কপি গোত্রের মধ্যে এক অন্যতম সবজি হল ওলকপি। শীতকালে আমাদের দেশে কোন কোন অঞ্চলে এর চাষ করা হয়ে থাকে। তবে এটি ফুলকপি কিংবা বাঁধাকপির মত এতটা জনপ্রিয় নয়। ওলকপি বেশ পুষ্টিকর। অন্যান্য কপির তুলনায় খুব কম সময়ে বেশ ফলন পাওয়া যায় এবং সাধারণ অবস্থায় বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের দেশে সাধারনত দুই ধরণের ওলকপি দেখা যায়। তাঁর একটি হল হালকা বা সাদাটে সবুজ এবং অন্যটি হল বেগুনি সবুজ। আসুন জেনে নেই ওলকপি চাষের পদ্ধতি।
জলবায়ু ও মাটি
ওলকপি চাষের জন্য ঠাণ্ডা আবহাওয়া দরকার। চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমির উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি সবচেয়ে ভালো।
ওলকপি এর উল্লেখযোগ্য জাত
আমাদের দেশে বেশ কয়েকধরনের ওলকপির চাষ করা হয়। তাঁরমধে উল্লেখযোগ্য হল- অনুপম, এক্সপ্রেস মল্লিকা এফ-১, আর্লি মল্লিকা এফ-১, বাম্পার হারভেস্ট এফ ১, নিমজিন এফ-১, ক্রান্তি এফ-১, ইউনিক বল এফ-১, নিমাজিন এফ-১ ইত্যাদি। এছাড়াও ওলকপির হালকা সবুজ রঙের জাত আর্লি হোয়াইট ভিয়েনা এবং বেগুনি রঙের জাত আর্লি পার্পল ভিয়েনা।
চারা তৈরি করবেন
ওলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজ বোনার আদর্শ সময় ভাদ্র-কার্তিক মাস পর্যন্ত বপন করা যায়। বীজতলার আকার ১ মিটার চওড়া ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিৎ। সমপরিমান বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। বীজতলায় বীজ বপনের পর সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় বীজ ছিটিয়ে বা সারি করে বুনতে হবে।
জমি তৈরি ও চারা রোপন
চারায় ৫ থেকে ৬ টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। বীজতলা থেকে চারা গাছ তুলে সারি থেকে সারি ৩০ সে: মি: এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০-২২ সে:মি: করে লাগাতে হবে। সাধারনত ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।
সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
ওলকপি চাষ করার সময় জমিতে সঠিক নিয়মে সার দিতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার, পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ওলকপি চাষে জমিতে শতকপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ কেজি গোবর সার, ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ইউরিয়া সার এবং ৪০০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম এমওপি সার, ৭৫০ গ্রাম জিপসাম সার ও ২০গ্রাম জিংক সালফেট বা দস্তা সার দিতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
ওলকপি চাষে প্রচুর পানি লাগে। সারির মাঝের মাটিতে উপরি সার দিয়ে সেই মাটি আলগা করে গাছের গোঁড়ায় টেনে দিলে নালা তৈরি হবে। সেই নালায় সেচ দিতে হবে।
আগাছা ও নিড়ানি
গাছ বড় না হওয়া পর্যন্ত জমির আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমন
ওলকপির তেমন কোনো পোকামাকড় নেই। মাঝে মাঝে লেদা পোকা ঘোড়া পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। কোনো কোনো সময় মাস্টার্ড ফ্লাই বা করাত মাছি এবং পাতার বিটল পাতার ক্ষতি করে। ওলকপির পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধসা বা ড্যাম্পিং অফ, গদাই মূল, মোজাইক ও পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।
ওলকপি সঠিক সময়ে গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ওলকপি কচি থাকতে তোলা উচিৎ। না হলে আঁশ হয়ে যায় ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। হাইব্রিড জাতের ওলকপিতে হেক্টরপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টন ওলকপি পাওয়া যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৮নভেম্বর২০২০