গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও বীজ দেওয়ার নিয়ম

4728

গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও বীজ দেওয়ার নিয়ম

গাভী হিটে আসার লক্ষণ সমূহ সকল ডেইরি খামারিদের জন্য অবশ্যই জানা দরকার। বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে গাভী পালন করা হচ্ছে। গাভী পালন করে লাভবান হওয়ার জন্য সঠিক সময়ের মধ্যে বাচ্চা উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। আর উন্নত জাতের বাচ্চা উৎপাদনের জন্যই গাভীকে উন্নত জাতের বীজ প্রদান করা হয়।

গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও ধাপ:

আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ খামারির গাভী হিটে আসার লক্ষণ ও এর ধাপ বা পর্বগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে তারা সময়মতো গাভিকে বিজ দিতে ব্যর্থ হয় ফলে গাভী কনসিভ করে না বা বীজ রাখতে পারে না। যদি খামারী ভাইয়েরা গাভির হিটে আসার লক্ষণ ও এর পর্বগুলো সম্পর্কে ধারনা নিতে পারে তাহলে অনেকাংশে সফল হবে। গাভী হিটে আসার চারটি ধাপ বা পর্ব রয়েছে। যথাঃ

✓প্রস্তুতি পর্ব (Pro-Estrous)
✓উত্তেজনা পর্ব (Estrous)
✓কাম উত্তেজনা পর্ব (Meta-Estrous)
✓নিষ্ক্রিয় পর্ব (Di-Estrous)

✓✓প্রস্তুতিপর্ব বা pro-Estrous
গাভী হিটে আসার ৩ দিন পূর্বে থেকে এই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। হিটে আসার পূর্বের এই সময় কে প্রস্তুতি পর্ব বলে। প্রস্তুতি পর্বের লক্ষণঃ

*গাভী খাওয়া-দাওয়া কম করবে।
*ঝিমানি ভাব থাকবে।
*গাভীর যোনি মুখ দিয়ে স্বচ্ছ পাতলা ঝিল্লি বের হবে।

✓✓যৌন উত্তেজনা পর্ব বা Estrous
এই উত্তেজনা পর্ব ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা স্থায়ী থাকে। আর আমাদের খামারি ভাইয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পর্বেই বিজ দিয়ে থাকেন। এই পর্বে বিজ দিলে কন্সেপ্ না করার হার ৯৮%। সুতারাং এই ধাপে কখনোই গাভীকে বীজ বা সিমেন দেওয়া যাবে না। উত্তেজনা পর্বের লক্ষণঃ

*গাভী ঘন ঘন প্রসাব করবে।
*পাশে থাকা অন্য গাভির উপর লাফিয়ে উঠবে।
*অন্য গাভীর যৌনাঙ্গ শুকতে থাকবে।
*দুধ উৎপাদন কমে যাবে।
*গাভী ডাকতে থাকবে।

✓✓কামত্তোর পর্ব বা Meta _ Estrous
এটি গাভীকে বীজ দেওয়ার সঠিক সময়। এই পর্বের স্থায়িত্ব কাল ১ থেকে ২ দিন। এই সময় বিজ দিলে কনসিভ করার হার ৯৯%।

*গাভীর যোনি পথ দিয়ে অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত ঝিল্লি বের হয়।
*গরু খাওয়া কমিয়ে দেয়।
*গাভী ছটফট করে।
*অনবরত ডাকতে থাকে।

✓✓নিস্ক্রিয় পর্ব বা Di-Estrous
গাভী হিটে আসার শেষ ধাপটি থাকে ১৫ দিন। যদি গাভিকে বীজ না দেওয়া হয় তাহলে গাভির জরায়ু থেকে বের হওয়া ডিম্বানু গুলো মারা যাবে এবং গাভির সমস্ত জনন অঙ্গ স্বাভাবিক হবে। এর পর কয়েক দিনের মধ্যে আবার হিটে আসার ধাপ গুলো শুরু হবে।

গরুর বীজ দেওয়ার নিয়ম:
গাভী বা বকনাকে সঠিক সময়ে এবং সঠিক নিয়মে বীজ দিতে হবে।

*অভিজ্ঞ কৃত্রিম প্রোজনন কর্মি দ্বারা সঠিক সময়ে বীজ দিতে হবে।
*বীজ দেওয়ার পর গরুকে গোছল করাতে হবে।

গাভীকে বীজ দেওয়ার পরেও গর্ভধারণ না হওয়ার কারণ:
হিটে আসা গাভীকে বীজ দেওয়ার পরও গর্ভধারণ না হওয়া বা বীজ ধরে না রাখতে পরার পিছনে অনেকগুলো কারন রয়েছে। নিম্নে কিছু কারণ সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলোঃ

*গাভীর ডাক বা হিটের সময় পার হয়ে গেলে এবং গাভীকে বীজ বা সিমেন দিলে গাভী গর্ভবতী হয় না।
*কোন কারণে গাভীর জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ থাকলে সেই গাভীকে যদি বীজ দেওয়া হয় তাহলে গাভী গর্ভবতী হয় না।
*গাভীর শরীরে অধিক কৃমি দ্বারা আক্রান্ত থাকলে গাভীকে বীজ দেওয়ার পরও অনেক সময় গাভীর গর্ভধারণ হয় না।
*গাভী পুষ্টিহীনতায় বা অধিক দূর্বলতায় ভুগলেও অনেক সময় গাভী গর্ভবতী হয় না।
*গাভীর স্থায়ী ভাবে ডিম্বক্ষরণ প্রক্রিয়া নষ্ট বা বন্ধা হয়ে গেলে গাভী গর্ভবতী হয় না।
*একই গরুর ঘরে বা পাশাপাশি প্রজননক্ষম গাভী বা বকনা ও ষাঁড় পালন করলে অনেক সময় গাভী বা বকনা ডাক বা বীজ রাখে না।
*সিমেন স্ট্র বা বীজে হিমায়িত শুক্রানু মৃত হলে গাভী পাল রাখে না।
*অনভিজ্ঞ কৃত্রিম প্রজনন কর্মী দ্বারা বীজ দেওয়া হলে অনেক সময় গাভী বীজ রাখে না।

ডা: মোঃ শাহিন মিয়া
ভেটেরিনারি সার্জন
বিসিএস প্রাণিসম্পদ
চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা।
০১৭১৬১৬২০৬১(ইমো)

ফার্মসএন্ডফার্মার/২২সেপ্টেম্বর২০