আমাদের দেশে শীতের শুরু এবং শীতের শেষের সময়টাতে পোল্ট্রি খামারীরা খুব বেশী আতংকে থাকেন। কারন এই সময় দুটিতে পারিবারিক ভাবে পালিত হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে হাজার হাজার বানিজ্যিক খামার নিমেষেই উজাড় হয়ে যায়। এ যেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসের উলা বিবির আক্রমন। পার্থক্য শুধু এতটুকু “হাজার বছর ধরে”উপন্যাসে উলা বিবির কালো ছায়ায় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে গ্রামের পর গ্রাম মানুষ মরে খালি হয়ে যেত, আর আমাদের এই একবিংশ শতাব্দীতে হাসঁ-মুরগি মরে গ্রামের পর গ্রাম খালি হয়ে যায়।
লেখকের সাথে সারা দেশের অসংখ্য প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীদের যোগাযোগ থাকায় বাংলার ঘরে ঘরে এখনো উলার আক্রমন হয় বলে ধারনা করা যায়। শীতের শুরুতে এবং শীতের শেষেই শুরু হয় উলার আক্রমন। গ্রামে পারিবারিক ভাবে লালিত হাঁস মুরগির পাশাপাশি বড় বড় বানিজ্যিক মুরগির খামারও মরে সাফ হয়ে যায়।
পাঠক এবার ভাবতে পারেন আমি হয়তো Superstition অর্থাৎ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। আসলে বিষয়টি এমন যে কেস স্টাডি করে যেটা পেয়েছি গ্রামের মানুষ গুলো এখনো এই হাঁস মুরগির মৃত্যুকে কুসংস্কারের পর্যায়েই রেখেছে। তাদের ভাষায় এটাকে অনেক অঞ্চলে ঝুরা, ঝুমে, ব্যারাম, জুরের, ঝিম পারে, ঝুকের, ঝুরায়, জুকা, ঝুমে, টুপছে, হিরা, মুরি ইত্যাদি আরো অনেক বিচিত্র নামে ডাকে।
না পাঠক আমি একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক কৃষক। এইসব কুসংস্কারে বিশ্বাসী না। লেখায় একটু ভিন্নতা আনার জন্যই একটু রম্য স্টাইলে বলার চেষ্টা করছি। চলুন এবার আমরা পোল্ট্রিতে গল্পকথার সেই উলা বিবিকে খোঁজে বের করার চেষ্টা করি, যার ভয়াল থাবায় খামারীরা নিঃস্ব হয়।
>পোল্ট্রিতে উলা বিবি কে বা কারা ?
শীতের শুরুতে এবং শীতের শেষে দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য ঘটে। দেখা যায় দিনে আবহাওয়া গরম থাকে আবার রাতে হঠাৎ ঠান্ডা পরে যায়। অবস্থাটা এরকম ফ্যান চালিয়ে ঘুমালে ঠান্ডা লাগে, আবার ফ্যান বন্ধ করলে গরম গরম লাগে। শেষ রাতের দিকে ঠান্ডায় কাঁথা মুরি দিয়ে ঘুমাতে হয়। প্রকৃতির এই পালা বদলের সময়টা পশু পাখি হতে শুরু করে সকল প্রাণীর জন্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। খুব সহজেই ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, করাইজার মত রোগ বাসা বাঁধে।
এছাড়া শীতের শুরুতে বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ হতে পরিযায়ী পাখিরা অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। অনেক সময় তারা নিজেদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী ও ফ্লু এর জীবানু নিয়ে আসে। এইসব বিভিন্ন কারনে শীতের শুরু এবং শেষের দিকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ফার্মে রোগ ব্যাধির সংক্রমণ বেশী দেখা দেয়। বিগত বছর গুলোতে চোঁখের সামনে অসংখ্য পোল্ট্রি খামার শূণ্য হয়ে যেতে দেখেছি শীতের শুরু এবং শেষে।
>উলা বিবিকে দমন করার উপায়-
1) বয়স অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা।
2) বায়োসিকিউরিটি অর্থাৎ জৈব নিরাপত্তা জোড়দার করা।
3) লালন পালনের উদ্দেশ্যে হাট-বাজার হতে সবরকম প্রাণী ক্রয় করার পর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোয়ারেনটাইন করা।
4) একদিন পরপর শেডের ভিতর এবং বাহিরে জীবানুনাশক স্প্রে করা (ভ্যাকসিন দেয়ার ৩ দিন আগে ও ৩দিন পরে করবেননা)।
5) সপ্তাহে একদিন প্রতি ১০বর্গফুট জায়গার জন্য ২৫০ গ্রাম শুকনো গুড়া চুন এবং ০৫ গ্রাম কপার সালফেট (তুঁতে) মুরগি একপাশে সরিয়ে মেঝের লিটার উলট পালট করে ভালকরে মিশিয়ে দিবেন।
বিনা প্রয়োজনেই না জেনে, না বুঝে, কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে হুটহাট এন্টিবায়োটিক ব্যবহার পরিহার করুন। ব্যবস্থাপনা ভাল করুন। ইনশা আল্লাহ উলা বিবি অর্থাৎ মড়ক আপনার শেডে বাসা বাঁধতে পারবেনা।
– চাষী মানিক
ফাউন্ডার
Livestock (প্রাণিসম্পদ) Master’s Community School.
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৩নভেম্বর২০২০