কোন জাত বা ব্রিডের গরু নিয়ে হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার শুরু করবেন
দেশে শিক্ষিত লেখাপড়া জানা তরুনদের মধ্যে অনেকেই নিজ গ্রামে বা কয়েকজন মিলে খামার গড়ার চিন্তা করে থাকে, এমনকি চাকরি করছে পাশাপাশি কিছু একটা করা দরকার এমন কিছু ভেবেও দেখছি অনেকে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামারের দিকে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
খামার শুরু করতে গিয়ে প্রথমে যে প্রশ্ন আসে সেড কীভাবে তৈরী করবে এবং এরপরের প্রশ্নই হলো কোন জাতের গরু দিয়ে এই হৃষ্টপুষ্টকরণ
খামার করবে?
আমাদের বাজারে প্রধানত মোটা দাগে বলতে গেলে ৩ টি জাত চোখে পড়বে ১) দেশী গরু ২) ফ্রিজিয়ান ক্রস ৩) শাহীওয়াল ক্রস।
কসাইয়ের বাজার বলেন আর কোরবানীর বাজার বলেন এই ৩ জাতের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে সবাই। নতুনদের জন্য প্রশ্ন হলো কোন জাত নিয়ে তারা কাজ শুরু করবে।
কোন জাত নিয়ে কাজ শুরু করবেন এটা ঠিক করার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন ব্যবসায়ীক পরিকল্পনা নিয়ে আপনি আগাবেন।
আপনি যদি সারা বছর মাংস প্রোডাকশন করবেন এবং সাপ্লাই দেবেন ভেবে থাকেন তাহলে আমি নতুনদের জন্য বলবো ফ্রিজিয়ান ক্রস গরু লালন পালন করতে।
এটি এমন একটি জাত যা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং ভাল সুষম খাদ্য পরিবেশন করলে এই গরু প্রতিদিন ১ থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
বাজারে যদি ১৮/২০ মাসের ফ্রিজিয়ান শুকনা দেখতে গরু পাওয়া যায় আপনি চোখ বন্ধ করে কিনে লালন পালন করতে পারেন ৪ থেকে ৬ মাসের জন্য বা আরো বেশী সময়ের জন্য।
সাধারনত ২ বছর বয়সের পর থেকে এর জাতের প্রতিদিনিকার গ্রোথ খুব ভাল হওয়া শুরু করে। অনেকে ৭/৮ মাসের বাচ্চা কিনে এক বা দেড় বছরের জন্য লালন পালনও করে থাকে। যাদের দুগ্ধ খামার আছে তাদের তো কথাই নেই, খামারে জন্ম নেয়াএই জাতের ষাড় বাচ্চা খুব সহজেই লালন পালন করে লাভবান হতে পারেন।
আর যারা মনে করেন শুধু কোরবানীর জন্য লালন পালন করবেন তাহলে বলবো লাল শাহীওয়াল ক্রস গরু লালন পালন করতে। কারন কোরবানীতে ক্রেতারা লাল রঙয়ের কুজ ওয়ালা গরু কিনতে ও অর্থ খরচ করতে বেশী আগ্রহী থাকে।
এই লাল শাহীওয়াল ক্রস গরুর বর্তমানেএখন এত চাহিদা এবং উচ্চমুল্য যা সাধারন খামারিদের পক্ষে কিনে কোরবানীতে বিক্রি করে লাভবান হওয়া অত্যান্ত কঠিন। দাম বেশী কারন চাহিদা বেশী, সোজা হিসাব।
বাজারে এই লাল শাহীওয়াল ২ ব্লাড লাইনের বা ক্যাটাগরীর পাওয়া যায়। একটি হলো, আমাদের দেশী শাহীওয়াল ক্রস এবং অন্যটি হলো ওপার থেকে আসা উন্নত জাতের শাহীওয়াল ক্রস। ছোট অবস্থায় এই দুই ব্লাড লাইন আপ দেখতে একই রকম দেখাবে।
দেশী শাহীওয়াল ক্রস ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজির বেশী ওজন আসবেনা। আর উন্নতজাতের শাহীওয়াল ওপার থেকে যেগুলো আসছে সেগুলো ৫০০ কেজির থেকে ৮০০ কেজি পর্যন্ত গ্রোথ আসবে। অভিজ্ঞরা এই জাত সহজে চিনতে পারলেও, নতুনরা এই জায়গাটাতেই সব থেকে বেশী ভুল করে।
দেখা যায় কিনে আনার পরে ওজন প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম বাড়ছে, অথচ উন্নত জাতের শাহীওয়ালগুলো বাড়ছে প্রতিদিন ১ কেজি থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত।
আমাদের দেশে কি ভাল উন্নত জাতের শাহীওয়াল তৈরী হচ্ছে না? আমি বলবো খামারিরা এখন মনযোগ দিচ্ছে খামারে ভাল মানের শাহীওয়াল সিমেন ব্যবহার করে উন্নত জাত তৈরী করতে।
আমাদের দেশে শাহীওয়াল গাভী পালন খুবই কম হয় যে কারনে এই সমস্যা। সাধারনত দেশী গরুকে শাহীওয়াল সিমেন দিয়ে ক্রস করিয়ে বাচ্চা তৈরী করা হয় যার কারনে আমাদের দেশের শাহীওয়ালে ক্রসের মান এখনো ততটা উন্নত নয় যতটা পাশের দেশগুলোতে দেখা যায়।
ভারত পাকিস্তানে অনেক অনেক উন্নত ব্লাড লাইনের শাহীওয়াল আছে বিধায় সাধারনত বর্ডার ক্রস গরুগুলোই এত ভাল মানের হয়ে থাকে। দেশ টু দেশ তাদের ন্যাচারাল রিসোর্সের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের তারতম্য ঘটে থাকে। আমাদের দেশেও যারা ভাল মানের মা শাহীওয়াল থেকে শাহীওলাল বাচ্চা তৈরী করছে তাদের খামারেও ভাল জাতের শাহীওয়াল পাওয়া যায়।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো, গতানুগতিক সবাই যা করে সেই ব্যবসার দিকে না ঝুকে নিজেকে ডাইভারসিফাইড করার চেস্টা করুন।
দুধ বিক্রি করতে হবে, ফ্যাটেনিং করতে হবে এর দুই ব্যবসার মধ্যে ঘোরপাক না করে যারা চড়া দামে উন্নতজাতের বাছুর কিনছে বাজার থেকে আপনি আপনার খামারে তৈরী করুন উন্নত মানের দুধ ও মাংসের বাচ্চা। ভাল দুধের বা মাংসের গরু হলে আপনার থেকেই দুগ্ধ খামার মালিকগন কিনে নিয়ে যাবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯নভেম্বর২০২০