কবুতরের খাবার নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ কিছু কথা, যা অনেকেই জানেন না

3861

কবুতরের খাবার নিয়ে গুরুত্তপুর্ন কিছু কথা

◆.কবুতরের ভালো মন্দ নির্ভর করে কবুতরের খাবারের উপর৷ অনেকেই মনে করেন, কবুতরের জন্য ভালো মানের খাবারের দরকার নাই।কবুতরের রোগ প্রতিরোধ, ডিম দেয়া, বাচ্চা ফোটানো নির্ভর করে খাবারের উপর ৷ শখ করে পালেন আর ব্যবসায়িকভাবে, কবুতরকে অবশ্যই ভালো মানের এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার দিতে হবে৷ শুধু গম আর ধানের উপর নির্ভর করলে চলবে না।

• কবুতর গম, ভুট্টা, সরিষা, অ্যাংটা, চাউল, কাউন, সবুজ মটর, বাজরা, খেশারী, চিনা, তৃষি, ডাবলি, সূর্যমূখীর বীচ, কুসুম ফুলের বীজ, বাদাম, ইত্যাদিসহ সব ধরনের শস্যদানা খায়৷ সব কবুতর উল্লেখিত সবগুলো খাবার নাও খেতে পারে৷ গম, ভুট্টা, সরিষা, অ্যাংটা, চাউল, সবুজ মটর, চিনা, তৃষি, সূর্যমূখীর বীচ, কুসুম ফুলের বীজ সব কবুতরই খায় ৷ শর্করা সমৃদ্ধ খাবার (গম, ভূট্টা, সবুজ মটর, চাউল) বেশি (৭৫%) এবং তেলবীজ (সরিষা, সূর্যমুখী ও কুসুম ফুলের বীজ) কম (২৫%) দিতে হবে ৷

• রেজাতে কোন খাদ্যগুন নাই ৷ এ ছাড়া এতে রোগের জীবানু বহন করে ৷ তাই কবুতরের খাদ্য তালিকায় রেজা রাখবেন না ৷.• কবুতরের খাবার কিনে এনে ভালভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে৷ বাজারে যেভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাতে এগুলোতে জীবাণু জন্মে ৷ পরিষ্কার না করলে কবুতর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে ৷ এছাড়া শস্যদানা সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা কবুতরের জন্য ক্ষতিকর ৷.• কেউ যদি সরাসরি ভাঙ্গা ভুট্টা কবুতরকে খাওয়ান , তাহলে বলব সেই কবুতর পালক তৈলাক্ত বাসে উঠার চেষ্টা করছেন, তিনি এক
ফুট উঠলে ২ ফুট নেমে যাচ্ছেন। ভাঙ্গা ভুট্টাতে অনেক রোগ জীবাণু থাকে, আপনি যদি এটাকে সেদ্ধ করে না খাওয়ান তাহলে আপনার কবুতর সাল্মনেলিসিস, রক্ত আমাশয়ের মত মারাত্মক রোগে ভুগবে । সেদ্ধ না করলেও অবশ্যই রোদে শুকিয়ে খাওয়াতে হবে ৷.• একটা সাধারণ
সাইজের (৪৫০ গ্রাম ওজনের) কবুতর প্রতিবার গড়ে ৩০ গ্রাম খাবার খায় ৷ সাইজ বড় হলে বেশি খায়।

• দিনে কমপক্ষে দুইবার খাবার দিতে হবে ৷ খাবারপাত্র ভরে না দিয়ে যতটুকু খাবে ততটুকুই দেয়া উচিত৷ বেশি দিলে খাবার নষ্ট করবে ৷ যারা কবুতর উড়াতে চান,তারা অবশ্যই বেশি খাবার দেবেন না৷

•কবুতর গড়ে ৪৫ মিলি পানি পান করে ৷ গরমের সময় এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয় ৷ পানিও একসাথে বেশি
দেবেন না ৷ পানির সাথে ঔষুধ মেশাতে হয়, যার সাথে খরচের সম্পর্ক আছে ৷

• কবুতরের খাবার ও পানির পাত্র পরিষ্কার রাখতে হবে ৷ সকালে পানি দেবার পর দুপুরে ফেলে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে৷ পানির পাত্র পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, পাত্রের ভিতর যেন মিউক্যাস না থাকে৷ এটা সালমোনেলার কারন ৷

• অনেকে কবুতর মোটা করার জন্য ব্রয়লার গ্রোয়ার খাওয়ান ৷ ব্রয়লার গ্রোয়ার হাসমুরগির জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি ৷ জেনে রাখুন হাস মুরগি যা হজম করতে পারে, কবুতর তা করতে পারে না ৷ ব্রয়লার গ্রোয়ার সাধারণত অনেক দিন পরে থাকে ৷ তাই এতে ফাঙ্গাস হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না ৷শস্যদানা খাওয়ালে কবুতরের পায়খানা নাপাক হয় না কিন্তু ব্রয়লার গ্রোয়ার খাওয়ালে পায়খানা নাপাক হয়ে যায় ৷ আমার মত যারা কবুতরের পায়খানা পাক রাখতে চান তারা এই তথ্যটি বিবেচনায় রাখবেন ৷ ছেড়ে পালা কবুতর কখনও কখনও আমাদের ঘাড়ে এসে বসে, আবার শুকাতে দেয়া কাপড়ের উপরেও বসে ৷ এতে পোশাক নাপাক হয়ে যায়৷ মুসলিমদের বিশেষ করে যারা নামায পড়ি। তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারটি মাথায় রাখা উচিত ৷

• কবুতর পোকা মাকড় খেতে চাইলে আমরা বাধা দেই না ৷ পাখিরা সাধারণত পোকা মাকড় খায় ৷ অনেক পাখির তো মূল খাবারই পোকা মাকড় ৷ কবুতরের পিত্ত থলি না থাকায় কবুতর সব কিছু হজম করতে পারে না, তাদের মধ্যে পোকা মাকড়অন্তর্ভুক্ত ৷ তাই পোকা মাকড় অন্যান্য পাখিই খাক, কবুতর না ৷

• অনেকেই মনে করেন, কবুতরকে গ্রিট দিতে হয় না ৷ এটা ভুল ৷ অনেকে গ্রিট না দিয়ে ডিমের খোসা, ইটের গুড়া, ঝিনুক গুড়া দিয়ে থাকেন ৷ গ্রিটে এ তিনটি উপাদান থাকে, তবে শুধু এ তিনটি উপাদানই যথেষ্ঠ না ৷সপ্তাহে অন্তত দুই দিন গ্রিট দিতে হবে৷ অনেকে আবার মনে করেন, গ্রিট কবুতরের ডিমের খোসা শক্ত করে, ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে৷ গ্রিট ক্যালসিয়ামের অভাব কিছুটা পূরণ করে বটে৷ গ্রিট মূলত খাবার হজমে সাহায্য করে, খনিজ লবনের অভাব পূরণ করে ৷ গ্রিট কিনতে অথবা নিজে তৈরি করতে পারেন ৷ গ্রিট তৈরির রেসিপি
পরবর্তীতে জানানো হবে ইনশা আল্লাহ ৷

• মাঝে মাঝে কালজিরা, মেথি, মৌরি, জাউন (৪০% + ৩০% + ১৫% + ১৫%) মিশিয়ে সরবরাহ করতে পারেন ৷ সব জাতের কবুতর এই মিশ্রণের সবগুলো খায় না ৷ তাই গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন অথবা হাতে ধরে ৷.• মধু, রসুন, লেবুর রস, কাঁচা হলুদ, অ্যালোভেরা, কাঁচা শাক-সবজি, এগুলো কবুতরকে সজিব রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম পাতা, মটর শুটি, অঙ্কুরিত ছোলা বুট কবুতরের জন্য উপকারী ৷

কবুতরকে সপ্তাহে ১ দিন এক বেলা উপবাসে রাখা উচিত। এতে কবুতরের কর্পে সঞ্চিত খাদ্য হজম হয়৷ ফলে বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচে থাকে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮ফেব্রুয়ারি২০২১