সফলতার সাথে খামার পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক খামারে পাঁচটি উপকরণ থাকা অতি জরুরী। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে অনেক খামারী পাওয়া যাবে যাদের এই পাঁচটি উপকরনের একটিও নাই। আর কিছু খামারী পাওয়া যাবে যাদের হয়তো পাঁচটির মাঝে একটি কিংবা দুইটি উপকরণ আছে।
কি সেই পাঁচটি উপকরন?
১. থার্মোমিটারঃ
এটি শুধু ব্রুডিং এর সময় ব্যবহারের জন্য নয়। বাচ্চা তোলা থেকে বিক্রয় করা পর্যন্ত এর ব্যবহার করা জরুরী। এর মাধ্যমে গরমের সময় হিটস্ট্রোক হবার আগাম পূর্বাভাস জানা যায়। শীতকালে দিন ও রাতে তাপমাত্রা কতটুকু উঠানামা করে তা জানা যায়। ফলে রাতে তাপমাত্রা সংরক্ষনেরর প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই সে বিষয়ে ধারনা পেতে পারবেন।
২. ফুটবাথঃ
এই বিষয়ে সকলেই জানেন কিন্তু কয়জন খামারী এই জিনিসটি রাখেন? যদিও কোন কোন খামারে দেখতে পাই কিন্তু সেখানে জীবানুনাশক পানি থাকেনা। থাকলেও ৫-৭ দিন আগের পানি। খামারে জীবানুর প্রবেশে সবচেয়ে বড় বাধা দেয় এই ফুটবাথ। এর পানি প্রতিদিন পরিবর্তন করা অতি জরুরী।
৩. ওজন মেশিনঃ
খামারে একটি ওজন মেশিন রাখার যে কি উপকারিতা যারা এটি রাখে শুধু তারাই জানে। এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার একদিনের বাচ্চার ওজন কত। এছাড়া ৭ দিনের বাচ্চার ওজন নিয়ে আপনি জানতে পারবেন খামার লাভ না ক্ষতি কোন দিকে যাচ্ছে। বাচ্চা গ্রেডিং করতে, ইউনিফরমিটি বের করতে বা খাদ্য গ্রহনের সাথে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা ইত্যাদি জানতে পারবেন যদি আপনার খামারে একটি ওজন মাপার যন্ত্র থাকে।
৪. রেকর্ড খাতাঃ
বেশীরভাগ খামারীই রেকর্ড রাখেনা। রেকর্ড বলতে শুধু কয় বস্তা খাবার খেলো আর কত কেজি ওজন পেলাম এই হিসেব না। খামারে বাচ্চা তোলা থেকে শুরু করে বিক্রয় করা পর্যন্ত সকল হিসেব খাতায় লিপিবদ্ধ করার নাম রেকর্ড কিপিং ( যেমনঃ কতগুলো বাচ্চা ব্রুডিং এ দিলেন, একদিনের বাচ্চার ওজন, প্রতিদিন কয়টি বাচ্চা মারা যাচ্ছে, ৭ দিনের বাচ্চার ওজন, প্রতিদিন কতটুকু খাবার খাচ্ছে, কতটুকু পানি খাচ্ছে, ভ্যাকসিনের হিসাব ইত্যাদি। রেকর্ড কিপিং অনেক বিশাল একটা বিষয়। অন্যদিন এ বিষয়ে আলোকপাত করা যাবে। )
৫. বেক-আপ পাওয়ার সিস্টেমঃ
ব্রয়লার বা লেয়ার যাই পালনের কথা বলুন এটা বর্তমানে একটা ব্যবসা। আর ব্যবসাতে বেক-আপ পাওয়ার সিস্টেম থাকবেনা এটা কেমন কথা। কিন্তু অনেক খামারী পাওয়া যাবে যাদের বিদ্যূত নেই, জেনারেটর নেই, গ্যাস ব্রুডার নেই এমনকি সোলারও নেই। এরা ব্রুডিং করে হ্যারিকেন দিয়ে তাও মাত্র ২-৩ দিন। তারপর তাপ-আলো কিছুই দেবার প্রয়োজন বোধ করেনা। দিনে সূর্যের আলোতে কিছু সময় খাবার খায় আর রাত হলে খাবার খাওয়া বন্ধ! এটাকে কি মুরগী পালন বলে নাকি প্রাণীদের উপর অত্যাচার বলে?
এই পাঁচটা গুরত্বপূর্ন উপকরন খামারে রাখতে যে প্রচুর অর্থের দরকার বিষয়টি এমন না। থার্মোমিটারের দাম প্রায় ১০০ টাকা, ফুটবাথ হিসেবে আর এফ এলের প্লাস্টিকের বড় গামলা ব্যবহার করতে পারেন। দাম ২০০-২৫০ টাকা। ওজন মেশিন ৫০০-২০০০ টাকা। রেকর্ড খাতা ৫০ টাকা। সব মিলে ১০০০-৩০০০ টাকা লাগবে এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ন উপকরন কিনতে তাও আবার চিরদিনের মত।
আপনাদের খামারে কয়জন এই সব কয়টি উপকরন খামারে রাখেন? আর যারা রাখেন না তারা কবে থেকে রাখবেন?
ফার্মসএন্ডফার্মার/১২সেপ্টেম্বর২০