অনেকেই প্রশ্ন করেন আপনার পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার জন্মায় না কেন? আসলে প্রাকৃ্তিক খাদ্য নাজন্মানোর অনেক কারন থাকতে পারে, এর মধ্যে আমি কমন কয়েকটি কারন নিয়ে আজ আলচনা ও এর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ
সবচেয়ে বেশী যে কারনটির কারনে পানিতে প্রাকৃতিক খাবার তৈরী হয়না সেটি হচ্ছে আপনার পুকুরের তলদেশের মাটি যদি লাল মাটি বা এসিটিক হয়ে থাকলে এই সমস্ত মাটির পিএইচ(pH) সবসময় কম থাকে, এবং এর প্রভাবে পানির পিএইচ(pH) কম থাকে, আর পিএইচ(pH) কম থাকলে পুকুরের পানিতে প্ল্যাঙ্কটন তৈরী হতে পারেনা।
করনীয়ঃ বেশী এসিটিক মাটিতে প্রতি শতাংশে মাটি ভেদে ২-৪ কেজি পাথুরে পোড়া চুন বড়ুইর দানার মত ছোট ছোট টুকরা করে সমস্ত পুকুরে না ভিজিয়ে সরাসরি ছিটিয়ে দিতে হবে, পানিতে মাছ থাকা অবস্থায়ও দেয়া যাবে, অনেকে মনে করতে পারেন মাছ খেয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু না মাছ খাবেনা, সেই চুনের টুকরা গুলো ধীরে ধীরে পুকুরের মাটিকে অনেকটা শোধন করবে এবং মাটি ও পানির পিএইচ(pH) কে উন্নত করবে, তা ছাড়াও পুকুর প্রস্তুত কালীন সময়ে মাটির pH এর উপর ভিত্তি করে প্রতি শতাংশে ২ – ৪ কেজি চুন ও জৈব সার মাটিতে প্রয়োগ করে চাষ দিতে হবে। নিয়ম করে পুকুরে কম্পোষ্ট দিলেও ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে, এসিড মাটির মান উন্নয়ন কল্পে নিয়ম করে সয়েল প্রোবায়োটিক বা Aqua Clear S প্রোবায়োটিক প্রয়োগে করলে পজেটিভ ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ, তাছাড়াও লাল মাটি যুক্ত এসিটিক সয়েলের পুকুরে প্রতি মাসে প্রিমিত মাত্রায় চুনের ডোজ করতে হয়,তাছাড়াও এই এসিটিক মাটির পুকুরের পানিতে কার্বনেট এর পরিমান ও কম থাকে, তাই নিয়ম করে পরিমিত মাত্রায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট / পাথুরে পোড়া চুন প্রয়োগ করলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়,
বিঃ দ্রঃ পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরী করার জন্য কম্পোষ্ট দেওয়ার আগে অবশ্যই পানির পিএইচ(pH) টেষ্ট করে নিতে হবে, পানির আদর্শ পিএইচ মান (pH) ৭.৫ – ৮.৫,
গাছের ছায়া যুক্ত পুকুরে যেখানে সূর্যের আলো পড়েনা, সেই সমস্ত পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টি হতে পারে না, কারন সূর্যের আলো ছাড়া সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া সংগঠিত হতে পারেনা, আর সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া ব্যতিত পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন তৈরি হবেনা,
করনীয়ঃ পুকুরের দিকে ঝুলে থাকা গাছের ডাল পালা কেটে ফেলতে হবে, যে সমস্ত গাছের ডাল পালা বড় হয় সে সমস্ত গাছ পুকুর পাড় লাগানো যাবেনা, পুকুরে ছায়া পড়ে মত কোন গাছ পুকুর পাড়ে লাগানো যাবেনা, পুকুর কাঁটার সময় দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ পাওয়া যায় এই রকম স্থান নির্বাচন করতে হবে,
যে সমস্ত একুয়াটিক জীব পুকুরের পানি ফিল্টার করে সে সমস্ত জীবের আধিক্য পুকুরে থাকলেও প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টি বাধাগ্রস্থ হয় যেমন শামুক ও ঝিনুক, কারণ এরা পুকুরের পানি থেকে প্ল্যাংকটন কনা খেয়ে ফেলে পানি ফিল্টার করে ফেলে প্ল্যাঙ্কটন এর সংখ্যা বাড়তে দেয়না, কারন প্ল্যাঙ্কটন নিজেই উদের খাদ্য,
করনীয়ঃ ঐ পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ টি করে ব্লাক কার্প ছারতে হবে, ব্লাক কার্প কয়েকদিনের মধ্যেই সব শামুক ও ঝিনুক খেয়ে সাবার করে ফেলবে, তাছাড়াও ঐ সমস্ত পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টির জন্য কম্পোষ্ট বা সার বেশী পরিমানে দিতে হবে অন্য একটি প্ল্যাঙ্কটন যুক্ত পুকুর হতে বীজ (প্ল্যাঙ্কটন সহ পানি) এনে ঐ পুকুরে দিতে হবে, ঘন ঘন কয়েকটি কম্পোষ্ট বা সারের ডোজ করার পর ভাল ফল পেতে পারেন,
মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টির দিনে সূর্যের অনুপস্থিতিতে সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বিধায় পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টি হয়না,
করনীয়ঃ মেঘাচ্ছন্ন ও বৃষ্টির দিনে পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টির জন্য কম্পোষ্ট বা সার দেওয়া যাবেনা, দিলেও তেমন ফলাফল পাওয়া যাবেনা ,
পানিতে ঘোলাত্বের কারনে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না, নতুন পুকুরে বৃষ্টিতে পার ধোয়া পানিতে পুকুরের পানি ঘোলা হয়ে যায়, তাছাড়াও পুকুরের মাটি এঁটেল মাটি হলেও পুকুরের পানি প্রায়ই ঘোলা থাকে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না, তাই সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বিধায় পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টি হয়না,
করনীয়ঃ ঘোলাত্ব থাকা অবস্থায় ২৫০-৫০০গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করা যেতে পারে, এতে ঘোলাত্ব কমবে কিন্তু পিএইচ কমতে পারে সেইজন্য প্রতি শতাংশে ২৫০গ্রাম চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে, নিয়ম করে পরিমিত মাত্রায় পুকুরে গোবর ও জৈব সার বা কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করা যেতে পারে এতে পুকুরের পানির ঘোলাত্ব কমবে।
যে সমস্ত পুকুরের মাটিতে আয়রনের পরিমান বেশী থাকে, সেই সমস্ত পুকুরেও সালোক সংশ্লেষন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং এরই ফলশ্রুতিতে পুকুরে প্ল্যাঙ্কটন সৃষ্টি হয়না,
করনীয়ঃ আয়রন বেশী পুকুরের পানি মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হয়, তাছাড়াও পাতলা কাপর দিয়ে ছেকে আয়রন পুকুরের পানি থেকে তুলে ফেলে দিতে হয়, প্রতি মাসে পরিমিত মাত্রায় চুন দিতে হয়, প্রতি ১০ দিন অন্তর পরিমিত মাত্রায় জৈব সার + গোবর + কম্পোষ্ট দিতে হয়, এভাবে ২-৩ বছরের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে, তখন সমস্যাটা এতটা বড় মনে হবেনা, তাছাড়াও মাটির মান উন্নয়ন কল্পে নিয়ম করে সয়েল প্রোবায়োটিক বা Aqua Clear S প্রোবায়োটিক প্রয়োগে করলে পজেটিভ ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ
বিঃ দ্রঃ পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরী করার জন্য কম্পোষ্ট দেওয়ার আগে অবশ্যই পানির পিএইচ(pH) টেষ্ট করে নিতে হবে, পানির আদর্শ পিএইচ মান (pH) ৭.৫ – ৮.৫,
আপনি আপনার পুকুরে যে প্ল্যাঙ্কটন-এর উপস্থিতি বেশী দেখতে চান, কম্পোষ্ট বা জৈব সার দেওয়ার সময় অন্য পুকুর হইতে ঐ প্ল্যাঙ্কটনের বীজ (প্ল্যাঙ্কটন সহ পানি) এনে এই পুকুরে দিতে হবে, তাতে আপনার পুকুরে আপনার কাঙ্খিত প্ল্যাঙ্কটন এর উপস্থিতি বেশী পাবেন, অবশ্য এই প্ল্যাঙ্কটনের প্রয়োজন ভেদে কম্পোষ্টের ফর্মুলাও পরিবর্তন আনা হতে পারে,
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৬সেপ্টেম্বর২০