একজন খামারী বিভিন্ন কারণে ডাক্তারকে প্রশ্ন করতে পারে তবে তা কখন ,কি ,কিভাবে করা উচিত সেগুলো জানা দরকার ।খামারী এবং ডাক্তার উভয়কে বিষয় গুলি ক্লিয়ার থাকা দরকার ।প্রশ্ন করা এবং উত্তর দেয়ার মাঝে একটু সমস্যা আছে।উভয় পক্ষকে সচেতন হওয়া দরকার,আগে জানতে হবে কি কি বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়।
নিচে আলোচনা করা হল।
প্রশ্নের বিভিন্ন স্টেজ আছে
যেমন
.১।অসুস্থ হলে খামারীর প্রশ্ন হবে
রোগের ক্ষেত্রে
অসুস্থ হলে খামারীর প্রশ্ন হবে কি কারণে অসুস্থ হয়েছে,রোগের নাম কি বা কারণ কি, প্রডাকশন কত কমবে ,সুস্থ হতে কত দিন লাগবে ,কতগুলি মারা যেতে পারে।প্রডাকশন উঠতে কতদিন লাগবে।কি চিকিৎসা দিবো।চিকিৎসা খরচ কত হতে পারে।
এক্ষেত্রে ডাক্তারের কাজ হলোঃ
হিস্ট্রি নেয়া,পোস্ট মর্টেম , সুযোগ থাকলে টেস্ট করা।
অসুস্থ হলে খামারী ডাক্তারকে যে প্রশ্ন করার দরকার নাই
যেমন ঝুঁটি সাদা বা ফ্যাকাশে কেন।ডিম কমে গেল কেন,খাবার কম খায় কেন ,পায়খানা এমন কেন,গড় গড় শব্দ হচ্ছে কেন,ডিমের কালার খারাপ কেন ,প্যারালাইস হচ্ছে কেন ।
বিভিন্ন সময় খামারীরা যেসব ভুল প্রশ্ন করে থাকে যেমন
#রানিক্ষত (ভেলোজেনিক) হইছে খামারী প্রশ্ন করে মুরগি মারা যাচ্ছে কেন?
রানিক্ষেত হলে মুরগি ত কিছু মারা যাবেই।
#এ আই(৫) হইছে খামারীর প্রশ্ন মরা ত বন্ধ হচ্ছে না।
মরা ত বন্ধ হবার কারণই নাই।
#কলেরা হইছে খামারীর প্রশ্ন পায়খানা পাতলা কেন।
কলেরাছলে ত পায়খানা পাতলা হতেই পারে।
#আই বি হইছে ,খামারীর প্রশ্ন করে মুরগি ত সুস্থ ডিম আঁকাবাঁকা এবং সাদা,খোসা পাতলা হয় কেন?
আই বি হলে এমন হবে তা মনে রাখে না।
ফার্মে আই বি হইছে খামারীকে বলা হল ৭০% ফার্মের ক্ষেত্রে প্রডাকশন আগের অবস্থায় যায় না ৩০% এর ক্ষেত্রে আগের অবস্থায় যায়।
ভাল হতে ১-২ মাস লাগে ।
#ফার্মে মেরেক্স হইছে ,খামারীকে বলা হইছে ভাল হতে ১-৩ মাস লাগবে ,প্রতি সপ্তাহেই কিছু কিছু মুরগি মারা যাবে ।কিন্তু খামারী কথা শুনবে না ,বিভিন্ন ডাক্তার /বিভিন্ন লোকের কাছে পরামর্শ চাইতে থাকবে এবং বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা করতে থাকবে।
#মুরগি অসুস্থ ডাক্তার এন্টিবায়োটিক পানিতে দিয়েছে বা মাংসে ইঞ্জেকশন দিয়েছে।
খামারী প্রশ্ন করে এন্টিবায়োটিক দেয়ার কারণে মুরগির ডিম কমে গেছে।মুরগি যে অসুস্থ (কলেরা ,টাইফয়েড ,রামিক্ষেত) হয়েছে তা ভুলে যায়।
সব দোষ এন্টিবায়োটিকের, যে কোন বড় রোগের ক্ষেত্রে প্রডাকশন ৫-৩০% কমে যেতে পারে।সেটা মাথায় রাখে না।
খামারি ৭দিন পরেই কল দিয়ে বলবে স্যার মুরগির ত ডিম বাড়ে না।আগেই ত বলা হইছে তবুও বলবে।
ফার্মে এ আই (৯) হইছে বলা হল ভাল হতে প্রায় ১০-৩০দিন লাগবে ,৩দিন পরেই কল দিয়ে বলবে স্যার ভাল হয় নি।
ডাক্তার মুরগি দেখে খামারীকে সব বিস্তারিত লিখে এবং বলার পর চলে আসার সময় খামারীর প্রশ্ন স্যার কি হইছে ,কি করতে হবে একটু বলে যান।
এই রকম বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করে ডাক্তারদের পেরেশানি করবে বা কথা শুনবে না।
২।প্রডাকশনের ক্ষেত্রে
যদি মুরগি অসুস্থ না হয় বা মারা না যায় বা বাহ্যিক কোন লক্ষণ না থাকে তাহলে খামারীর প্রশ্ন হবে
বয়স অনুযায়ী মুরগির প্রডাকশন কম ,কারণ কি এবং কি করতে হবে
এক্ষেত্রে ডাক্তারের কাজ হিস্ট্রি নিয়ে বা ফার্ম ভিজিট করে পরামর্শ দেয়া।
৩।বায়োসিকিউরিটি
ইমার্জেন্সি এবং জরুরী বায়োসিকিউরিটি কি কি তা খামারীকে জানতে হবে।
সব বায়োসিকিউরিটি কমার্শিয়াল ছোট খামারীর পক্ষে মেনে চলা সম্বব না,সব মানতে গেলে ৮০% ফার্ম থাকবে না।
তবে যতটুকু সম্বব তা মেনে চলতে হবে।
খামারীর যত টুকু দরকার ডাক্তার ততটুকুই বলে।
বায়োসিলিউরিটির ক্ষেত্রে খামারীর প্রশ্ন হবে আমার কত টুকু মেনে চলা খুব দরকার এবং আমার দ্বারা কতটুকু মানা সম্বব।
সে অনুযায়ী ডাক্তার? কনসাল্ট্যান্ট উপদেশ দিবে।
এর পরেও সমস্যা হতে পারে ।হলেও ডাক্তারকে বলা যাবে না যে স্যার আপনি যদি ঐটা বলতেন তাহলে এই সমস্যা হত না।
৪।ভিজিট অনুযায়ীই সেবা আশা করা উচিত।
ডাক্তারের ফলাফল দেখে ভিজিট দিতে হবে ,কত সময় নিয়ে সেবা দিছে সেটা বিবেচ্য বিষয় না। মোটর গাড়ির চেয়ে ঠেলাগাড়ি যে চালায় সে কিন্তু বেশি পরিশ্রম করে অথচ মোটর গাড়ি অনেক আগে চলে যায়)
সময়ের চেয়ে কৌশল বা দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কারণ ২ঘন্টার কাজ ২মিনিটেই করা যায় যদি প্রযুক্তি/যোগ্যতা থাকে (তাই আউটপুট দেখতে হবে)
৫।প্রেসক্রিপশন
প্রেসক্রিপশন করার পর খামারী প্রশ্ন করে স্যার এই গুলো দিলে মুরগির সমস্যা/ক্ষতি হবে না ?
অনেকে আবার বলে এগুলো দিলে প্রডাকশন কমে যাবে না।(মুরগি অসুস্থ হলে ত প্রডাকশন কমবেই )
এটার জন্য মেডিসিন দায়ী না।ধরে নিলাম মেডিসিন দিলে প্রডাকশন কমবে ।কমলে কি মেডিসিন দিবো না বা দেয়া লাগবে না।
না দিলে কি ভাল হবে।যা দরকার তা দিতে হবে।
খামারীকে মনে রাখতে হবে যা দরকার ডাক্তার তাই করবে ।
৬।একই মুরগি বিভিন্ন ডাক্তারকে দেখায়।কারো উপর ভরসা পায় না।
আগে ডাক্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং বিশ্বাস করে ্সব করতে হবে।
একেক জনের একেক ফর্মুলা নিয়ে অর্ধেক অর্ধেক খাওয়ালে কাজ হবে না।
একজন নীতিবান ডাক্তার সব সময় খামারীর কথা চিন্তা করে প্রেসক্রিপশন করে।
৭।মুরগি মারা যাচ্ছে বা ডিম বাড়ছে না ডাক্তার বলল মুরগি ভাল আছে ।
খামারী বলল ভাল নাই।
এর মানে কি?
প্রতিটি রোগের বিভিন্ন স্টেজ /মাত্রা/স্ট্রেইন/তীব্রতা আছে।
রোগের স্ট্রেইন/তীব্রতা অনুযায়ী মর্টালিটি বা প্রডাকশন কম বেশি হয়।
যেমন আই বি হলে প্রডাকশন ৮৫% উঠায় ডাক্তার বলল ভাল প্রডাকশন।খামারী এতে খুশি না সে ৯০-৯৫% চায়।
আই বির ক্ষেত্রে প্রডাকশন ৭৫-৮৫% এর মধ্যে থাকে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।কোন কোন সময় ৯০ উঠে তা বিরল।
এক খামারীর( ১০০০ মুরগি) ফার্ম ৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হইছে ।প্রতিসিন ১-২ টাকা করে মুরগি মারা যাচ্ছে।
ডাক্তার বলল ভাল আছে।কারন দিনে ২-৩ টা করে মারা যাওয়া বেশি না।
(৯) ভাইরাসের মর্টালিটি ০-১৫%।তাই রোগের ধরণ অনুযায়ী সব কিছু হয়।সর্বোচ্চ কত হতে পারে বা কোন রোগের জন্য কত মর্টালিটি হয় তা জানা না থাকলে এমনই হয়।
৮।খামারী মরা মুরগি দিয়ে বলবে স্যার দেখেন কি সমস্যা ।হিস্ট্রি বা লক্ষণ কিছুই বলতে চায় না।
হিস্ট্রি এবং লক্ষণ ছাড়া রোগ নির্ণয় প্রায় অসম্বব এটা বুঝে না।টেস্ট করে রোগ নির্ণয় করতে গেলেও হিস্ট্রি এবং লক্ষণ জানা দরকার কারণ সব গুলো টেস্ট ত আর করার দরকার নাই বা সম্বব না।হিস্টি , লক্ষণ ও পোস্ট মর্টেম করে টেস্টের সংখ্যা কমানো হয়।
৯।যদি ফার্মে বার্ড ফ্লু (৫) স্টেইন দেয় তখন চিকিৎসা দেয়া হয় না কিন্তু কিছু খামারী কালিং করতে চায় না ।অনুরোধ করর চিকিৎসা দেয়ার জন্য ,বাধ্য হয়ে বলা হয় কিছু মেডিসিন চালিয়ে দেখেন।ভাল না হলে কালিং/বিক্রি করে দেন।
এক্ষেত্রে খামারী কয়েকদিন পর বলে স্যার কি চিকিৎসা দিলেন মুরগি সব মারা গেছে অন্য খামারীও বলে চিকিৎসা ভাল দেয়নি বা এই মেডিসিনের জন্য মুরগির বেশি মারা গেছে।
তাই খামারীদের কথা অনুযায়ী কাজ করা থেকে বিরত থাকাই ভাল।
১০।অনেক খামারী আছে ডাক্তারদের বলবে স্যার ফার্ম টা ঘুরে দেখেন ত কোন সমস্যা আছে কিনা।
যদি সাথে ফার্মের কর্মচারীকে দিয়ে দেয় বা খামারী সাথে থাকে তাহলে ঠিক আছে, ডাক্তার মুরগির ওজন ,সুস্থতা,ডিমের কালার,উকুন,পায়খানা সব কিছু (হিস্ট্রি) বিবেচনা করে আক্টা ধারণা করতে পারে।আর যদি একা ডাক্তারকে পাঠায় তাহলে ঠিক নাই।এক্ষেত্রে ফার্মে না যাওয়ায় ভাল।
যদি মুরগি মারা যায় তাহলে খামারীকে সব হিস্ট্রি দিতে হবে এবং কম পক্ষে ৩টা মরা বা অসুস্থ মুরগি দিয়ে পোস্ট মর্টেম করার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিছু খামারী আছে হিস্ট্রি বা লেশন বলতে চায় না ,এসব খামারীর ফার্ম করার দরকার নাই বা সেখানে যাওয়ার দরকার নাই বা দিতে বাধ্য করতে হবে।।
কিছু খামারী আছে ১টা মরা বা অসুস্থ মুরগি দিয়ে বলবে স্যার দেখেন কি হইছে।এই মুরগি না দেখাই ভাল কারণ এতে লেশন পাওয়া নাও যেতে পারে তাছাড়া এক্টা মুরগি দেখে হাজার হাজার মুরগির ডিসিশন দেয়া সম্বব হয় না।
কোন রোগ ভাল হতে কত দিন লাগে(মিক্স ইনফেকশন হলে কিছু কম বেশি হবে)
১। এ ই(এনসেফালাইটিস) লেয়ারে হলে ১৪দিনের মধ্যে প্রডাকশন ঠিক হয়ে যায়.
২। আই বি ১ -৩মাস (৪০% এর ক্ষেত্রে ভাল হয় না)
৩। মেরেক্স ১-৬ মাস(৫০ সপ্তাহের পর এমনি ভাল হয়ে যায়)
৪।করাইজা ১-৩ সপ্তাহ
৫।এ আই ১-২ সপ্তাহ( এলাকা এবং স্ট্রেইন ভেদে ১ মাস ও লাগতে পারে)
৬।নেক্রোটিক এন্টারাইটিস ৫-১০দিন
৭।ই ডি এস ১ -২মাস
৮।পক্স ২-৪ সপ্তাহ
৯। আই বি এইচ ৭-১০দিন
১০।গাম্বোরো ৪-৫ দিন
১১। আই এল টি ১-২ সপ্তাহ কোন কোন সময় ৪ সপ্তাহ
১২।স্টাফাইলোকক্কাস ১-২ মাস
১৩।আমাশয় ৫-৭দিন
১৪ । লিউকোসিস ১-৪ মাস
১৫।রানিক্ষেত ৭-১০দিন কোন কোন সময় বেশি লাগতে পারে,অনেক সময় ফার্ম খালি হবার আগ পর্যন্ত মরে.১-২ মাস।
১৬।রিও ২-৩ সপ্তাহ
১৭।পেঠে পানি জমা ১-৪ সপ্তাহ ব্রয়লারে হয়
১৮ ।টাইটার উঠতে লাগে ৭-১৪দিন
3।কোন রোগ এক মুরগি থেকে আরেক মুরগিতে ছড়ায় না
নিউমোনিয়া
4.কোন রোগের চিকিৎসা কমার্শিয়াল মুরগিকে না করে মুরগির বাবা মাকে করা উচিত।
রিও
আই বি এইচ
এন্সেফালাইটিস
5. সব ফার্মে পাওয়া যায় কোন রোগ
সালমোনেলোসিস
মাইকোপ্লাজমোসিস
আমাশয়
মাইকোটক্সিকোসিস
ই -কিলাই
6.কোন রোগ বার বার ফিরে আসে।
কলেরা
করাইজা
7 কোন রোগ রিপিড হয় না
পক্স
এন্সেফালাইটিস
8.কোন রোগ একবার হলে ফার্ম থেকে সহজে দূর করা যায় না
পক্স
মেরেক্স
গাম্বোরো
কলেরা
আমাশয়
এ আই
এন ডি
9.কোন রোগে ওজন কমে যায়
স্টেফাইলোক্কোসিস
রিও
আমাশয়
মেরেক্স
10.কোন রোগকে সবাই ভয় পায় এবং মর্টালিটি ০-১০০% হতে পারে
এ আই
রানিক্ষেত
১১।কোন রোগের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা ব্রিডারে করা উচিত
সালমোনেলা,মাইকোপ্লাজমা,মেরেক্স,লিউকোসিস
নোটঃ
মতবাদ ১। খামারীর কিছু জানার দরকার নাই।আমিও সব জানিনা।এতে উন্নতি সম্বব না।দিন এনে দিন খাওয়ার মত।অন্ধ ঘরে সবাই এক ,এই রকম হবে।
মতবাদ ২।খামারীকে কিছু ধারণা থাকতে হবে ,ডাক্তারকেও স্পেশালিস্ট হতে হবে।এতে সবাই এগিয়ে যাবে দেশের উন্নয়ন হবে।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর হবে।খামারী ও ভেটদের মাঝে সীমারেখা থাকবে।
আশা করি এখন আর এসব সমস্যা হবে না যদি কেউ পড়ে থাকে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১নভেম্বর২০২০