আমাদের মধ্যে একটা কথা চালু আছে যে, “শীতকালে মাছ বাড়ে না”!
তাই শীত কালে আমরাও মাছকে খাবার দেয়া বন্ধ রাখি!
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, শীত কাল শুরু হলেই কি মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেয় ফলতঃ মাছের দেহ বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যায়?
ব্যাপারটা কিন্তু “শীত কাল” নয়; ব্যাপারটা হচ্ছে “শীতের তীব্রতা”!
কেউ যদি মাছকে নিয়মিত খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস বজায় রাখেন তাহলে দেখা গেছে যে, হালকা শীতে মাছ রীতিমতই খাচ্ছে!
আমরা বই-পুস্তকে যেটা পেয়েছি তা’ হল ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপ মাত্রায় ‘কাতলা’
এবং ১১-১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছ খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং বাস্তবেও তাই।
কিন্তু এই মাত্রায় তাপতো রাতের কয়েক ঘন্টা থাকে এবং দিনের বেলায় তাপ প্রায় ২০-২২ ডিগ্রী পর্যন্ত আসে; তাহলে দিনের বেলায় কি মাছ আদৌ খায় না?
আর সেটাই বা কত দিনের জন্য?
আসলে এখন “প্রচন্ড শীত” নিয়ে যে কদিন তাপ মাত্রা বিরাজ করে সেই সময়টাই মাছের বিপাক ক্রিয়াও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায় এবং
মাছ সেই সময় খাওয়া থেকেও বিরত থাকে।
একেবারে চূড়ান্ত শীতেও সিলভার কার্প, বিগ হেড, কার্পিও ও র্মিরর কার্প কিন্তু সমানে বাড়ে।
অন্যান্য মাছ গুলি যতদিন পর্যন্ত খায়; ততদিন পর্যন্ত কম-বেশী বাড়ে।
তবে শীতে কিছু খাদ্যের ব্যয় হয় শক্তি তৈরিতে।
প্রচন্ড শীতে তেলাপিয়ার ছোট সাইজ গুলি অনেক সময় পুকুরের তলায় মরে থাকতে দেখা যায়!
পাঙ্গাসও চলাচল এবং খাওয়া বন্ধই করে দেয়!
কাতলার ১৮ ডিগ্রী তাপ মাত্রায় পর্যন্ত বৃদ্ধি আশা করা যায়!
তবে দিনের বেলায় কিন্তু ২২-২৩ ডিগ্রী থাকে;
এই সময়ে কয়েক ঘন্টা খাবার খাওয়ার একটা চান্স থাকে।
কিন্তু “প্রচন্ড শীত” এর সময়টাকে এখন ২৫-৩৫ দিন পর্যন্ত ধরা যায়( গত বছর পর্যন্ত সে রকমটাই দেখা গেছে)।
এই প্রচন্ড শীতকাল টুকু বাদ দিয়ে কম শীতের সময়ে পুকুরে ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ করলে কিংবা
পানির প্রবাহ চালিয়ে পানির ওলট-পালট করতে পারলে এটি সহ ভূ-গর্ভস্থ পানির তাপের উপস্থিতি পুকুরের তাপ মাত্রা বাড়তে সাহায্য করে।
আমি আমার খামারে পানি প্রবাহ চালিয়ে দেখেছি যে, কম শীত কাল সময়টাতে মাছ পুরামাত্রায় না খেলেও বেশ খায়।
এই তাপ মাত্রায় (প্রায় ২০-২২ ডিগ্রী সেলঃ) প্রায় সব ধরনের মাছের খাদ্য গ্রহন কম-বেশী চলমান থাকে।
তবে শীতকালে পানি কমে যাওয়ার কারনে-
-পানিতে মল-মূত্রের আনুপাতিক হার বেড়ে যায়;
-পানিতে অক্সিজেন ধারনের স্থানও কমে যায়।
শীতকালীন পরিচর্যা হিসাবে যা করা উচিৎ
-আংশিক আহরন করে মাছের প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়া যেতে পারে (মাছ যদি বেশী আছে বলে মনে হয়);
-পুকুরে পানির গভীরতা বাড়িয়ে ৪-৫ ফুট করতে হবে;
-পুকুরে সপ্তাহে দুই দিন শতকে ২০০ গ্রাম করে কাঁচা গোবর গুলিয়ে ছিটিয়ে দিলেও পানির তাপ মাত্রা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে;
-চুন দেয়া না থাকলে শতকে ২০০-২৫০ গ্রাম চুন দিতে হবে; ( প্রতি মাসে চুন-লবন প্রয়োগ চালিয়ে যেতে হবে);
-বাড়তি সাপোর্ট হিসাবে ২০০ গ্রাম করে লবন দিতে হবে;
-প্রয়োগ যোগ্য খাবারের একটা অংশ হিসাবে শুধু “অটো ব্রান” দিলে ব্রানের তেল মাছকে বাড়তি “তাপ শক্তি” সরবরাহ করবে!
মজুদ পরিমান যদি ঠিক রাখা যায় এবং এই পরিচর্যাগুলি করা যায় তা’হলে আশা করা যায় যে,
“শীতকালীন রোগ-ব্যাধি আপনার পুকুরের মাছের বিশেষ একটা হুমকি হয়ে আদৌ দাড়াতে পারবে না”!
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৩ডিসেম্বর২০২০