ইনকিউবেটরে ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যাওয়ার কারণ ও প্রতিকার

2100

অনেক সময় বাচ্চা ডিম একটু ফুটো করেই মারা যায়। কি এমন সমস্যা যার কারনে শেষ মুহুর্তে এসে ভ্রুনের মৃত্যু ঘটে। ডিমের ভিতর বাচ্চার মৃত্যুর অনেক কারনই থাকে,সব গুলো উল্লেখ করা সম্ভব নয়, তবে যেই কারন গুলির জন্য ডিমের ভিতর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা মারা যায় সেই কারন খুজে বের করবো এবং তার সমাধাণ করবো। প্রথমত যে ডিমে বাচ্চা মারা গিয়েছে আপনি সেই ডিম টি ভেঙ্গে দেখুন, লক্ষ করুন বাচ্চাটি অল্প কিছুদিন হলো মারা গিয়েছে। যেহেতু ডিমের বাচ্চা বড় হয়ে মারা গিয়েছে, তাই সহজেই বোঝা যায় ডিমের ভিতর বাচ্চা বড় হবার সাথে সাথে এমন কিছুর অভাব ঘটেছে যার কারনে বাচ্চা ফুটার আগেই মৃত্যু হয়ছে। ভ্রুণ যখন বড় হতে থাকে তখন সেই ভ্রুপের বৃদ্ধির সাথে সাথে সব কিছুই নিখুঁত পরিমানে প্রয়োজন হয়।মনে রাখা উচিৎ ভ্রুনকে শুধুমাত্র স্বাভাবিক নিয়মে বৃদ্ধি করলেই সেই ভ্রুন বড় হয়ে নিরাপদে ডিম থেকে বের হতে পারবে। যদি কোনো কিছু স্বাভাবিকের চেয়ে ব্যতিক্রম হয় তবেই সমস্যা জটিল আকার ধারন করতে থাকে.।

যেমন আর্দ্রতা: আর্দ্রতা যদি বেশি হয় তবে ডিমের ভিতর তরল পূর্ণই থাকে এবং ডিমের খোষা শক্ত হয়ে যায়, ভ্রুনের অক্সিজেন গ্রহনে বিঘ্ন ঘটে, এবং সময় মত ডিমটি পরিমান মত খালি না হওয়াতে ভ্রুন ডিমের ভিতরেই মারা যায়। অনেকটা জলে ডুবে মারা যাওয়ার মত। আবার আর্দ্রতা যদি কম হয়, তবে ডিমের ভিতর তরল দ্রুত শুকিয়ে যায় ফলে ভ্রুনের বৃদ্ধিতে ব্যঘাত ঘটে, যার কারনে ভ্রুনের মৃত্যু হয়। আদ্রতা কম থাকলে ডিমের খোসাও ভঙ্গুর হয়ে যায়, এতে ডিমের সাথে যুক্ত থাকা ভ্রুনের রক্তের শিরা গুলি বিচ্ছিন্ন হতে পারে, এতেও অক্সিজেন গ্রহনে বিঘ্ন ঘটে। এবং বাচ্চার দেহ খোসার সাথে আটকে শুকিয়ে মারা যায়।

তাপমাত্রা: ভ্রুনের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা জরুরী। তাপমাত্রা যদি বেশি হয় তবে সমস্যা হবে। কারন ভ্রুন যখন বড় হয় তখন ভ্রুনে কিছু তাপ নিজে থেকেই তৈরি হয়। ডিমের ভিতর বাচ্চার তাপের সাথে ইনকিউবেটরের তাপের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে হয়।

যদি ইনকিউবেটরের তাপ বেশি হয় তবে সেই তাপ পরিবাহীত হয়ে ভ্রুনের থেকে যে তাপ তৈরি হয় সেই তাপে বিঘ্ন ঘটিয়ে স্বাভাবিক তাপকে ভেদ করে ভ্রুনকে ইনিউবেটরের ভিতরের তাপের মত উত্তাপ্ত করে তোলে। এই তাপে ভ্রুনের সমস্যা হয় এবং ভ্রুনের মৃত্যু ঘটে। সেই জন্য ইনকিউবেটরে ডিম ফোটার আগে শেষের সপ্তহে তাপ একটু কমিয়ে ভ্রুনের সহনশীল তাপ দেয়া হয়।

তাপ যদি খুব কম হয়, সেক্ষেত্রে ডিমের তাপ কমে গিয়ে ভ্রুনের তাপও যদি শোষিত হতে থাকে,তবে ভ্রুনের মৃত্যু হতে পারে।
শেষের সপ্তহে ডিম ঘুরনো বন্ধ করে ডিমকে স্থীরভাবে রাখতে হয়, যাতে বাচ্চা সঠিক ভাবে কোনো সমস্যা ছাড়া সময় মত বের হতে পারে।
তাহলে বোঝা গেলো, ইনকিউবেটরে সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।

সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে এবং প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব নিখুঁত ভাবে যত্ন নিতে হবে। ডিম ফুটার আগে গভীরভাবে এই বিষয় গুলিতে লক্ষ রাখা হয়, এবং এই আবহাওয়া একদম নিরবিচ্ছিন্ন রাখা হয় বলেই খুব প্রয়োজন ছাড়া শেষের সপ্তাহে ইনকিউবেটরের দরজা খোলা নিষেধ।

একটা কথা মনে রাখতে হবে, মাত্র ২ মিনিটের ভুলেই সকল ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, ইনকিওবেটরে প্রথম ১-২ বার বাচ্চার মৃত্যুর হার কম থাকে, এর পর থেকে বেশী মৃত্যু হার দেখা যায়, এক্ষেত্রে কারন টা হলো বাচ্চা জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হওয়া। করনীয় হলো ইনকিওবেটরে প্রতিবার ডিম বসানোর পূর্বে অবশ্যই মেশিন জীবানুাশক দ্বারা ধৌত করে কিংবা স্প্রে জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে।

আবার লক্ষ্য করে দেখবেন যে, যেসব পাখি চড়ায় বেড়ায় প্রাকৃতিক খাবার খায় এসব পাখির ডিমে বাচ্চা মৃত্যুর হার, খাচায় বন্দি কৃত্রিম খাবার খাওয়া পাখির ডিমের চেয়ে অনেক কম। তাছারাও কিছু রোগে আক্রান্ত পাখির ডিম ইনকিওবেটরে বসালে ডিমের ভিতর বাচ্চা হয় ঠিকই কিন্তু বাচ্চা ডিমের ভিতরেই মারা যায়। যেমন -পুলোরাম রোগে আক্রান্ত পাখির ডিম।

তাই ইনকিওবেটর মেশিনে ডিম বসানোর পুর্বে অবশ্যই ডিমের গুনগত মান খেয়াল রাখতে হবে। যে পাখির ডিম মেশিনে বসাবেন সে পাখির খাবার স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সুস্থ্য সবল পাখির ডিমেই মেশিনে বসানোর চেষ্টা করবেন।
অনেক সময় ইনকিওবেটরে ডিম বসানোর পুর্বে ডিম সঠিক ভাবে সংরক্ষন করা হয়না। সঠিক ভাবে ডিম সংরক্ষণ না করার কারনেও ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যেতে পারে।

উপরোক্ত বিষয় গুলো যথাযথ ভাবে খেয়াল রাখলে এবং পাখিকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে এবং পাখির যথাযথ চিকিৎসা করালে তবেই ডিমর ভিতর বাচ্চা মারা যাওয়ার হার কমানো সম্ভব।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০২নভেম্বর২০২০