ডিম দিবসে ডিম কথন, “ডিমই হতে পারে ডিমের একমাত্র বিকল্প”

1392

ডা. খালিদ হোসাইনঃ ৯০ এর দশকের শেষের দিকে ফিরে যেতে চাই । তখন আমি ছোট । বাবা মায়ের ৩ সন্তানের মাঝে আমি দ্বিতীয় । বাবা আইসিডিডিআরবি তে চাকুরী করতেন । চাকুরির কারনে আমার শৈশব কাটে চাঁদপুরের একটি গ্রামে । ভাড়া বাসায় থাকতাম, প্রাইমারী স্কুলে পড়তাম । স্কুলে গেলেই বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বার্তা হত । ২ টা বিষয় নিয়ে বেশি কথা হত – বড় হয়ে কি হব আর কি দিয়ে খেলাম আজ ।

কি খেয়েছি এই গল্প উঠলেই ডিমের কথা মনে পড়ে যায় । সেই সময়ে সবচেয়ে ভালো এবং দামী খাবার বলতে দেশি মুরগির ডিমকেই বোঝানো হত (তখনকার সময়ে ফার্মের ডিম চিনতামই না, ফার্মের ডিমের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় সম্ভবত ২০০১ সালের দিকে; ঐ সময়টা ঢাকায় থাকতাম আমরা সেই সুবাদেই পরিচয়) । যাই হোক আলু দিয়ে ডিমের তরকারি – এই রান্নাটা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল, এখন অবশ্য আম্মা যদি কখনও এই তরকারি রান্না করে তাহলে আমি বলি যে হোটেলের খাবার রান্না করছো কেন ?

বন্ধুদের সাথে গল্প করতাম যে আমি আজ ডিমের তরকারি দিয়ে ভাত খাইছি । তখন বন্ধুদের মাঝেই কয়েকজন বলে ফেলত তোরা তো বড়লোক (যদিও আমাদের অভাবের সংসার ছিল), তোর বাবা কোম্পানীর চাকুরি করে, ডিম তো খাবিই । তখনকার সময়ে ডিম কতটা দামী খাবার ছিল তার আরেকটা উদাহরন দেই । পাশের বাসায় এক মহিলা ভাড়া থাকতেন । আম্মা উনাকে খালা ডাকতেন, সেই হিসেবে আমি নানু ডাকতাম উনাকে । উনাদের বাসায় যেদিন উনার মেয়ের জামাই আসত সেদিন দেখতাম সেই নানু ডিম রান্না করতেছে । উনাদের বাসায় ডিম না থাকলে আমার আম্মার কাছ থেকে মাঝে মধ্যে ধার করতেন । ডিমের রান্নাটা আলু দিয়ে কিংবা শুধু পিয়াজ দিয়ে সাথে হলুদ গুঁড়া আর মরিচ গুঁড়ার কারনে তরকারিটা দেখতে অসাধারন লাগত । জামাই আদরেই মূল অস্ত্র ছিল ডিমের তরকারি ।

২০০৪ সালের পরে কখন যে ডিমের তরকারির স্থান দখল করে নিল অন্য কিছু টের পেলাম না । হয়ত ঢাকায় চলে আসার পর বন্ধুদের সাথে কি দিয়ে খেলাম কিংবা কোন খাবারটা সবচেয়ে ভাল এই টপিকে কথা হত না তাই মনে পড়েনা সেভাবে । এখনতো জামাই আদর বলতে কত বড় মাছের মাথা, কত বড় রোস্ট কিংবা কত সুন্দর করে গরু-মুরগির নিত্য নতুন রেসিপি কিংবা টাটকা মাছ রান্না করা বুঝায় । অবশ্য উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ-মধ্যবিত্ত দের জন্য এখন তো জামাই আদর বাড়ীর পাশাপাশি ভালো কোন রেষ্টুরেন্টেও হয় ।

তখনকার তুলনায় ডিম এখন অনেক সস্তা, কারণ টাকার মূল্য কমে গেছে কংবা মানুষের রোজগার বেড়ে গেছে । এখন ডিমের সেই তরকারি টা শুধু হোটেলেই মানায় । এখন বাসায় ডিমের তরকারি খুব একটা রান্না হয়না, তবে ডিম খাওয়া হয় ঠিকই, সকালের নাস্তায় মামলেট কিংবা অমলেট নামে; কিংবা শীতের সন্ধ্যায় রাস্তায় মোড়ে দাঁড়িয়ে হাফ বয়েল কিংবা ফুল বয়েল রূপে ।

নকল ডিমে বাজার ভরে গেছে, ডিমের মাঝে ঔষুধ দেওয়া হয় এইসব গুজবে অবশ্য ডিমের জনপ্রিয়তা কমানোর অপচেষ্টাই করা গেছে কিন্তু ডিমের বিকল্প হিসেবে অন্য কিছুকে মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য করা যায়নি একদমই ।

এবারের বিশ্ব ডিম দিবসে ধন্যবাদ থাকল সেইসব খামারী ভাইদের প্রতি যারা ডিমের বাজারের এত উঠানামা এবং মুরগিতে রোগের ঝুঁকি সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন । কৃতজ্ঞতা থাকল এই শিল্পের সাথে জড়িত মালিকদের প্রতি যারা ঝুঁকি নিয়েও নতুন কিছু করার জন্য অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন । অশেষ ভালোবাসা থাকল কৃষিবিদ ভাইদের প্রতি যারা এই শিল্প বিকাশে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, খামারীদেরকে সহযোগিতা করছেন ।

খাদ্যাভাসে হয়ত পরিবর্তন আসবে, সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে হয়ত মানুষ নতুন খাদ্য তালিকার প্রতি আকৃষ্ট হবে, ডিমের জনপ্রিয়তা হয়ত কমে গেছে/যাবে কিন্তু পুষ্টিগুনে ডিমের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন কিছু কখনই আসতে পারবে না ।

“ডিমই হতে পারে ডিমের একমাত্র বিকল্প” ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯অক্টোবর২০