্তাহ সময় বিশ্রাম দেওয়া দরকার। অনেক জীবাণু আছে যেগুলোর জীবনচক্র আড়াই থেকে তিন সপ্তাহ। তাই ঐ সকল রোগ জীবাণু কোন পোষকের সংস্পর্শ না পেলে সে সকল জীবাণু আপনা আপনি ধ্বংশ হয়। আবার কোন কোন রোগ জীবাণু আলো বা অধিক তাপমাত্রায় ধ্বংশ হয়। খামারকে সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত করতে হলে খামারের ব্যবহৃত লিটার দ্রুত সরিয়ে ফেলে খামারের ফ্লোর উত্তমরূপে পরিস্কার করে তা গুণগতমানের জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করে খামারকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও খামারকে জীবাণুমুক্ত করতে হলে খামারকে ফিউমিগেশন করতে হবে। তবে রোগের প্রাদুর্ভাবের উপর ভিত্তি করে ফিউমিগেশনের মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে। এক কথায় বলা যেতে পারে ,পোলট্রি খামারকে রোগজীবাণুমুক্ত রাখতে জীব নিরাপত্তার (Bio security) উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

ক) ভাইরাস জনিত রোগ (Viral diseases) : —

ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস,
ইনফেকশাস বার্সাল ডিজিজ,
এভিয়ান এনসেফালোমাইয়েলাইটিস,
ইনক্লুশন বডি হেপাটাইটিস,
রাণীক্ষেত রোগ,
ফাউল পক্স রোগ ইত্যাদি।
খ) ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ (Bacterial diseases) : —

কলিব্যসিলোসিস,
সালমোনেলোসিস,
মাইকোপ্লাজমোসিস
অমফ্যালাইটিস ইত্যাদি।
গ) ছত্রাক জনিত রোগ (Fungal diseases) : —

এসপাজিলেসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া,
আফলাটক্সিকোসিস।
ঘ) প্রোটোজোয়ান রোগ (Protozoan diseases) : —

কক্সিডিওসিস বা রক্ত আমাশয়।
ঙ) অন্যান্য রোগ বা সমস্যা (Other diseases) : —

ক্যানিবলিজম মুরগির একটি বদ অভ্যাস জনিত সমস্যা ; যা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য হয়ে থাকে। যেমন-বাচ্চার ঘনত্ব,তীব্র আলো, প্রয়োজনের তুলোনায় অপ্রতুল খাদ্য ও পানির পাত্র সরবরাহ ।
এছারাও খামরকে সম্পূর্ণরূপে সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। খামারে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বাহিরে যাতায়েত সীমিত করতে হবে। খামারের প্রবেশ দ্বারে ফুটবাথ ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। খামারে যতোদূর সম্ভব দর্শনার্থীর প্রবেশ সীমিত করতে হবে। খামার পরদির্শনকারীকে খামারে প্রবেশের পূর্বে তাকে ইউনিফর্ম পরিধান করে কেবলমাত্র খামারে প্রবেশ করানো যেতে পারে। খামার পরিদর্শনকারী কোনভাবেই নিজের জুতো পরিধান করে খামারে প্রবেশ করবে না। তাকে অবশ্যই খামারে সংরক্ষিত স্যান্ডেল পরে খামারে প্রবেশ করবে। তবে শর্ত থাকবে যে, খামার পরিদর্শনকারীকে খামারে নেওয়ার কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট পূর্বে জীবাণুনাশক দ্বারা স্পেরে করে খামার প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০আগস্ট২০