যারা নতুন খামার করতে আগ্রহী তারা শুরু থেকে শেষ পযন্ত’ পোস্ট টি পড়ুন। মানলে খামার করে লোকসান নয় লাভ হবে। প্রবাসীরা ও পড়বেন।
শুরুতে ৩টি বিষয় থাকতে হবে।
ধৈয্য’
ডিসিপ্লিন
নিজের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
১।আমরা খামারীরা গরীব ঘরের সন্তান হয়ে,বড় ধরনের ঝুঁকি আসলে আমরা সইতে খুবই কষ্ট হয়।
তাই খামারের শুরুতে ছোট্ট আকারে শুরু করবেন।
১/২টি বকনা ও ভালো জাতের ২/৩ টি গাভী দিয়ে শুরু করুন।
২।শুরুতে বড় আকারে ডেইরী নিয়ে শুরু করলে দুধের বাজার,দুধ সেল দিতে পারবেন কি না তা ভেবে নিবেন।নয়তো দুধের দোকানে/মিষ্টির দোকানে ৫০ হাজার ৭০ হাজার বাকী থাকতে হবে, পরে খামার নিয়ে হিমসিম খেতে হবে।
৩।গরু কিনার সময় জাত চিনতে হবে,নিজে প্রথমে জাতের গরু চিনতে অসুবিধা হবে তাই অভিক্ত লোক সাথে নিয়ে গরু কিনতে হবে।
অনলাইন থেকে গরু কিনলে বুঝে শুনে কিনবেন,অসাধু দালালের হাতে পড়লে যা হবে অনলাইনে ২০/২৫ লিটার বলে দিবে পাবেন ১০/১২ লিটার।
সুতরাং সাবধান!
৪।গরু কিনার সময় অবশ্যই গরুটি সুস্থ আছে কি না খেয়াল করতে হবে,গাভী হলে দুধ দহনে লাথি মারে কি না,৪টি বাট দিয়ে দুধ ঠিক মতো আসে কি না,বয়স কী ইত্যাদি জেনে নিতে হবে।
৫।শুরুতেই ১০/১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু করবেন না।
কারন শুরুতে রিক্স না নেওয়া উওম।শুরুতে ২০ লিটারে গাভী নিবেন না, ১০/১৫ লিটার সবোচ্চ।কারণ এতো দামী গরু দিয়ে শুরু করলে কোন প্রকার সমস্যা হলে খামার করার মন মানসিকতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ও আরো অনেক আনুষাঙ্গিক বিষয় আছে তা শুরুতে বুঝতে কঠিন হবে।
৬।টাকা থাকলেই সব কিন্তু সম্ভব নয়,টাকা গরমে ২ লাখ ৩লাখ টাকা করে গরু কিনবেন না শুরুতে।
প্রবাসে থাকেন, ১০ টি গরু কিনে রাখাল রেখে দিয়ে খামার করবেন এমন সিদ্ধান্ত নিবেন না।তাহলে ভোগান্তির শেষ থাকবে না,যা হারে হারে টের পাবেন।কারণ ভালো রাখাল পাওয়া কঠিন।
৭।লাখ লাখ টাকার গরু খামারে তবে ১০০০/২০০০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ঔষুধ খামারে রাখতে কষ্ট লাগে এমন চিন্তা করা যাবে না,প্রয়োজনীয় ঔষুধ কিছু খামারে রাখুন। গভীর রাতে দোকান তো বন্ধ থাকবে।
তাই খামারে রাখুন,
থামোমিটার
গ্যাসের ঔষুধ
জ্বরের
বদ হজমের
পাতলা পায়খানার
ঠান্ডার
আমাশার
ভিটামিন বি, এডি৩ই ইনজেকশন
৮।ট্রেনিং করতে হবে ৩ মাসের, সাপ্তাহিক বা মাসিক প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের খামারী মিটিং ও ট্রেনিং এ উপস্থিত থাকতে হবে।
৯।গরুর যত্ন করতে হবে নিয়মিত।
গরুর গোসল,ঠিকসময়ে খাদ্য দেওয়া,নিয়মিত খামার পরিস্কার করা, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে রাত ১০ টায় খামারের সব গুলো গরুর খেয়াল নিবেন, গরু গুলো জাবর কাটছে কি না, প্রসাব পায়খানা ঠিক আছে কি না তা পরিদর্শন করতে হবে।এই ডিসিপ্লিন গুলো মেনে চলতে হবে।
১০।ধৈয’ থাকতে হবে।খামারে লাভ আর লাভ তা কিন্তু নয়,কখনো কোন সমস্যা হতে পারে, আগুন লেগে পুড়ে যেতে পারে,গরু মারা যেতে পারে,গাভী বার বার বীজ/সিমেন দিলে না ও রাখতে পারে তাই বলে গাভী রাগে বিক্রি করা যাবে না।সমস্যা কেথায় তা খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে, লেগে থাকতে হবে।
১১।আপনার খামারে ২ টি ১০/১২ লিটার দুধের গাভী আছে ১/২ টি ভালো জাতের বকনা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।অন্যর বড় খামার ও বড় ওলানের গাভী দেখে পাগল হবেন না।কারন নিজের যা আছে তা নিয়ে শুকরিয়া আদায় করা জরুরী।
হয়তো সময়ের ব্যবধানে আপনি তার চেয়ে বড় খামারী হতে পারেন,তাই সততা নিয়ে পরিশ্রম করুন।
১২।অবহেলা দূর করে সাহস রাখুন,গরু অসুস্থ হলে মন খারাপ করবেন না,যখন কোন গরুর সমস্যা হবে তখন নিজের আয়ত্তে না থাকলে দ্রুত ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা করাবেন।তবে মনে রাখতে হবে রোগ ছোট্ট হউক বড় হউক অবহেলা করা যাবে না।কারণ একটু অবহেলার কারণে লাখ টাকার সমস্যা তো হতে পারে।
১২।গরু পালতে হলে গরু হতে হবে।
কারণ ৫০০ টাকার প্যান্ট,৪০০ টাকার শাট খুলে লঙ্গি আর কোমড়ে গামচা বেঁধে কাজ করতে হবে।
১৩।গাভী_না_বকনা না মোটাতাজা করন দিয়ে খামার শুরু করবেন।
শুধুই বকনা__দিয়ে শুরু করলে কমপক্ষে হিটে আসার আগ পযন্ত ও বাচ্চা দেওয়ার আগ পযন্ত আপনি কোন লাভের মুখ দেখতে পারবেন না।বরং হিটে আসলে কয়েকবার বীজ দিলে বীজ মিস করবে,খাদ্য খরচ,লেবার খরচ, কারেন্ট বিল হাত থেকে দিয়েই যেতে হবে এতে খামারের প্রতি আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়।
গাভী দিয়ে শুরু করলে দুধ বিক্রির টাকা দিয়েই গাভী ও বাচ্চার খাদ্য খরচ সহ অনন্যা খরচ ও চলে যাবে।ও গাভী হিটে আসলে বীজ দিয়ে আবার পুণরায় বাচ্চা দেওয়ার প্রস্তুতি নিবে।তবে সঠিক ভাবেই লালন পালন করতে হবে।
মোটাতাজা করণ প্রকল্প করলে ৩ মাস বা ৬ মাস মেয়াদী বিক্রির আগ পযন্ত খাদ্য ও ঔষুধ থেকে শুরু করে সমস্ত খরচ হাত থেকে বহন করতে হবে পরে লাভ লসের হিসাব।
সুতরাং আমার মতে শুরুতে ১/২ টি বকনা ও ২/৩ টি গাভী দিয়ে শুরু করাই ভালো।
১৪।নতুন অবস্থায় গাভীন গরু কেউ কিনবেন না।কারণ অনেক সময় গাভীর ১/২টি বাট দিয়ে দুধ আসে না, ও দুধ দহনে নড়াচড়া করে, লাথি মারে তখন সেই গাভী বিক্রি করতে পারে না।পরে ৫/৬/৭/৮/৯ মাসের গাভীন হলে বিক্রি করে।সুতরাং সাবধান!
তবে পরিচিত জনের গাভী হলে ভিন্ন কথা।
১৫।ইউটিওব,ফেসবুকের সফলতার গল্প শুনে কেউ খামার করবেন না, কারণ ঐ গল্প গুলোর পিছনে লুকিয়ে থাকে অনেক তথ্য যা প্রকাশ করে না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন,কল্পনা পরিহার করে বাস্তবতা মেনে খামার করুন দেখবেন সফলতা আপনার পিছু নিবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯ফেব্রুয়ারি২০২১