আমাদের দেশে অধিকাংশ খামারি কিছু না জেনেই খামার গড়ে তোলে যার ফলে অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।তাই বলছি হতাশ হবেন না সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার করুন আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন ।
√গরু পালতে হলে ঘাসের চাষ করুন, ভুট্টা, জার্মান, সুইট জাম্বো এই তিন ঘাস দেশের সব খানে সবরকম মাটিতে করা সম্ভব। খালি সার প্রয়োগ আর মাটির পিএইচ টা ঠিক করে নেবেন যত টুকু সম্ভব।এখন বলতে পারেন এত ঘাস কি করবো একসাথে।সোজা উত্তর সাইলেজ করুন ভুট্রার আর জার্মান কেটে কেটে খেতে দিন।সুইট জাম্বো সাইলেজ বা ফ্রেশ যেভাবেই হোক খেতে দিন।
√যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ সে হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে খড় খাওয়ানোর প্রক্রিয়া। কিন্তু খড়ের পুষ্টিমান খুব নিচের দিকে থাকাতে এটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সাথে খুব বেশী কাজে আসেনা। কিন্তু একটু যদি পরিবর্তন করে নিই তাহলে কিন্তু খূব কাজে দেবে।মোটাতাজা করনের জন্য হাই প্রোটিন আর মোলাসেস কে গাজন করে খেতে দিলে হতে পারে খড়ের চমৎকার ব্যাবহার। খড় কিনতে অনেক খরচ হয় সেখানে একটু খানি বিজ্ঞান খাটালে এই নির্জীব খড় হতে পারে পুষ্টি সহায়ক খাদ্য। হাই প্রোটিন আছে ভুট্রা ইস্ট সাপ্লিমেন্ট ইউরিয়া এসবের সাথে।মেটাবলিজমের ডাইরেক্ট সম্পর্ক প্রাণীর বডি ওয়েটের সাথে তাই ওজন জানাটা বাঞ্ছনীয়।
√দুধের গরুর জন্য এই হাই প্রোটিন খাবারের চেয়ে একটু ফাষ্ট মেটাবলাইট ব্যাবহার করতে হবে। যেন তার শরীর দুধ উৎপাদনে ব্যাস্ত থাকে মাংস তৈরীতে নয়।
√দিবালোকের মত নির্জলা কথা হলো আপনার পর্যাপ্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাস থাকলে গরুর জন্য দানাদার খাবারে প্রয়োজন নাই। আর দানাদার যদি দিতেই হয় একে একটু প্রসেস করে নিলে উচ্চ মান সম্পন্ন করে নেয়া সম্ভব। দানাদার খাবারের জন্য প্রথম পছন্দে রাখুন মোটা গমের ভূসি, চাল যুক্ত কুড়া বা পলিশ কুড়া, সয়াবিন মিল, ভুট্রার গুড়া। তবে ভুসির দাম যেহেতু বেশি তাই খামারি ভাইদের বলি আপনারা ভুট্রার পরিমান বাড়াতে পারেন।
√একটা কথা মনে রাখবেন যত কিছুই করবেন একটু ধীরে পাচ থেকে সাতদিন সময় নিয়ে করবেন।
√ খাবারের সাথে একটু কালোজিরা আর লাইমস্টোন ও বিটলবন আপনার খাদ্য মানকে পরিপূর্ণ করবে মিনারেল ও ক্যালসিয়াম সহ।
√আর গরুকে খাবার দিন তার বডি ওয়েট ও দুধালো গাভীর জন্য বডি ওয়েট ও দুধ হিসাব করে ।শক্তির পরিমান নির্ণয় করুন মেগাজুল আর ক্রুড প্রোটিন হিসাব করে।সাধারণত প্রতি একশ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য দশ মেগাজুল শক্তি ও প্রতি কেজি দুধের জন্য পাচ মেগাজুল শক্তি প্রয়োজন হয়।আর প্রতি কেজি দুধের জন্য একশ গ্রাম ক্রুড প্রোটিন ও প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য এক গ্রাম ক্রুড প্রোটিন লাগে।
√এই সহজ ব্যাকরণটা মেনে চলুন আর গরুকে দিন টলটলে পরিস্কার পানি, যেটা চাইলে আপনিও খেতে পারেন; প্লিজ এখানে কোন রকম চালাকি করবেন না। পনের দিনে পাবেন কাঙ্খিত ফলাফল।
√ দশ লিটারের বেশী দুগ্ধবতী গাভীর জন্য রাখুন বিশেষ যত্ন। তার বাটের যত্ন নিন সে আপনার মনের ও ব্যাবসার যত্ন লক্ষী হবার দায়িত্ব নেবে।
√ গরুকে বিট লবণ চেটে খেতে দিলে তার শরীরের মিনারেল ঘাটতি হবেনা।
√মনে রাখবেন ঘাসের বিকল্প নাই খড় বা হাইড্রোপনিক কখনো ঘাসের বিকল্প হতে পারেনা।
(ডা মোঃ শাহীন মিয়া), বিসিএস প্রাণিসম্পদ, ভেটেরিনারি সার্জন, চৌদ্দগ্রাম ,কুমিল্লা।ডি.ভি.এম(সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)০১৭১৬-১৬২০৬১
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫নভেম্বর২০২০