বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল্গুলির মধ্যে আখ অন্যতম। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি জেলাতেই কম বেশি আখ চাষ করা হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জলবায়ু ও আবহাওয়া আখ চাষের জন্য উপযোগী। আখ ঘাস পরিবারের একটি গাছ দণ্ডাকৃতির ডাল-পালাহীন একবর্ষ-বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।
এদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আখ রয়েছে যেগুলোকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যায়। ১ । চিনি ও গুড় তৈরির জন্য ২। চিবিয়ে খাবার জন্য । চিবিয়ে খাওয়ার জন্য সব থেকে ভাল জাতের আখ হলো ফিলিপাইন ব্লাক আখ। বাজারে যেসকল আখ পাওয়া যায় অনেক সময় সেগুলো শক্ত, মিষ্টি কম ও রসকম থাকে।
কিন্তু ফিলিপাইন ব্লাক আখ সেই দিক দিয়ে বেশ ভালো জাতের আখ। এ আখের মিষ্টতা অনেক বেশি ও নরম থাকায় বৃদ্ধ মানুষজন এই আখ অনায়াশেই চিবিয়ে খেতে পারে। বানিজ্যিকভাবে ফিলিপাইন ব্লাক আখ চাষ করে অল্প সময়ে অধিক মুনাফ অর্জন করা সম্ভব।
উপযুক্ত জমি তৈরি
আখের জমি ৩/৪ বার চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য সুবিধা মত নালা কাটতে হয়।
চাষ উপযোগী মাটি তৈরী
আখ এঁটেল, দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে ভাল জন্মে। জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে এঁটেল-দোআঁশ মাটিতে সবথেকে ভাল হয়। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে, যে জমিতে পানি জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
রোপণের সময়
চিবিয়ে খাওয়ার যোগ্য আখ রোপণের উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। আখের চারা রোপণের সর্বোত্তম সময় হলো মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর।
ফিলিপাইন আখের পরিচর্যা
পোকা মাকড় ও রোগ বালাই: আখে সাধারণত ডগা-কান্ড মাজরা পোকা, উঁইপোকা লাল পচা রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন ব্লাক আখে এ সকল রোগ খুব একটা দেখা যায় না ।
পানি সেচের সময়: যদি আখের কাটিং লাগানের ১০/১৫ দিনের মধ্যেও অনকুর বের না হয় তাহলে হালকা সেচ দেওয়া ভালো।
ফসল সংগ্রহ
আখ পরিপক্ক হতে ষাধারণত ১২- ১৫ মাস সময় লাগে কিন্তু ফিলিপাইন ব্লাক আখ এক বছরেই বাজার জাত করা যায়।
ফিলিপাইন ব্লাক আখের বৈশিষ্ঠ
এ আখ অনেক নরম, হাতের নখ দিয়েও চামড়া ছাড়ানো যায়।
অন্য যে কোন আখ থেকে এই আখের মিষ্টতা অনেক বেশি।
রসগোল্লা যেমন রসে ভরপুর থাকে এই আখ তেমনি রসে ভরপুর।
এই আখ অনেক নরম হওয়ার কারণে কামড় দিলে রসে মুখ ভরে যায়।
বৃদ্ধ মানুষ অতি সহজেই এই আখ খেতে পারবে।
এই আখের বাজার মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে বেশি।
আখের উচ্চতা
বাজারে যে আখগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলা সাধারণত সবোর্চ্চ ১০ ফিট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা প্রায় দ্বিগুন হয় (২০ থেকে ২৫ ফুট)।
আখ চাষের খরচ
এই আখ চাষের জন্য অন্য আখ থেকে বেশি খরচ হয়ে থাকে। আখ নরম হওয়ার কারণে শিয়ালের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ক্ষেতের চারপাশে নেট দিয়ে বেড়া দিতে হয়। আখ বড় হলে বাঁশের খুটির সাথে বেধে দিতে হয় কারণ এই আখের উচ্চাতা অনেক বেশি। এসকল কারণেই খরচটা একটু বেশি হয়।
ফিলিপাইন ব্লাক আখের রং
যদিও বাজারে আমরা বিভিন্ন রঙের আখ দেখতে পাই, এদের মধ্যে কোনটা আছে একটু লালচে রঙের আবার কোনটা একটু সাদা, ঈশৎ হলুদ এবং মাঝে মাঝে কালো রঙের আখও দেখা যায়। ফিলিপাইন জাতের এই আখটা মোটামুটিভাবে লালচে খয়েরী রঙের হয়।
তথ্যসূত্রঃ সাকসেস ফারমস বিডি
ফার্মসএন্ডফার্মার/১২অক্টোবর২০