পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতের কোম্পানি আমান ফিড লিমিটেডের জমি ও কারখানা বিক্রির জন্য নিলাম চলছে। প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পেরে অর্থঋণ আদালত আইনের আওতায় এই নিলাম আহ্বান করেছে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংক লিমিটেড।খবর:অর্থসূচক।
বুধবার (২ আগস্ট) বিকাল ৪টা পর্যন্ত আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে দরপত্র গ্রহণ করা হবে। একইদিনবিকাল ৫টায় প্রাপ্ত সব দরপত্র খুলে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে আলোচিত সম্পত্তি বিক্রি করা হবে। তবে প্রত্যাশার তুলনায় প্রস্তাবিত দাম কম হলে এই নিলাম বাতিল করে নতুনভাবে নিলাম আহ্বান করবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ৭ আগস্ট এবি ব্যাংক লিমিটেড আমান ফিডের জমি নিলামে তোলার বিষয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আমান ফিডের কাছে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ঋণ ও সুদসহ মোট ২৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওনা এবি ব্যাংকের।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, কোম্পানিটির সিরাজগঞ্জে কারখানা, জমি ও গাজীপুরের জমির মূল্যমান আসে ৭০ কোটি টাকা।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, আমান ফিড মূলত ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল ক্রয়ের উদ্দেশ্যে ২০০৬ সালে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়।একই বছর দেশের কৃষি ও ডেইরি খাতের জন্য পোল্ট্রি, মাছ, চিংড়ি, গোখাদ্যসহ বিভিন্ন খাবারের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে আমান ফিড। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি।তাই শেষ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ব্যাংক।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রির পাঁচ বছরের মাথায় নিলামে জমি ও কারখানা বিক্রির বিষয়টি পুঁজিবাজারের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত।
তাদের মতে, এটি বিনিয়োগকারীদের সাথে বড় ধরণের প্রতারণা। আর এর দায় কোম্পানির পাশপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জ, অডিটর এবং ইস্যু ম্যানেজারকেও নিতে হবে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে আমান ফিড আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে ২৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৬ টাকা দরে শেয়ার বিক্রি করা হয় বিনিয়োগকারীদের কাছে।
অভিযোগ রয়েছে, উচ্চ প্রিমিয়াম আওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির মুনাফা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতি শেয়ারের আয় (ইপিএস) দেখানো হয় ৪.৯৭ টাকা। আইপিওর পর থেকেই মুনাফার বুদ্বুদ ফেটে যায়। মাত্র ৪ বছরের মধ্যে ইপিএস কমে ১.৬০ টাকায় নেমে আসে।
উচ্চ প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রির পরও প্রতারণা থেমে থামেনি আমান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আমান ফিড মিলের উদ্যোক্তাদের। তারা বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার আস্থার কোনো প্রতিদান তো দেয়-ই-নি, বরং আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যবহারে নয়-ছয় করেছে। এ কারণে কোম্পানির পরিচালকদের কোটি টাকা জরিমানাও করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
শুধু তা-ই নয়, তালিকাভুক্তির পর কোম্পানির শেয়ারের মূল্য নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল-বুকবিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর প্রক্রিয়ায় থাকা গ্রুপের দ্বিতীয় কোম্পানি আমান ফাইবার কটনের ভাল মূল্য প্রাপ্তির বিষয়টিকে প্রভাবিত করা। ২০১৮ সালে এই কোম্পানিটি বাজারে আসে। নিলামে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের কাট-অফ প্রইস হয় ৪০ টাকা। আর আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এই শেয়ার বিক্রি করা হয় ৩৬ টাকা দরে।
আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু এই কোম্পানিটিও নির্ধারিত সময়ে আইপিওর টাকা ব্যবহার করতে পারেনি। এরই মধ্যে আমান গ্রুপ তাদের তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে আমান সিমেন্টকে পুঁজিবাজারে নিয়ে এসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পকেট কেটে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। যদিও আমান সিমেন্ট বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে আছে বলে জানা গেছে। তবে আমান ফিড নিলামে উঠার কারণে আমান সিমেন্টকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া বড়সড় হোঁচট খেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইপিও’র (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আগে ও পরে অর্থিক প্রতিবেদন দেখে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দ্রুত এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ এসব উদ্যোক্তাদের কারণে পুঁজিবাজার তার মর্যাদা হারাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: শেয়ারনিউজ
ফার্মসএন্ডফার্মার/০২সেপ্টেম্বর২০