কৃষিজমিতে ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ। এ নিয়ে প্রায় সব কৃষককে কম-বেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। তবে ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ‘ইরি কোকুন’ কৃষকের সেই দুশ্চিন্তা কমিয়ে স্বস্তি দিয়েছে।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কৃষক এখন ‘ইরি কোকুন’-এর বীজ সংরক্ষণ করছে এবং অতীতের তুলনায় অধিক মুনাফা অর্জন করছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফসল উৎপাদনে বীজ যত মানসম্মত হবে, ফলনও তত বেশি হয়। কৃষি খাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হলে উন্নত ও মানসম্মত বীজের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ফসলি জমিতে উন্নত জাতের বীজের ব্যবহার হলে কৃষকের পক্ষে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।
কালকিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম’ (এনএপিটি) প্রকল্পের আওতায় কৃষকের বীজ সংরক্ষণের জন্য ফিলিপাইন থেকে আনা হয় ‘ইরি কোকুন’। এটি দেখতে সাদা রঙের একটি বড় বস্তার মতো। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বস্তাটি তৈরি করা হয়েছে। একটি ইরি কোকুনে ৩০ জন কৃষক একসঙ্গে ২৭ মণ বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে। ফলে বীজ সংরক্ষণে কৃষকের আর কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
ইরি কোকুনে বীজ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে এটিকে ঘরের ভেতর বা খোলা আকাশের নিচেও রাখা যাবে। ঝড়বৃষ্টি বা রোদের তাপেও ইরি কোকুনে থাকা বীজের গুণগত মান নষ্ট হবে না। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে এক বছর পর্যন্ত কোনো অসুবিধা ছাড়াই বীজ সংরক্ষণ করা যাবে।
ছয় বছর আগে কৃষি বিভাগ থেকে মাদারীপুরে একটি ইরি কোকুন দেওয়া হয়, যা কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের কালাইসরদারের চরের ৩০ কৃষকের একটি দলের কাছে সরবরাহ করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, কালাইসরদারের চরের ফয়জুল হকের বাড়িতে এ ইরি কোকুনটি রাখা হয়েছে। তিনি তার ঘরের আঙিনায় একটি কাঠ পেতে রেখেছেন, যা ব্যবহার করছে ৩০ কৃষক। ইরি কোকুনটির মধ্যে কৃষক বিরি ধান-৪৮ (আউশ) জাতের বীজ সংরক্ষণ করেছে।
ফয়জুল হক বলেন, আগে সনাতন পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হতো। এখন অত্যাধুনিক ও সহজ পদ্ধতিতে বীজ রাখায় আমরা ভালোই সুফল পাচ্ছি। এতে ঝামেলা নেই, বীজও নষ্ট হয় না। এর ধারণক্ষমতা অনেক। তিনি আরও বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বীজের মান অটুট থাকে না। আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে খরচ বেশি হয়। আমরা আগে বীজ মাটির পাত্র, বোতল, পট, টিন, ড্রাম, বস্তায় সংরক্ষণ করতাম। তখন বীজের গুণগত মান নষ্ট হতো। অদৃশ্য ছিদ্র দিয়ে বাতাস মাটির বীজপাত্রের ভেতরে ঢুকে বীজের মান নষ্ট করে দিত। এক কথায়, তখন বীজ সংরক্ষণে আমাদের কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জের ছিল।
এনায়েতনগরের কৃষক তাহেল হাওলাদার বলেন, আমরা এখনও সনাতন পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করি। ফলে ঝামেলায় পড়তে হয়। আমরা অন্য এলাকার কৃষক হওয়ায় ফয়জুল হকদের দলে নেই। তাই আমরা ইরি কোকুনে বীজ রাখতে পারি না। আমাদের দাবি, সিআইজির তালিকাভুক্ত সব দলের কাছে এ ইরি কোকুন সরবরাহ করা হোক।
কালকিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, এনএপিটি প্রকল্পের আওতায় ফিলিপাইন থেকে আনা ইরি কোকুনের ব্যয় অনেক। তাই সাধারণ কৃষক কিনতে পারছে না। তবে সিআইজির গ্রুপে থাকা কৃষকের এ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণে আগ্রহ অনেক দেখা যাচ্ছে। ইরি কোকুন ব্যবহার করে কৃষক নিজেদের বীজ নিজেরাই সংরক্ষণ করতে পারবে। এমনকি তারা বীজ সংরক্ষণ করে তা বিক্রিও করতে পারবে। এতে প্রান্তিক চাষি লাভবান হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮নভেম্বর২০২০