কৃত্রিম/ হাত পরাগায়নে ফলন বাড়ানোর উপায়

645

পরিবারভুক্ত যেমন- লাউ, কুমড়া, চালকুমড়া, পটল ইত্যাদি গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক হয়। একই বয়সের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল কাছাকাছি থাকলে এবং বাতাসের বেগ প্রবল হলে কিছু পরাগায়নের সম্ভাবনা থাকে তবে তা একেবারেই নগন্য। তাই পোকা-মাকড় বা মৌমাছি বেশি না থাকলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পরাগায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরাগায়ন সম্ভব হয় না। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন ঘটালে ফলন ভালো হয়। এ জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চেনা প্রয়োজন।

পুরুষ ফুল ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পরাগরেণু থাকে। আর স্ত্রী ফুলে পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় অথবা ছোটফল থাকে না। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। ছোট ও মোটা গর্ভদণ্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সাথে সাথে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই ফল ধরবে। এ ধারনাটা ভুল। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত ফল ধরবে না। পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না, ফল হয় স্ত্রী ফুল থেকে , তাই মনে রাখবেন পুরুষ ফুল ছিড়ে এনে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হবে। স্ত্রী ফুল ছেড়া যাবেনা। এছাড়া তূলি বা কটন বাড ব্যবহার করেও পরাগায়ন করা যায়।

আগের দিনের সন্ধা হওয়ার ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে পরের দিনের সকাল ৮ টা পর্যন্ত Cucurbitaceae পরিবারের ফুলের পরাগরেণু জীবিত থাকে। এই সময়ের ভিতরে আপনাকে পরাগায়ন করতে হবে। আবহাওয়া ও তাপের বিভিন্নতার কারণে ফুলের পরাগ রেনুর জীবন কালের সময়ে কম বেশি হতে পারে। মনে রাখা দরকার যে পরাগায়নের জন্য একই দিনে ফোটা পুরুষ ও স্ত্রী ফুল নির্বাচন করতে হবে। প্রতিদিন উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সদ্যফোটা পুরুষ ফুল রেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর সদ্যফোটা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে । একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়।

হাত দিয়ে পরাগায়ন সম্পন্ন করার ধাপ সমুহ :
১ম ধাপ- পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চিহ্নিত করা ।
২য় ধাপ- উপযুক্ত পুরুষ ফূল ( কিছুটা অফুটন্ত ) সংগ্রহ করে পাপড়ি ছিড়ে পরাগধানী অথবা তূলি দিয়ে পুরুষ ফুল হতে পরাগরেণু সংগ্রহ করা।

৩য় ধাপ – এবার সংগ্রহকৃত পরাগরেণু স্ত্রী ফূলের গর্ভমুণ্ডে আলতোভাবে ঘষে দিতে হবে, অথবা তূলি বা কটন বাড ব্যতীত সরাসরি পুরুষ ফুলের পরাগধানী সংগ্রহ করে স্ত্রী ফূলের গর্ভমুণ্ডে আলতোভাবে ঘষে দিলেও পরাগায়ন সম্পন্ন হলে ফল টিকে যাবে বা কোন ফল পচে বা ঝরে পড়বে না।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৯নভেম্বর২০২০