নিজস্ব প্রতিবেদক
বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌর এলাকার সাথী সিনেমা হলে এসএম টোব্যাকো নামে একটি রাজস্ব ফাঁকিকৃত অবৈধ সিগারেট কারখানায় অভিযান চালিয়েছে র্যাব-১২’র একটি দল।
এ অভিযানে সুরাইয়া সরকার নামে এক নারীর মালিকানাধীন এস এম টোব্যাকো নামক একটি সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণের রাজস্ব ফাঁকিকৃত অবৈধ সিগারেট জব্দ করেছে র্যাব।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২ টায় র্যাব-১২’র বগুড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্বজল কুমার ঘোষের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২ লাখ ৪০ হাজার শলাকা রাজস্ব ফাঁকিকৃত অবৈধ সিগারেট ও সাত হাজার পিস নকল ব্যান্ডরোল জব্দ করে র্যাব। এসময় কারখানার ৬ জন কর্মীকে আটক করা হয়।
র্যাব-১২ কর্মকর্তা স্বজল কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকার শিশুপার্ক সংলঘœ পুরাতন সাথী সিনেমা হলের ভিতরে অবৈধভাবে সিগারেট তৈরি করে আসছিলো এস এম টোব্যাকো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ এই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।”
জানা যায় এসএম টোব্যাকো বগুড়া ও আশেপাশের জেলার বাজারে সেনরগোল্ড স্পেশাল, ডুবাই, এনজয়, এমজি গোল্ড নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করে আসছে। এসকল সিগারেটের মূল্য মাত্র ২০-২৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি প্যাকেট সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারন করেছে ৩৯ টাকা।
অভিযানে আটককৃতরা জানান এখানে প্রতিদিন যে পরিমান সিগারেট প্রস্তুত করা হয় শুধু সে পরিমান কাঁচামাল আসে এবং সিগারেট তৈরির পর কোম্পানির লোকজন নিয়ে যায়। তারপর সবকিছু পরিষ্কার করে রাখা হয়। তারা শুধু এখানে কাজ করেন এর বাইরে কিছুই জানেন না। নিজেদের নাম প্রকাশ না করতে তারা অনুরোধ জানান।
এর আগে গতবছর বগুড়ার ওয়ান সিগারেট কোম্পানিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত অবৈধ সিগারেট, নকল ব্যান্ডরোল ও একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে র্যাব।
সিনেমা হলে সিগারেট কারখানার অভিযান শেষে বগুড়া রাজস্ব বোর্ডের সহকারী কমিশনার সৈয়দ মোকাদ্দেস হোসেন জানান, “তারা (এসএম টোব্যাকো) লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছিলো। তারা রাজস্ব ফাঁকি যেসব করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। কারখানা থেকে অনেক অবৈধ মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে মামলা করা হবে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সুত্রে জানা যায় একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সিগারেট ফ্যাক্টরিতে সার্বক্ষনিক ডিউটিতে থাকেন। যিনি সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করেন। কেবলমাত্র তিনি অনুমোদন দিলেই সিগারেট ফ্যাক্টরির বাইরে যেতে পারে।
শুধু অবৈধ কারখান বা গোডাউন নয় বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় কখনো রাইস মিলে, কখনো তেলের মিলের মধ্যে অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদিত হয়ে আসছে। এসব রাজস্ব ফাঁকিকৃত অবৈধ সিগারেট ভ্যাট চালান ছাড়াই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায়, যা আইনত অবৈধ।
র্যাব-১২’র বগুড়া ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্বজল কুমার ঘোষ জানান, ‘অবৈধ সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতের অপরাধে এসএম টোব্যাকোর বিরুদ্ধে নিয়মিত মাললার বাইরে বিশেষ ক্ষমতা আইনেও মামলা করা হবে।“
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেখা যায় এসএম টোব্যাকোর স্বত্বাধিকারীর নাম সুরাইয়া সরকার। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সিগারেট উৎপাদনের বিষয়ে এসএম টোব্যাকোর প্যাডে ব্যবহার করা নাম্বারে ফোন করে গণমাধ্যম কর্মী পরিচয় দিলে অপর প্রান্ত থেকে রং নাম্বার বলে ফোন কেটে দেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১২ এপ্রিল ২০২১