লক্ষণ ও করণীয়ঃ
গবাদিপ্রাণির খাদ্য বলতে আমরা কাঁচা ঘাস, খড় ও দানাদার শ্রেণীর খাদ্যকে বুঝে থাকি। প্রাণিসম্পদের উৎপাদনের (দুধ, মাংস, ডিম ও বাচ্চা ইত্যাদি) সাথে সুষম খাদ্যে ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খাদ্য প্রাণীকে সরবরাহ করার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে রেশন/খাবার তৈরি ও ব্যবস্থাপনা করা উচিত। প্রাণীর, বিশেষ করে গরুর খাদ্যাভ্যাস,হজম ও বিপাক-জনিত রোগ সমূহের জন্য মূলতঃ আমাদের অসচেতনতা ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ না করাই দায়ী। আমরা এই রোগ সমূহ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আজ এসিডোসিস কী, কারণ, লক্ষণ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করব।
এসিডোসিস কীঃ
হঠাৎ বেশি পরিমাণে ফার্মান্টেড বা সহজে হজমযোগ্য শর্করা জাতীয় দানাদার খাদ্য খাওয়ালে বা খেয়ে নিলে জাবরকাটা প্রাণীর রুমেনের এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে পিএইচ কমে গিয়ে এই রোগ হয়। রোগটি কি ধরনের দানা শস্য ও প্রাণির পূর্ব অভিজ্ঞতা, প্রাণীর শারীরিক ও পুষ্টির অবস্থা ও রুমিনের মাইক্রোফ্লোরা ধরনের উপর নির্ভর করে। এটাকে আবার গ্রেইন ওভারলোডও বলা হয়। এই রোগটি গরু, মহিষ,ছাগল ও ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর হয়।
এসিডোসিস দুই ধরনের হতে পারে। যথাঃ
১। একিউট এসিডোসিসঃ দ্রুত হয় ও বেশি ক্ষতিকর
২। সাব একিউট এসিডোসিসঃ লক্ষণ কম প্রকাশ পায় ও কম ক্ষতিকর
কারণঃ
১। হঠাৎ বেশি পরিমাণে ফার্মান্টেড বা সহজে হজমযোগ্য শর্করা জাতীয় দানাদার খাদ্য যেমন পাকা ধান,গম, চাল, ভুট্টা, বার্লি বা তার গুড়া, আলু, কাঁঠাল ইত্যাদি খেলে।
২। উচ্চ দানাশস্য বেশি খাওয়ালে বিশেষ করে শর্করা জাতীয়
৩। আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবহরাহ না করে শুধু দানাদার খাওয়ানো
৪। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ বদহজম → ব্লট→ এসিডোসিস এই ধারাবাহিকতা দেখা যায়
লক্ষণঃ
১। খাদ্য গ্রহন করতে অনিহা বা বন্ধ হয়ে যায়
২। রুমেনের এসিডিটি বেড়ে যায় অর্থাৎ পিএইচ কমে যায়
৩। তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা কম
৪। শুরুতে রুমেন বড় হয়ে যায়, পেটে বা পশ্চাৎপদে লাথি মারে ও অনেক ক্ষেত্রে শুয়ে পড়ে
৫। রুমেনের নড়াচড়া কম বা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়
৬। পায়খানা ও প্রস্রাব করা কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়
৭। মল নরম থেকে তরল, হলুদ বা ট্যান হয় এবং এর সুস্পষ্ট মিষ্টি-টক গন্ধ থাকে
৮। পানি শূন্যতা, ডায়রিয়া, এসিডেমিয়া ও মারাত্নক ক্ষেত্রে মৃত্যু হতে পারে
৯। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় ও এসিডেমিয়ার ক্ষেত্রে হার্টবিট বেড়ে যায়
১০। মারাত্মক ক্ষেত্রে সুচিকিৎসার অভাবে ২৪-৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রাণী মারাও যেতে পারে
রোগ নির্ণয়ঃ
১। খাদ্যের ইতিহাস।
২। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ।
আমাদের করণীয়ঃ
একটি খামারকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে চাইলে সবগুলি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই জাতীয় সমস্যায় বা রোগে প্রাণী আক্রান্ত হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহন করা উচিত।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০২জানুয়ারি২০২১