প্রথমেই যা করনীয়, তা হলো রোগের প্রকৃত কারণ আপনাকে নির্নয় করতে হবে। তার আগে জেনে নিন পোল্ট্রির সাধারণ রোগের পিছনে যে জীবাণুগুলোর মূখ্য ভুমিকা রয়েছে; ব্যাকটেরিয়ার, ভাইরাস, ছত্রাক, প্রটোজোয়া, পুষ্টির অভাব, বিভিন্ন প্যারাসাইট যারা বিষাক্ততার জন্য দায়ী ইত্যাদি পোল্ট্রির শিল্পের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে আপনাকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
কাজেই আপনাকে অবশ্যই নির্ভুলভাবে রোগের কারণ নির্ণয় করতে হবে। কেননা সব রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সমান নয়।একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করি, ভাইরাস ঘটিতো কোনো রোগ এন্টিবায়োটিক দিয়ে নির্মূল করা যায়না। এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া ঘটিতো রোগ দমন করতে কার্যকরী।
কিভাবে পোল্ট্রির এসকল রোগ বালাই দমন করবেন?
ভাইরাস ঘটিত রোগ : ভাইরাসের কারণে যেসব রোগব্যাধি হয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিউ ক্যসেল ডিজিজ (এনএসডি), বার্ড ফ্লু, গামবোরো, মুরগির বসন্ত। এদের মধ্যে আপনার এলাকাতে যে রোগগুলো সাধারণ, সেগুলো দমন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যথা সময়ে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে।
ব্যাকটেরিয়া ঘটিতো রোগ : ইনফেকশন করাইজা, মুরগির কলেরা, টাইফয়েড, মাইকোপ্লাজমোসিস ইত্যাদি রোগসমূহ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু রোগ ভ্যাক্সিন প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করা সম্ভব। কিছু রোগ প্রতিরোধ করতে অবশ্যই এন্টিবায়োটিক এর সাহায্য নিতে হবে।
কিছু সাধারণ ব্যাধি : পোল্ট্রি খামারী এবং পশু চিকিৎসক উভয় প্রায়শই যে রোগটির সম্মুখীন হয়, তাহলো ইনফেকশন করাইজা।
লক্ষণ : পোল্ট্রির মুখ এবং এক বা উভয় চোখ ফুলে যাওয়া, চোখ এবং নাসারন্ধ্র থেকে আঠালো পদার্থ ক্ষরণ হয়।অন্যান্য ক্লিনিক্যাল লক্ষন গুলো হলো ডায়রিয়া এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা।
বিস্তার : প্রধানত বিভিন্ন বয়সের পোল্ট্রি একে অপরের সংস্পর্শে আসলে খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
প্রতিরোধ :
যখন খামারে পোল্ট্রির নতুন ব্যাচ আনা হবে তখন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
যেসব বার্ড রোগাক্রান্ত হয়ে আবার সুস্থ হয়, তারা রোগের বাহক হিসেবে কাজ করতে পারে৷ তাই তাদেরকে অবশ্যই আলাদা কক্ষে পালন করতে হবে।
আলাদা বয়সের পোল্ট্রিকে কখনো একসাথে মিশতে দেয়া যাবেনা।
খামারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি সর্বদা নজর দিতে হবে।
প্রতিকার : ইরাইথ্রমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন এবং সালফা ড্রাগস পানিতে নির্দিষ্টমাত্রার দ্রবণ তৈরি করে প্রয়োগ করতে হবে।
সারাবিশ্বে ম্যারিক ব্যাধি পোল্ট্রির ভাইরাসঘটিতো রোগের মধ্যে অন্যতম। এটি একধরণের ক্যানসার যা পোল্ট্রির স্নায়বিক সিস্টেমকে ব্যহত করে। সাধারণত তিতির, কোয়েল এবং টার্কি এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ৩ সপ্তাহের বেশি বয়স্ক এবং ১২-১৫ সপ্তাহ বয়সের বার্ডের এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এই রোগে মৃত্যুহার ৬০% এর বেশি।
লক্ষন : খুঁড়িয়ে হাটা, ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
বিস্তার : ছাঁয়াযুক্ত স্থানে পোল্ট্রির পালক, খুশকি, পোল্ট্রি হাউসের আবর্জনার মধ্যে এরোগের ভাইরাস মাসের পর মাস টিকে থাকতেপারে।
প্রতিরোধ :
এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে ডিম ফুটানোর পিরিয়ডেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
নতুন ব্যাচ আনার আগেই পোল্ট্রিশেড জীবানুমুক্ত করতে হবে।
প্রতিকার : লক্ষন প্রকাশের সাথে সাথে আক্রান্ত বার্ড অবশ্যই ছাটাই করতে হবে।
কক্সিডোসিস পোল্ট্রি সেক্টরে আরেকটি কমন রোগ যা মূলত প্রটোজোয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। পোল্ট্রি বিপুল পরিমান জীবানুর সংস্পর্শে আসলে এই রোগ হয়।
বিস্তার : সংক্রামিত খাদ্য, পানি এবং বেডিং ম্যাটেরিয়াল এর মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। যান্ত্রিক বাহক, যেমন খামারে কর্মীদের পোশাক, জুতা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রটোজোয়া ছড়ায়।
লক্ষন : রক্ত আমাশয়, পানিশূন্যতা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী কক্সিডোসিস এর ফল। কক্সিডোসিস মারাত্মক পর্যায়ে ডায়রিয়া এবং পোল্ট্রির মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিরোধ : পোল্ট্রি ফিড প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এন্টিকক্কসিডাল ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিকার : লক্ষন প্রকাশ পেলে প্রাথমিকভাবে এম্প্রোলিয়াম, সালফাডিমিথোক্সিন এবং ট্রাইমিথোপ্রাইম ইত্যাদি ওষুধ পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ করতে ভিটামিন এ এবং কে প্রয়োগ করতে হবে।
পরিশেষে কোন লক্ষণ প্রকাশের পর পশু চিকিৎসককে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্যদিয়ে সহায়তা নাকরলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবনতি ঘটে। ফলশ্রুতিতে খামারীকে আর্থিকভাবে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়। আপনার সাবধানতা পারে আপনাকে একজন সফল পোল্ট্রি ব্যবসায়ী করে তুলতে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৬জানুয়ারি২০২১