দেশে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের উৎপাদন কম। আমদানি বন্ধ কিংবা সীমিত হলে নাগালের বাইরে চলে যায় দাম। এ সংকট মোকাবিলায় মোকাবিলায় অন্যান্য মসলার মতো ‘পেঁয়াজ গুঁড়া’ উদ্ভাবন করেছে বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র। উৎপাদন শুরু হলে দেশের মোট চাহিদার ৩০ শতাংশ পেঁয়াজের পচন রোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানান, কাঁচার চেয়ে পেঁয়াজের গুঁড়া বেশি সাশ্রয়ী হবে এবং সংরক্ষণ করা যাবে ২ বছর পর্যন্ত।
বগুড়া আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (পোস্ট হারভেস্ট) ড. মো. মাসুদ আলম ২০০৯ সালের দিকে পেঁয়াজের পাউডার প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর অবশেষে উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে পেঁয়াজের পাউডার তৈরিতে সফলতা পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ড. মাসুদ আলম জানান, জাপান, চীন, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহু দেশে পেঁয়াজের গুঁড়া ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও সেটি ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় সহজে পেঁয়াজ গুঁড়া উৎপাদনের দেশীয় পদ্ধতি উদ্ভাবন নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এটি ছড়িয়ে দিতে পারলে পেঁয়াজ সংকট আর থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মাসুদ আলম।
পেঁয়াজ গুঁড়া উৎপাদনের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে ড. মাসুদ বলেন, এ পদ্ধতিটি খুব সাধারণ। প্রথমে খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ স্লাইস করে ভাপ দিতে হবে। পরে তা শুকিয়ে নিয়ে সোডিয়াম মেটাবাইসালফেট দ্রবণে চার-পাঁচ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর আবার তা শুকিয়ে নিতে হবে।
এরপর সাধারণ ব্লেন্ডিং মেশিনেই এটি গুঁড়া করা যাবে। যান্ত্রিকভাবে শুকিয়ে পেঁয়াজের গুঁড়া তৈরি করতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা। আর প্রাকৃতিকভাবে করলে কয়েক দিন। ঘরে বসেই তৈরি করা যায় পেঁয়াজের পাউডার। এটি নিশ্চিত এক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করার কথা বললেও আসলে এ পেঁয়াজের গুঁড়া দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে বলে জানান তিনি।
এ গুঁড়ার মান সম্পর্কে এই গবেষক বলেন, পেঁয়াজ গুঁড়া করলে এর গুণগত মান ও স্বাদ আগের মতোই থাকবে। এক কেজি পেঁয়াজ শুকিয়ে গুঁড়া পাওয়া যায় ১০০-২০০ গ্রাম। সম্পূর্ণ দেশীয় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ছোট পরিসরেও উদ্যোক্তারা পেঁয়াজ গুঁড়া উৎপাদন করতে পারবেন, সংরক্ষণও করতে পারবেন সহজেই।
ড. মাসুদ আলম বলেন, পেঁয়াজ কেনার পর ব্যবহারের আগে কিছু অংশ পচে যায়। কিন্তু এ পেঁয়াজ পাউডার করে রাখলে আর পচার শঙ্কা নেই। আমাদের উদ্ভাবিত পেঁয়াজ গুঁড়া পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সংরক্ষণজনিত সমস্যা থাকবে না বললেই চলে। এতে দু’ভাবে সুবিধা পাওয়া সম্ভব। প্রথমত, দেশে সাধারণভাবে পেঁয়াজের যে ফলন হয়, তার বড় অংশ এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে ফলনের অপচয় রোধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত থাকলেও শুধু সংরক্ষণকাল কম হওয়ায় সেগুলোর আবাদ নেই বললেই চলে। গুঁড়া করে সংরক্ষণ করতে পারলে ওই পেঁয়াজের আবাদের প্রসার ঘটাতে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া যাবে।
সূত্র : সমকাল।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৩নভেম্বর২০২০